দেশ 

‘‘এখন থেকে কি মুসলিমদেরও হিন্দু সম্পত্তি বোর্ডের সদস্য হতে দেওয়া হবে?’’ কেন্দ্রের আইনজীবীকে প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির

শেয়ার করুন

 বেঞ্চ জানায়, তাদের সামনে মূলত দু’টি প্রশ্ন। এক, পিটিশনগুলি কি হাই কোর্টে পাঠানো হবে? দুই, আবেদনকারীরা কী নিয়ে সওয়াল করতে চান? এক পিটিশনকারীর হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি দাবি করেন, এই আইন সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে। সংবিধানের এই ধারা স্বাধীন ভাবে ধর্মাচরণের অধিকার দিয়েছে। তাঁর সওয়াল, জেলাশাসক সরকারের অঙ্গ। তিনি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা অসাংবিধানিক। ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিব্বল। এই ধারায় দীর্ঘদিন ধরে কোনও সম্পত্তি ধর্মীয় বা সেবার স্বার্থে ব্যবহার করা হলে তা ওয়াকফ বলে ধরে নেওয়া হয়, নথিভুক্তকরণ না হলেও চলে। সিব্বলের দাবি, এই ধারা ইসলাম ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাল্টা সওয়াল করেন সরকারি আইনজীবী তুষার মেহতা। তাঁকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘আপনি বলছেন ওয়াকফ বাই ইউজার কোর্টের রায়ে হলেও আজ তা বাতিল?’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, বেশির ভাগ মসজিদ চতুর্দশ, পঞ্চদশ শতকে তৈরি। তাদের নথি দাখিল কী করে সম্ভব? ওয়াকফ সংশোধিত আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার আবার শুনানি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমাদের সামনে তিনটি পথ। এক, আমরা পিটিশন শুনব। দুই, হাই কোর্টে পাঠিয়ে দেব। তিন, হাই কোর্টে পড়ে থাকা পিটিশনও গ্রহণ করে আমরাই সিদ্ধান্ত নেব।’’ সুপ্রিম কোর্ট তিনটি অন্তর্বর্তী নির্দেশ নিয়ে আলোচনাও করে। সেগুলি হল, এক, কোর্ট যে সম্পত্তিকে ওয়াকফ বলে ঘোষণা করবে, তাকে ‘ওয়াকফ নয়’ বলে ধরা যাবে না। দুই, যে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ রয়েছে, তা নিয়ে জেলাশাসক প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চালাতে পারবেন। কিন্তু সেই বিধান কার্যকর করা যাবে না। তিন, ওয়াকফ বোর্ড এবং ওয়াকফ কাউন্সিলের সদস্যদের মুসলিম হতেই হবে। শুধু যাঁরা পদাধিকার বলে ওয়াকফে যোগ দেবেন, তাঁরা ভিন্‌ধর্মের হতে পারেন। শেষ পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ তারা দেয়নি।

Advertisement

প্রধান বিচারপতির আইনজীবী মেহতাকে প্রশ্ন, ‘‘এখন থেকে কি মুসলিমদেরও হিন্দু সম্পত্তি বোর্ডের সদস্য হতে দেওয়া হবে?’’

প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘জেলাশাসক যদি সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেন যে, কোনটা ওয়াকফ, কোনটা নয়, তা কি ঠিক হবে?’’ আইনে ৯ নম্বর ধারা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি।

প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, কোনও ওয়াকফ সম্পত্তি নথিভুক্ত হয়ে গেলে, তাকে কি নতুন আইনে বাতিল ঘোষণা করা যাবে? মেহতা জানিয়েছে, নথিভুক্ত হয়ে গেলে তা হবে না। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ব্রিটিশরা এ দেশে আসার আগে সম্পত্তির নথিভুক্তকরণ হত না। অনেক মসজিদ চতুর্দশ, পঞ্চদশ শতকে তৈরি হয়েছিল। যেমন জামা মসজিদ। মেহতার সওয়াল, তাতে নথিভুক্তকরণ করতে বাধা কোথায়?

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কোনটা ওয়াকফ সম্পত্তি, কোনটা নয়, তা নিয়ে কোর্টকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হোক।’’ আইনজীবী মেহতার দাবি, ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনেও সম্পত্তির নথিভুক্তকরণ বাধ্যতামূলক ছিল।’’

বিচারপতি কুমার বলেন, ‘‘তিরুপতি বোর্ডে কি হিন্দু নন, এমন কেউ রয়েছেন?’’ প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, হিন্দুদের ধর্মীয় সম্পত্তির দায়িত্বে অন্য কোনও ধর্মের কেউ থাকেন না।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ