আমাদের সন্তান–আমাদের ভবিষ্যৎ প্রাইমারি এডুকেশন নিয়ে কলকাতায় অনুসন্ধান সোসাইটির কর্মশালা
নাফিসা ইসমাত : আজ রবিবার (১৩ এপ্রিল) অনুসন্ধান সোসাইটির উদ্যোগে কলকাতার লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে দিনভরব্যাপী এক কর্মশালা হয়ে গেল। এই কর্মশালার মুখ্য বিষয় ছিল আমাদের সন্তান আমাদের ভবিষ্যৎ। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন শিশু শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মনোবিদ এবং গুণীজনেরা। দিনটা শুরু হয় অনুসন্ধান টিমের শপথবাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে। সকলে মিলে শপথ গ্রহণের পর অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন অধ্যাপক ডঃ দীপক রঞ্জন মন্ডল। এরপর স্বাগত ভাষণ দেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপসচিব ডঃ পার্থ কর্মকার। তিনি বলেন, কিভাবে অনুসন্ধান সোসাইটি শিশুদের পড়াশোনা এবং সার্বিক উন্নয়নের কথা ভেবে একের পর এক কাজ করে চলেছে। এদিন প্রকাশিত হয় বিশিষ্টজনেদের লেখা নিয়ে আকর্ষণীয় শিক্ষা ফোল্ডার, ‘প্রাথমিকে শেখা-শিখি’। অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক অধিবেশনে আয়োজন করা হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা ও গুড পেরেন্টিং এর উপর শর্ট টেলিফিল্ম। এরই সাথে বিভিন্ন স্কুল থেকে পাঠানো শর্ট-ভিডিও দেখানো হয় এদিনের কর্মশালায়। যার মধ্যে প্রথম হয় নিমতা প্রাথমিক স্কুলের বানানো ভিডিও। এ’দিন অনলাইনেও ছিল কিছু বিশিষ্টজনের নজর কাড়া উপস্থিতি। ‘মিট উইথ দ্য থট লিডার্স’ সেশনে লন্ডন থেকে অনলাইনে উপস্থিত ড. এম এ বারি বলেন আমাদের সন্তান আমাদের ভবিষ্যৎ ও সু-সন্তান গঠনে পিতা মাতার ভূমিকা। আমেরিকা থেকে যোগ দেন সার্ন রিসার্চ সেন্টারের বিজ্ঞানী ড. ওয়াশিকুল ইসলাম। তিনি বলেন শিশুদের অনুসন্ধিৎসু মন বাড়ানো যায় কীভাবে।
এর পর শুরু হয় প্যানেল ডিসকাশন। সেখানে কি-নোট স্পিচ দেন দুই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডঃ অমরেন্দ্র মহাপাত্র এবং চন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী।
এরপর শুরু হয় চারটি বিষয়ে প্যানেল ডিসকাশন। প্রথম বিষয় ছিল, শিশুদের চিন্তাভাবনা, তাদের প্রয়োজন ও সুসংহত বিকাশ। এই বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন দিব্য গোপাল ঘটক, সঞ্জিত সেনগুপ্ত। প্যানেল ডিসকাশন এর দ্বিতীয় বিষয় ছিল ‘আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য’। এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. দেবব্রত মজুমদার, ড. সৈয়দ নূরুসসালাম ও বিশিষ্ট সফটওয়্যার ডেভেলপার প্রশান্ত কুমার ভট্টাচার্য্য। অভিভাবকদের দায়িত্ব, শিশুদের সঠিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা, স্মার্টফোনের ব্যবহার এই সমস্ত বিষয় উঠে আসে প্যানেল ডিসকাশনে। জমজমাট এই পর্বের পর হয় মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। কর্মশালার দ্বিতীয়ার্ধে আলোচনা হয় ‘শিশুদের প্রথম শিক্ষক তাদের অভিভাবক’। এই আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক মিলন দত্ত, প্রধান শিক্ষক সজল কান্তি মন্ডল।
এদিনের প্যানেল ডিসকাশনে সর্বশেষ বক্তব্যের বিষয় ছিল ‘সার্বিক উন্নয়নে স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা’। এ বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষা প্রশাসক মেচবাহার শেখ, প্রতিটি ইনস্টিটিউটের জাতীয় গবেষক সাবির আহমেদ। সবুজায়ন হবে কীভাবে আমাদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গন-এ বিষয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা থেকে আগত বিশিষ্ট শিক্ষক ও সাংবাদিক মনোজ রায়। কিচেন গার্ডেন বিশেষজ্ঞ মনোজ রায় বলেন, বায়ু দূষণ আজ একটি বড় চিন্তার বিষয়, যেভাবে আমরা বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তা থেকে বাঁচতে ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে নিজেদের স্কুলও বাড়ির চারপাশে গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে বলেন তিনি।
প্যানেল ডিসকাশন চারটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেন শেখ আলী আহসান, ডঃ চন্দন মিশ্র, ডঃ স্বাগতা বসাক এবং রাসনাউল আলম।
এদিনের কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক ও লেখক আরফান আলী বিশ্বাস। সমগ্র অনুষ্ঠানটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সাহাবুল ইসলাম, জহরলাল নাইয়া, গৌরাঙ্গ সরখেল, নায়ীমুল হক ও খাদেমুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি হাইব্রিড মোডে পরিচালনা ও টেকনিক্যাল দায়িত্বে ছিলেন শুভজিৎ মাইতি। এদিনের কর্মশালার ভেন্যু লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সজল কান্তি মন্ডলকে ধন্যবাদ জানায় অনুসন্ধান টিম। তিনিও জানান অনুসন্ধানের এই কর্মকাণ্ড যেন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
সবশেষে অনুসন্ধান সোসাইটির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডঃ শশাঙ্ক শেখর মন্ডল।