অন্যান্য কলকাতা 

শুভেন্দুকে প্রশ্রয়, হুমায়ুনকে শোকজ করে নিজের রাজনৈতিক জীবনে চরম ভুল করলেন মমতা?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বিপদ নিজে ডেকে নিয়ে এলেন। ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন ছিল মমতার কাছে নিশ্চিত জয় এ নিয়ে কোন সন্দেহ কারো মধ্যে ছিল না। যদিও আরএসএস এবং বিজেপি এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নবান্ন দখল করতে দেবে না এইরকমই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে। সেই মোতাবেক আরএসএস এবং বিজেপি নেতারা নানারকম সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য করে চলেছেন। বিগত এক বছর ধরে শুভেন্দু অধিকারী এই রাজ্যের বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে যে বিরূপ মন্তব্য করেছেন তার বিরুদ্ধে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তেমন ভাবে সরব হতে দেখা যায়নি। গত মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে যে ভাষায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেছেন তা এক কথায় সংবিধান বিরোধী বলা যেতে পারে। প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত এ বিষয়ে সরব হওয়া এখনো পর্যন্ত নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সেভাবে বিরোধিতা করা হয়নি। যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি শুভেন্দু অধিকারী এ রাজ্যে শুরু করেছেন তা স্বাধীনতার পর থেকে কেউ কোনদিন কল্পনাও করতে পারেনি। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার সত্ত্বেও তিনিও এই রাজ্যে মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করেছিল এটা মনে রাখতে হবে আরএসএস নেতাদের।

আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক বিজেপি নেতা এবং আরএসএস প্রচারকদের চিনি যারা কোনদিন কোন ভাবেই সংখ্যালঘু সমাজকে এভাবে চিহ্নিত করেনি। আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি তৃণমূল কংগ্রেসের স্কুলের পড়াশোনা করে বিজেপিতে গিয়ে তিনি যেভাবে এ রাজ্যের মুসলিমদের নিশানা করেছেন তা এককথায় সংবিধান বিরোধী এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের  বিরোধী। সাম্প্রদায়িক এবং বিদ্বেষ মূলক ভাষণের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে। গত মঙ্গলবারের বক্তব্যের পর সবাই এ রাজ্যের আমজনতা প্রত্যাশা করেছিল যে এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার প্রশাসন বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তা হলো না উল্টোদিকে প্রত্যেকটা ক্রিয়ার যেমন প্রতিক্রিয়া আছে নিউটনের গতিসূত্র মতে সেই সূত্রেই পাল্টা প্রতিক্রিয়া এলো তৃণমূলের মুসলিম বিধায়ক হুমায়ুন কবিরের পক্ষ থেকে। তিনি প্রথমে শুভেন্দু অধিকারীকে অবিলম্বে মন্তব্য প্রত্যাহার করার দাবি জানালেন আর প্রত্যাহার না করা হলে তিনি এবং ৪২ জন বিধায়ক মিলে বিধানসভায় ঘিরে রাখবে বলে হুমকি দেন। এরপরই দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি হুমায়ুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শোকজ নোটিশ পাঠায়। অর্থাৎ হুমায়ুনকে শোকজ করে। আর এই শোকোজের চিঠি পৌঁছানো মাত্র বা শোকজ করা হবে এই খবরের ফলে রাজ্যের সাধারণ মুসলিম সমাজে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা এক ধাক্কায় ২৫ শতাংশ কমে গেছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

Advertisement

হুমায়ুন কবির অবশ্য শোকজ এর জবাব শনিবার সকালে দিয়ে দিয়েছেন সেখানে তিনি বলেছেন ক্ষমা চাইবেন না। কারণ তিনি দলের কোন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেননি। অন্যদিকে হুমায়ুন কবির এই মুহূর্তে পশ্চিম বাংলার বাঙালি মুসলিম সমাজের নেতা হিসাবে উঠে আসতে চলেছে। যে বিধায়কের বোধ বুদ্ধি নিয়ে এতদিন ধরে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি ছিল সেই বিধায়কই  এখন রাতারাতি পশ্চিমবাংলার মুসলমানদের কাছে হিরো হয়ে উঠেছেন। হুমায়ুন কবিরের সাফল্য এখানে।

জানা গেছে ইতিমধ্যে এআইসিসির পক্ষ থেকে অর্থাৎ অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং তাকে কংগ্রেসে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। হুমায়ুন কবির যদি এই মুহূর্তে কংগ্রেসে ফিরে যান তার পুরোনা দলে তাহলে মনে রাখতে হবে মুর্শিদাবাদ মালদা এবং দিনাজপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়বে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এতদিনের রাজনৈতিক জীবনে মুসলমান সমাজের কাছে তিনি ভিলেনে পরিণত হয়ে যাবেন। বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে মুসলমান সমাজের কাছে যদি একবার অবিশ্বাসের পাত্র হয়ে যায় কোন নেতা বা নেত্রী তাহলে তার বিশ্বাস ফিরিয়ে আনাটা খুব কঠিন থেকে কঠিনতর হবে।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য যে মুসলমান সমাজের মধ্যে ইতিমধ্যেই হুমায়ুন কবিরকে নিয়ে উচ্চাশা ব্যক্ত শুরু হয়ে গেছে। আগামী দিনে এই হুমায়ুন কবিরকে সামনে রেখেই ৮৪ টি মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্রে মুসলিম প্রার্থী কেন হবে না, এই দাবিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন সংঘটিত হবে। পাশের রাজ্য বিহারে যেখানে জাত পাতের অঙ্কের ভিত্তিতে বিধানসভা এবং লোকসভার প্রার্থী নির্বাচন করা হয় সেখানে এই রাজ্যে ৩৫ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠী থাকা সত্ত্বেও কোন বিচারে ৪০ জন ৪২ জন বিধায়ককে মনোনয়ন দেয় তৃণমূল কংগ্রেস সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে, উলুবেরিয়া পূর্বের মতো মুসলিম অধ্যুষিত বিধানসভায় কিভাবে সেখানে অমুসলিমকে প্রার্থী করে তৃণমূল কংগ্রেস। মূল কথা হলো বাইনারি পলিটিক্স খেলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আত্মঘাতী গোল করে ফেলেছেন এই আত্মঘাতী গোল থেকে তিনি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন! পুনরায় জিততে পারবেন ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে। সেটাই এখন দেখার বিষয়।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ