অন্যান্য কলকাতা 

ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নয়, কোনো একটি বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষা করা-গবেষণা করা অনেক প্রয়োজন, অনেক চ্যালেঞ্জিং। মাধ্যমিকে তৃতীয় ও মেয়েদের মধ্যে রাজ্যে প্রথম ঈশানী প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষিকা অর্ণা দাস

শেয়ার করুন

নায়ীমুল হক: বিশিষ্ট শিক্ষিকা অর্ণা দাস নিজেকে প্রাচীনপন্থি বলতেই ভালোবাসেন। কারণ, বই খুঁটিয়ে পড়া, বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করা, বিভিন্ন ঘটনার কারণ জানতে উৎসাহী হওয়া, সেটা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা, তিনি মনে করেন, এগুলোর মাধ্যমেই ঘটতে পারে প্রকৃত উন্নয়ন। ছাত্র-ছাত্রীর বিকাশের রাস্তা গবেষণার মাধ্যমেই পূর্ণতা লাভ করে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার নয়, কোনো একটি বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষা করা-গবেষণা করা অনেক প্রয়োজন, অনেক চ্যালেঞ্জিং। প্রধান শিক্ষিকা অর্ণা দাস এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলছিলেন, তাঁর বিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রী এবছর মাধ্যমিকে মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং রাজ্য মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকারী ঈশানী চক্রবর্তী সম্পর্কে বলতে গিয়ে। শুধু পড়াশোনাতেই নয়, ঈশানী নানা রকম কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে থাকে, বন্ধু-বান্ধবদের উৎসাহিত করে, পাঠ্য বইয়ের ছোট্ট গণ্ডির মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখার মধ্যে নয় বরং দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাবলীর মাধ্যমে নিজের জ্ঞানের উন্মেষ করতে চায় ঈশানী, এমন ভাবেই ছাত্রীর উচ্চ প্রশংসায় ভরিয়ে তুললেন প্রধান শিক্ষিকা অর্ণা দাস। বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম কোতুলপুর। সেখানকার সরোজ বাসিনী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তিনি। নানা দিক থেকে পিছিয়ে পড়া একটি গ্রাম। ঈশানি এখানেই পড়ছে ক্লাস ফাইভ থেকে। প্রথম থেকেই আমরা বুঝেছিলাম, তার মধ্যে একটা আলাদা প্রতিভা আছে। আমরা সকলে মিলে ওর পাশে দাঁড়িয়েছি। খুব বাধ্য ও, যেভাবে বলেছি তা অনুসরণ করেছে ঈশানী। বাড়ি থেকেও অনেক সাপোর্ট পেয়েছে সে।

ঈশানীর সঙ্গে কথা বলেও জানলাম সে কথাগুলোই। মাধ্যমিক প্রস্তুতি নিয়ে সে তার স্কুলের কথা শিক্ষকদের কথা বারবার শোনালো। আর পড়াশোনার কথা গিয়ে বলতে গিয়ে জানালো ভৌত বিজ্ঞান তার প্রিয়, ফিজিক্স নিয়ে রীতিমত পড়াশোনা করে সে, অ্যাস্ট্রো-ফিজিক্স নিয়ে উচ্চশিক্ষা করতে চায়। কল্পনা চাওলা তার মডেল। কল্পনা চাওলার দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু তাকে নাড়া দিয়েছে। বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালাম তার কাছে আদর্শ মানুষ।

Advertisement

ঈশানীর বাবা-মা দুজনেই অংকের শিক্ষক, অংকের ভীত এখান থেকেই তার গড়ে উঠেছে। তবু অংকে এক নম্বর কম পাওয়া স্বাভাবিকভাবেই তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মা-বাবাও জানালেন সে কথা। তবে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, এখন সামনের দিকে এগিয়ে চলাই তাদের লক্ষ্য। কন্যার এই সাফল্য তাঁদের জীবনে অবশ্যই এক বড় প্রাপ্তি, তবে মানুষের মতো মানুষ করে তোলাই এখন তাঁদের লক্ষ্য। ঈশানী সকলের সাথে মিশতে পারে, কথা বলতে ভালোবাসে, এক কথায় খোলামেলা মনের কন্যা সে, এটাই তাঁদের পরমপ্রাপ্তি, জানালেন বাবা-মা দুজনেই।

রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হওয়ার পরও খুব বেশি হেলদোল নেই ঈশানীর মধ্যে। কারণ সে জানে সামনে বড় একটা লড়াই অপেক্ষা করছে। তবুও মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনকে এই উপহার দিতে পেরে তৃপ্ত ঈশানী। সকলের সহযোগিতায় তার এখানে পৌঁছানো। সে জানায়, জীবনবিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞানে ১০০ করে পেয়েছে, এমনকী বাংলাতেও ১০০, সর্বমোট নম্বর ৬৯২। অবশ্য এদিকে আর খুব বেশি মাথাব্যথা নেই ঈশানীর। এখন তার লক্ষ্য ইলেভেন-টুয়েলভ এর পড়ায় মনোনিবেশ করা।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ