চাকরিহারাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে আদালত অবমাননা হয়েছে নোটিশ মমতাকে! অস্বস্তিতে তৃণমূল
বাংলার জনরব ডেস্ক : সম্প্রতি দেশের শীর্ষ আদালত রাজ্যের ২৫ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছিল। আর এই বাতিল নিয়ে গত সাতই এপ্রিল কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরি হারাদের নিয়ে একটি সভায় যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, আমি এই রায় মানতে পারছি না। এই কথা বলার জন্য আজ বৃহস্পতিবার মহাবীর জয়ন্তীর দিনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে অবমাননা করা হয়েছে এটা বলে একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নামে। পাঠিয়েছেন একজন আইনজীবী।
আইনজীবীর পাঠানো এই নোটিশ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ।তিনি এক্স হ্যান্ডলে এক পোস্টে লিখেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যাঁরা চাকরিহারা, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের চাকরি কী ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, মুখ্যমন্ত্রী সেই চেষ্টা করছেন। সেই প্রক্রিয়ার গতি কমাতেই এই আইনি নোটিস দেওয়া হয়েছে। কুণালের কথায়, ‘‘জটিলতা তৈরি করে প্রক্রিয়ার গতি কমানোর চক্রান্ত। চাকরিহারারা কী চান? মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টা সফল হোক। আপনাদের চাকরি বাঁচুক। না কি এ সব আইনি জট পাকানোর চক্রান্তকারীরা জটিলতা বাড়াক। অবস্থান নিন আপনারা।’’
এ নিয়ে বিরোধীদেরও বিঁধেছেন কুণাল। তিনি লিখেছেন, ‘‘রামবাম ভোটে পারে না, কোর্টে জট পাকায়।’’ কুণালের আরও বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিচারব্যবস্থায় সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন। বিচারপতিদের সম্মান দেন। কিন্তু কোনও রায়ে ন্যায়বিচার না হলে বা বহু মানুষের ক্ষতি হলে, সেই অংশ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে পুনর্বিবেচনার কথা বলেন। এর সঙ্গে আদালত অবমাননার কোনও সম্পর্ক নেই। মনে রাখবেন, বিচারপতি চাকরি ছেড়ে বিজেপির সাংসদ হতে গেলেও সাধারণ মানুষের চোখে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।’’
নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি এই রায় মানতে পারছি না।’’ তবে এর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেছিলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি বিচারপতিদের সম্মান করি।’’
মুখ্যমন্ত্রীকে আদালত অবমাননার যে নোটিস পাঠানো হয়েছে, তাতে নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মুখ্যমন্ত্রীক বক্তৃতার কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়েছে। নোটিসে লেখা হয়েছে, গত ৭ এপ্রিলের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘কারও চাকরি কাড়ার এই অধিকার কারও নেই। আমাদের প্ল্যান— এ রেডি, বি রেডি, সি রেডি, ডি রেডি আর ই রেডি। এই কথা বলার জন্য আমাকে জেলে, হ্যাঁ, ভরে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু আই ডোন্ট কেয়ার (আমি পরোয়া করি না)। আপনারা আপনাদের কাজ করুন। কে আপনাদের আটকাচ্ছে? সুপ্রিম কোর্ট? সে ক্ষেত্রে মনে রাখবেন যাই বিকল্প হোক, আমরা করব।’’
আইনি নোটিসে বলা হয়েছে, নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার জন্য… একটা চক্রান্ত চলছে… একটা পরিকল্পনা চলছে। ৯, ১০, ১১, ১২-তে যাঁরা শিক্ষক, গেটওয়ে অফ হায়ার এডুকেশন তৈরি করছেন, তাঁরা অন্যদের খাতা দেখছেন, তাঁদের মধ্যে গোল্ড মেডালিস্ট আছেন। তাঁদের জীবনেও ভাল রেজাল্ট ছিল। তাঁদের সবাইকে চোর বলে দিচ্ছেন। সবাইকে অযোগ্য বলে দিচ্ছেন। এই বলার অধিকার আপনাকে কে দিল? আমি সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছি।’’