কলকাতা 

Aliah University Bill 2022: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,সংবিধান মতে,এটা স্বয়ংশাসিত প্রতিষ্ঠান, মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমির-ই-জামিয়া হবেন? তাহলে কি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা হরণ করছেন? আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন তুললেন বিধায়ক পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশেষ প্রতিনিধি : আজ বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধান সভায় সংখ্যালঘু বিষয়ক এবং মাদ্রাসা শিক্ষা মন্ত্রী” কর্তৃক উপস্থাপিত “আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী বিল ২০২২” এর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও বিধানসভার সদস্য পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী অসাধারণ বক্তব্য রাখেন। তিনি এদিন সত্য এবং সঠিক প্রশ্নটিই বিধানসভার অভ্যন্তরে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সংবিধান মত এটি সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে এখানে মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে আচার্য হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তিনি আরো বলেন, মুখ্যমন্ত্রী অবশ্যই মনিটর করতে পারেন তার মানে এটা নয় তিনি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমিরে জামিয়া হবেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আমিরে জামিয়া হলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়তে পারে এবং পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে। নওশাদ সিদ্দিকী এদিন বিধানসভায় করজোড়ে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রীর মনিটর করুন কিন্তু দয়া করে আচার্য হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি ঐতিহ্য শালী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাবেন না!

এদিন বিধানসভায় নওশাদ সিদ্দিকী যে ভাষণ দিয়েছেন তা আমরা হুবহু পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরলাম।

Advertisement

” আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমি আগেও এই সভাকক্ষে বলেছি। আমি নিজে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। স্বাভাবিকভাবেই একটা আবেগ জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় 242 বছরের পুরাতন প্রতিষ্ঠান।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস দেখলে জানা যাবে 1780 সালে কলকাতার কয়েকজন মুসলমান ব্যক্তির অনুরোধই তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেন।

আলিয়ার দীর্ঘ ইতিহাসের উপর সামান্য আলোকপাত করলেই এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের আভাস মিলবে। আলিয়া হল দেশের প্রথম সরকার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল মুসলমান সমাজের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং আমলা ও সরকারি কেরানী তৈরি করা। সুতরাং এটা পরিস্কার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাথে মুসলিম সমাজের দীর্ঘদিনের আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই আমি মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আশা করবো আপনি আপনার সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোর খাটিয়ে মুসলমান সমাজের আবেগ জড়িয়ে থাকা এই প্রতিষ্ঠানের উপরে কোন আঘাত করবেন না।

মুসলিম সমাজের স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠান 1947 সালের দেশ ভাগের পর চরম সংকটের সম্মুখীন হয়। স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষা মন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এর উদ্যোগে এবং ফুরফুরা শরীফের বড় হুজুরের মাওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিকীর (রহঃ) সহযোগিতার আলিয়ার পরিকাঠামো পুনর্গঠিত হয়। 200 বছরের অধিক পুরাতন এই ঐতিহ্যশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে 2007 সালে “আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন” অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছে। আজ পুনরায় “আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী বিল” এই সদনে নিয়ে আসা হয়েছে। তৎকালীন এই প্রতিষ্ঠানের দুরাবস্থায় যারা হাল ধরেছিলেন সেই ফুরফুরা শরীফ কে উপেক্ষা করে এই বিল নিয়ে এসে কতটা সৌজন্যতার পরিচয় সরকার দিচ্ছে তার উত্তর মাননীয়

মন্ত্রী মহাশয় দেবেন। মাননীয় মন্ত্রী মহাশয় হয়তো উত্তর দিতে পারেন এটি আইনের মধ্যে পড়ে না, আপনার জ্ঞাতার্থে আমি বলি আপনি এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে তার পরিচালনার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে চাইছেন তখন আপনাকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরাতন অভিভাবকদের অভিমত নেওয়া উচিত ছিল। কারণ, এই প্রতিষ্ঠান স্বাধীন আইন প্রণয়ন হওয়ার পূর্বেকার প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, সামগ্রিকভাবে এই প্রতিষ্ঠানের বড়ো কোন উন্নতি আমরা আজও দেখতে পাইনি। আমরা দেখছি, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নানান উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এখানে সবকিছুই থমকে আছে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় হলো। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেন্টর গ্রুপ তৈরি হলো। আমরা চাই ওখানে আরো উন্নতি হোক। কিন্তু আলিয়ার কি হলো? এটাও তো ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠান। মেন্টর গ্রুপ তো দূরের কথা, একজন ভাইস চ্যান্সেলর পর্যন্ত কয়েকমাস ধরে নিয়োগ হয়নি। Ad-hoc VC কাজ চালাচ্ছেন। শেষ যিনি VC ছিলেন, তার সাথে কি হলো, সেটা তো আমরা দেখেছি।

এখনও অবধি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত funding নেই। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় NAAC স্বীকৃতি পেয়েছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় NAAC স্বীকৃতি পেয়েছে কিনা তা আজও অজানা।

এই রাজ্যে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক অবস্থা খুবই হতাশাজনক। দূর্নীতি, ভুয়ো নিয়োগ, মন্ত্রী থেকে আমলা অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তদন্ত চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে একটা checks and balance থাকতো যখন রাজ্যপাল আচার্য থাকতেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর nominee থাকতেন। রাজ্যপাল রাজনৈতিক প্রভাবিত কিনা, সেটা অন্য প্রসঙ্গ। যদি কোন রাজ্যপালের কাছ থেকে রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ পায় তা গণতন্ত্রের জন্য অস্বাস্থ্যকর। তদুপরি, মুখ্যমন্ত্রীর মত একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আচার্যের পদে আসিন হলে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস গুলিতে একচ্ছত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের প্রবল আশঙ্কা সৃষ্টি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন, গবেষণা, শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তির মত সমস্ত কিছুর গুণগতমান বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয়।

মুখ্যমন্ত্রী আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমির-ই-জামিয়া হবেন। কিন্তু হিসেব মতো আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তো minority status পাওয়ার কথা। হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রী monitor করতে পারেন। কিন্তু minority institution নিজস্ব রীতি সংস্কৃতি আছে। সংবিধান প্রদত্ত আইনের বলে এটা স্বয়ংশাসিত প্রতিষ্ঠান। মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমির-ই-জামিয়া হবেন? তাহলে কি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা হরণ করছেন? সেক্ষেত্রে মানুষের কাছে কি বার্তা যাচ্ছে?

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিভাগ পুরোদমে খোলেনি। Political Science, Economics, Sociology, Science & Technology এর নানান শাখায় full Fledged বিভাগ খোলেনি। এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে Faculty of Medical Science স্থাপিত হলো না, অথচ আলিয়া মাদ্রাসাতে অনেক আগেই চিকিৎসা শাস্ত্র পড়ানো হতো। আলিয়ার 242 বছরের ঐতিহ্যবাহী campus এর দেখভাল হচ্ছে না। নতুন Campus এর হালও খারাপ। দরজা-জানালা ভাঙা, প্লাস্টার খসে পড়ছে।

হেরিটেজ ক্যাম্পাসের সামনের ফুটপাত দখল, মূল প্রবেশদ্বারের সামনে গরু বাঁধা থাকে। পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে আম্ফান ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ এখনো ক্যাম্পাস চত্বরে পরে আছে ।

নিউটাউন ক্যাম্পাসের কাজ 2011 সালে শুরু হয়েছিল 2014 সালে দ্বারঘটন হয় কিন্তু এই 8 বছরের মধ্যে ভবনের কাঁচ, প্লাস্টার ভেঙে পড়ছে যেকোনো সময়ে বড়ো কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি ক্ষমতা কুক্ষিগত না করে, বরং আচার্যের পদ থেকে সরে গিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা যেভাবে ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে ,পঙ্গু হচ্ছে, সেটাকে রোধ করুন। শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারী সহ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে নজর দিন।

মাননীয় স্পিকার স্যার, আরো একটি কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো স্বয়ংশাসন। সেজন্য সংসদ বা বিধানসভায় আইন তৈরি হয়। এটা করা হয় যাতে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক বিশেষত সরকারের প্রভাবমুক্ত থাকে। কিন্তু, এখানে দেখা যাচ্ছে এই সবকিছুকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে রাজ্যসরকার এই বিল নিয়ে এসেছে। গণতান্ত্রিক, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর যে checks and balance – সংযত থাকা।

সুতরাং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারকি করুন। আমির-ই-জামিয়া হয়ে নয়। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়েরই মঙ্গল হবে। ”

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ