কলকাতা 

বালিগঞ্জে জিতলেন বাবুল সুপ্রিয়! তবুও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিন্তায় থাকতে হবে! কেন জানেন? জানতে হলে ক্লিক করুন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরী : প্রত্যাশামতো বাবুল সুপ্রিয় প্রায় কুড়ি হাজার ভোটে জয়ী  হয়েছেন। জিতেছেন ঠিকই কিন্তু কোথায় যেন একটা হার প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। এক বছর আগেই এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন জননেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। জিতেছেন বাবুল মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেননি। সুব্রত মুখার্জির প্রাপ্ত ভোটের রেকর্ড ছুঁতে তো পারেননি তার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেন নি বাবুল সুপ্রিয়।

কেন পারলেন না? কি জন্য পারলেন না? সেই বিচার-বিশ্লেষণ নিঃসন্দেহে তৃণমূল কংগ্রেস করবেন এই প্রত্যাশা আমরা রাখি। কিন্তু সবচেয়ে অবাক করেছে এক বছর আগেই যে সিপিএম দল মাত্র ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল সেই সিপিএম এক ধাক্কায় ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে যা কল্পনাতীত। অন্যদিকে বিজেপি যদি তার ভোট শতাংশ ধরে রাখতে পারতো তাহলে হয়তো বাবুল সুপ্রিয়র জেতা কঠিন হয়ে যেত। আসলে সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত চারটে ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেস খুব ভালো ফল করতে পারেনি। বাবুল সুপ্রিয়কে প্রার্থী করার জন্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে একটা ক্ষোভ ছিল সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ভোট বাক্সে। ফলে আশ্চর্যজনকভাবে শতাংশের নিরিখে সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছ বাবুল সুপ্রিয়।

Advertisement

অন্যদিকে বামেদের উত্থান যেন আলাদিনের প্রদীপের মত সায়রা শাহ হালিমকে প্রার্থী করে সিপিএম যে খুব ভুল করেনি তাদের এই উত্থান প্রমাণ করেছে। কংগ্রেস দল প্রার্থী না দিলে হয়তো জয়ের ব্যবধান অনেকটাই কমে যেত বাবুল সুপ্রিয়র। কংগ্রেস দল এই কেন্দ্রে ভালো ভোট টেনেছে। এ থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংক এখন তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে আর নেই সেই ভোট আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে বাম ও কংগ্রেসের দিকে। সিপিএম এবং কংগ্রেস যদি সাংগঠনিকভাবে এই অঞ্চলে একটু শক্তিশালী হতো তাহলে হয়তো ভোটের ফলাফল ঘুরে যেতে পারত। কারণ সংখ্যালঘু এলাকার ভোটাররা যারা ভোট দিতে যাননি তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলেই সিপিএম আরো ভালো ফল করতে পারতো বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে তৃণমূল দলের অন্দরে একটা ক্ষোভ ছিল তাই দলের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু এলাকার ভোটারদের বুথ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়নি। আর এই কাজটা যদি সুকৌশলে সিপিএম কংগ্রেস করতে পারত তাহলে ভোটের ফল অনেকটাই ঘুরে যেত। সিপিএম প্রার্থী হেরে যাওয়ার নেপথ্যে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও দায়ী করা যেতে পারে। জেতার জন্য সব সরঞ্জাম মজুদ ছিল শুধুমাত্র সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই সিপিএম জিততে পারল না বালিগঞ্জে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যদি বালিগঞ্জের বিধানসভা কেন্দ্রের ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে অবিলম্বে এ রাজ্যের সংখ্যালঘু দের প্রতি উদার মানসিকতা নিয়ে না তাকান তাহলে আগামী দিনে আরও বেশি খেসারত দিতে হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। চতুর্মুখী লড়াইয়ে বাবুল সুপ্রিয় জয় হয়তো সহজ হয়েছে কিন্তু আগামী দিনে এই বালিগঞ্জ বিধানসভা ধরে রাখা তৃণমূলের পক্ষে কঠিন হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। কারণ মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার ভোটাররা রমজান মাস থাকার কারণে অর্ধেক মানুষ ভোট দিতে যায়নি। এসব এলাকায় সাধারণত ভোট পরে ৯০ শতাংশ সেই জায়গায় ভোট পড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। সংখ্যালঘু সমাজের মানুষ যদি ব্যাপকহারে ভোট দিতে যেত তাহলে এই ফল যে উল্টে যেত তার বলার অপেক্ষা রাখে না। অতএব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্ক হতে হবে ।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনিস খান রামপুরহাট এর ঘটনা সবকিছুর প্রভাব এবারের বালিগঞ্জ বিধানসভা নির্বাচনে পড়েছে। আগামী দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সতর্ক না থাকেন তাহলে বালিগঞ্জ বিধানসভা ধরে রাখা আরো কঠিন হবে। কারণ মনে রাখতে হবে বিজেপি যদি স্পষ্ট সংকেত পেয়ে যায় বাংলার সংখ্যালঘু ভোট মমতার পাশে নেই তাহলে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়া কাছে খুব সহজ হয়ে যাবে। সংখ্যালঘু ভোটের সামান্য হেরফের হলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নবান্নে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ