কলকাতা 

চলে গেলেন বাংলার জনরবের কাছের মানুষ মুহা: শহিদুল ইসলাম

শেয়ার করুন

সেখ আব্দুল মান্নান : আজ সকালে হঠাৎ ফেসবুক পেজে বিশিষ্ট কলামিস্ট সেখ ইবাদুল ইসলামের ‘মাদ্রাসা ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং মাদ্রাসা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা শহিদুল ইসলাম সাহেব বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ইন্তেকাল করছেন’ পোস্টটি পড়েই চমকে উঠি। শহিদুল ইসলাম সাহেব নেই। আমি চাকরি সূত্রে ২০০৮ সালে কলকাতায় বদলি হয়ে আসার পর এই শহরে যে ক’জন গুণিজনের সান্নিধ্যে এসেছিলাম তাঁদের মধ্যে অন্যতম শহিদুল ইসলাম সাহেব। ২০১০ সালে ‘বাংলার জনরব’ পত্রিকার সম্মানীয় সম্পাদক তথা বিশিষ্ট কলামিস্ট সেখ ইবাদুল ইসলামই শহিদুল ইসলাম সাহেবের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

এরপর প্রায়শঃই তাঁর বালিগঞ্জের বাসায় আমার যাতায়াত ছিল। কখনো ছাপা অক্ষরে ‘বাংলার জনরব’ পত্রিকার কাজে, কখনও বা নিজের কোনো প্রয়োজনে। যেহেতু মুখ্য সম্পাদক ইবাদুল ইসলাম আমায় বাংলার জনরবের সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব সঁপে ছিলেন তাই লেখালিখির ব্যাপারেও তাঁর কাছে যাতায়াত ছিল। শহিদুল সাহেব নিজেও লেখালেখি করতেন ও পত্রিকার অভিভাবক স্বরূপ কাছের মানুষ ছিলেন। মাঝে মধ্যে আমার নিজের কোনো কোনো লেখা নিয়ে তাঁর কাছে যেতাম, তাঁকে পড়ে শোনাতাম, শুনে তিনি তাঁর গঠনমূলক মতামত দিয়ে আমায় উৎসাহিত করতেন।

Advertisement

তাঁর সংস্পর্শে ২০১০-২০২২ (মাঝে ২বছর করোনাকাল বাদে) সময় কালের অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে আমার । তাঁর সাথে নিবিড় আলাপ আলোচনায় তিনি অকপটে তাঁর ছাত্রজীবনের আন্দোলনের নানা কথা শুনিয়েছেন। ইবাদুল সাহেবের উপরোক্ত পোস্ট মোতাবেক মাদ্রাসা ছাত্র ইউনিয়ন ও মাদ্রাসা আন্দোলনের নানাদিক নিয়েও আলোচনা করতেন। বিশেষ করে পরিণত বয়েসে এসে মাদ্রাসা সম্পর্কিত বিরূপ কোনো ঘটনা শুনলে বা সংবাদ মাধ্যম পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করতেন। তিনি কলকাতা শহরে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন এবং এক সময়ে তিনি সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের খুব ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বলিষ্ঠ আলোচনা থেকে পরিস্কার হয়েছিল যে তিনি কোনোদিন মাননীয় রাজনীতিবিদ সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের কাছে থেকে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করেননি।

তিনি অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, পরোপকারী, সমাজ সচেতন ব্যক্তি ছিলেন। পরোপকারী কথাটি এই জন্যেই বলছি কারণ আমি নিজে সেই ধরণের একটি ঘটনার সাক্ষী। আমার এক পড়াশোনা জানা বেকার নিকট আত্মীয় (সম্পর্কে ভাগ্না) কলকাতা শহরে এসে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছিল না। সারা কলকাতায় হন্যে হয়ে ঘুরছে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য। সে সময় নিরাশ্রয়ের বিপদের উদ্ধারকারী হিসেবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শহিদুল ইসলাম সাহেব। তবে তার আগে তাঁর কাছে আমার ভাগ্নাকে তাঁর বালিগঞ্জের বাড়ির একটা ঘরে থাকতে দেয়ার প্রস্তাব রেখেছিলেন সহানুভূতিশীল ইবাদুল ইসলাম সাহেব। কেনকি ইবাদুল জানতেন শহিদুল সাহেবের তেমন ঘর আছে বলে। ইবাদুল সাহেবের সুপারিশে আমার ভাগ্নাকে শহিদুল সাহেব তাঁর বাড়িতে ৫ বছর (২০১১-২০১৫) বিনা পয়সায় থাকতে দিয়েছিলেন।‌ আজ সেই ভাগ্না কলকাতায় আত্মনির্ভরশীল।

আমার বিবেক বুদ্ধিতে যেটুকু মনে হয়েছে তাতে শহিদুল ইসলাম সাহেব ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণা মানুষ। তিনি ইসলাম ধর্ম বিষয়ে গভীর অধ্যায়ন করতেন। তবে তাঁর ধর্মীয় আচার আচরণে কখনও কট্টরতা প্রকাশ পায়নি। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ধর্মচর্চা ও ধর্মাচরণ করতেন। পরিনামে ‘কেতাবুস সালাত্’ নামে তিনি একটি ধর্মীয় গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। ২০১৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থটির একটি কপি তিনি আমায় দিয়েছিলেন পড়ার জন্য। গ্রন্থটির ভূমিকায় তিনি লিখেছেন ‘কেতাবুস সালাত্ বইটি বর্তমান সময়ের বিশ্বাসী মুসলমানদের জন্য বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করছি। সালাত্ শব্দটি কোরানিক শব্দ ও আল্লাহর হুকুম। কোরআন মজীদের মধ্যে ৮২ টি জায়গায় সালাত্ সংক্রান্ত ব্যাপারে আল্লাহ পাক নির্দিষ্ট ও পরিস্কারভাবে ঘোষণা করেছেন। সালাত্ আল্লাহর হুকুম ও কোরানিক দাওয়াত।’

জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার দান। পৃথিবীতে এটাই শাশ্বত মানুষ জন্মালে‌ একদিন তাঁর মৃত্যু অনিবার্য। তথাপি এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকেন মানুষের মাঝে তাঁর আচার আচরণ আর কার্যাবলীর ভেতর দিয়ে। তাঁদের জন্য সমাজ হ-হুতাশ করে। তেমনই মানুষ ছিলেন শহিদুল ইসলাম সাহেব। তিনি অগনিত মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন তাঁর কৃত কর্মের মধ্যে দিয়েই। এ আমার প্রত্যয়। পরিচয়ের সূত্র ধরেই তিনি আমায় আপন করে নিয়েছিলেন। তাই এমন আপনজনের জন্যে আমার আমিও ব্যথিত। করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই তাঁর আত্মজনেরা যেন তাঁকে হারানোর ব্যথা সয়ে নিতে পারেন। আর একই সঙ্গে কামনা করব আল্লাহ যেন শহিদুল ইসলাম সাহেবের রুহের মাগফিরাত দান করেন।

 

 

 

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ