জেলা 

মুর্শিদাবাদের বালি গ্রামীন উচ্চ বিদ্যালয়ে টিআইসি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ে বহিরাগতদের তান্ডব এবং শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ

শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিনিধি:- মুর্শিদাবাদের বালি গ্রামীন উচ্চ বিদ্যালয়ে টিআইসি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ে বহিরাগতদের তান্ডব এবং শিক্ষিকার শ্লীলতাহানির অভিযোগ।

মুর্শিদাবাদ লালবাগ মহকুমার অন্তর্গত মুর্শিদাবাদ জিয়াগঞ্জ ব্লকের বালি গ্রামীন উচ্চ বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে বিদ্যালয়ে বহিরাগতরা তান্ডব চালায়। অভিযোগ গত ৩০/০৫/২০২৫ শুক্রবার অকস্মাৎ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের অকাল প্রয়াণে উক্ত পদটি শূন্য হয়। গত ০৩/০৬/২০২৫ এ বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে ১০/০৬/২০২৫ এ ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্বাচন করা হবে। কিন্তু হঠাৎই সভা শুরুর আগেই বিদ্যালয়ের স্থানীয় এক সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম সেখ এলাকার কিছু অসামাজিক লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষক শিক্ষিকাদের হুমকি দিতে শুরু করে।তাদের দাবি স্থানীয় শিক্ষক আবুল কালাম সেখকেই পুনরায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় উক্ত দিনে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্বাচন করা যায়নি। হঠাৎই ১১/০৬/২০২৫ দুপুর নাগাদ একদল যুবক বিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে পড়ে এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করে। মৌসুমী কবিরাজ নামে এক শিক্ষিকা প্রতিবাদ করতে গেলে নেতৃত্বে থাকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম সেখ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজীডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমির সোহেল উক্ত শিক্ষিকার শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। উক্ত ঘটনায় শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।শিক্ষিকা মৌসুমী কবিরাজ তার চারজন সহকর্মীর সাক্ষ্যপ্রমাণে আবুল কালাম সেখ ও আমির সোহেল ওরফে মুন্না মাস্টারের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন।

Advertisement

বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কথায়, সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম সেখ বছর কয়েক আগে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ইতিপূর্বে ২০১৫ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। উক্ত সময়ে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিড ডে মিল, সরকারি নিয়মবহির্ভূত অতিরিক্ত ভর্তি ফিস্ নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের মধ্যে থেকে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং তৎকালীন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মহাশয় অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে গত মেমো নং ১১৪-জি, ১৫/০১/২০২০ তে তাকে অপসারণ করেন। উক্ত পদে টিকে থাকার জন্য তিনি হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করেছিলেন। উক্ত শিক্ষক যখন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন তখন তিনি সহকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র, পদের অপব্যবহার করে সহকারী শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখতেন। তার নামে জেলা শিক্ষা ভবনে এবং থানায় একাধিক অভিযোগও রয়েছে।এরই মধ্যে দীর্ঘ দেড় দশক পর প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের যোগদান বিদ্যালয়ে প্রাণ ফিরে এসেছিল। প্রধান শিক্ষকের অকাল মৃত্যুর ফলে উক্ত শিক্ষককে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করলে আমরা পূর্বের বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা মনে করে আতঙ্কে ভুগছি।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাইম আলি ও উৎপলেন্দু মন্ডল বলেন,শিক্ষা দফতরের নিয়মানুযায়ী প্রধান শিক্ষকের জায়গায় বিদ্যালয়ের কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য পরিচালন কমিটি স্টাফ কাউন্সিলে আলোচনা সাপেক্ষে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্বাচন করবেন।কিন্তু এখানে স্টাফ কাউন্সিলকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বহিরাগতদের তান্ডবে পরিচালন কমিটির সভাপতি মাথা নত করেছেন। শিক্ষকদের মতামতকে উপেক্ষা করে আবুল কালাম সেখকে অন্যায়ভাবে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক করার জন্য আমাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে এবং ভয় দেখানো হচ্ছে। আবুল কালাম সেখ টিআইসি হলে আমরা নিশ্চিত, এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা অচিরেই ভেঙে পড়বে এবং তার দৌরাত্ম্যে পুনরায় দুর্নীতির আঁতুরঘরে পরিণত হবে বিদ্যালয়ের মতো পবিত্র জায়গা। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।আমরা ডিআইকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখিত জানাবো।

পরিচালন কমিটির সভাপতি সেলিম মাসুদ বলেন, যেহেতু আমি তৃণমূল দলটা করি এবং দলই আমাকে পদে বসিয়েছে সেহেতু দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে বাইরে আমার কিছু করার নেই। আমি জানি দল যাকে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে চাইছে তাকে দায়িত্ব দিলে বিদ্যালয়েরই ক্ষতি হবে। এখানে আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনিচ্ছার কোনো গুরুত্ব নেই। তাই শিক্ষক শিক্ষিকাদের মতামতকে উপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। সুতরাং দলীয় নেতৃত্ব যা বলবেন আমাকে তাই করতে হবে।

স্থানীয় এক বিদ্যালয় হিতৈষী বলেন, তৃণমূল দলটা আমিও করি। কিন্তু আমাদের দলে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়না।আবুল কালাম সেখ একজন কুখ্যাত ব্যক্তি তা এলাকার সবাই জানে।ও একজন সিপিএমের হার্মাদ।গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছে। তাকে কী করে তৃণমূল দল সাপোর্ট করে তা বুঝে উঠতে পারছিনা। হয়তো কোনো গোপন আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এতে তৃণমূলেরই ক্ষতি হবে।

তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি সুদীপ সিংহ রায়কে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় দলীয় নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেখানে আমাদের বলার কিছু থাকতে পারে না। তবে পরিচালন কমিটি ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ