কলকাতা জেলা 

ক্ষমা চাইছেন না দলের কোন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেননি, তৃণমূলের শোকজের জবাব দিতে গিয়ে এ কথাগুলি লিখেছেন হুমায়ুন কবির

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারী প্রায় এক বছর ধরে এ রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী নানা কুমন্তব্য করে চলেছেন তা নিয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন কড়া পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এমনকি সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারী মুসলিম বিধায়কদের বিধানসভা থেকে চ্যাং দোলা করে বের করে দেবেন ক্ষমতায় এলে এই হুশিয়ারি দেওয়ার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিরব ছিলেন। অথচ ভারতের সংবিধান মতে এমন কি দেশের শীর্ষ আদালতের মতে কোন ব্যক্তি কোন সংগঠন যদি কোন জাতি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায় তাহলে তার বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীরব দর্শক এক্ষেত্রে।

শুভেন্দু অধিকারীর এই ধরনের মুসলিম বিরোধী মন্তব্যের প্রতিবাদে যখন তৃণমূলের আরেক বিধায়ক হুমায়ুন কবীর গর্জে উঠেছেন ঠিক তখনই সেই হুমায়ুনকেই শোকজ করল তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী যদি মুসলমানদের নিশানা করতে পারেন তাহলে বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী কে নিশানা করাটা কি হুমায়ুন কবিরের অপরাধ! দেশের সংবিধান এবং আইন কি বলে? হুমায়ুন কবীরকে গত বৃহস্পতিবার শোকজ করা হয় এবং একদিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয়। তৃণমূল দলের বিধানসভার শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপ মারধর হুমায়ুন কবিরকে শোকজ নোটিশ পাঠান। হুমায়ুন কবির সেই শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু শনিবার সকাল ন’টা ৩৫ মিনিটে তিনি সেই শোকজ এর জবাব দিয়ে দিয়েছেন। শোকজের লিখিত জবাব দিতে গিয়ে হুমায়ুন জানিয়েছেন তিনি তার মন্তব্যের জন্য কোনরূপ ক্ষমা চাইছেন না কারণ তার এই মন্তব্য দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেনি।

Advertisement

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হুমায়ুন কিছু কথা বলেছেন। তাঁর ওই মন্তব্যের জেরে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলে তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি। তৃণমূল সূত্রে খবর, হুমায়ুনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে শো কজ়ের নির্দেশ দেন। তার পর গত বৃহস্পতিবার তৃণমূল বিধায়ককে শো কজ়ের চিঠি পাঠিয়ে দেয় তাঁর দল। শুক্রবার শোভনদেব জানান, হুমায়ুনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার প্রমাণ তাঁদের কাছে রয়েছে। বিধায়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এ-ও বলা হয়, যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি উত্তর না দেন, তা হলে দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। শুক্রবার রাতে হুমায়ুনকে ফোনও করেন শোভনদেব। তখন সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন হুমায়ুন। তবে শেষ পর্যন্ত শনিবার সকালে তিনি শো কজ়ের জবাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ওই তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘শুক্রবার রাত ৮টা ১২ মিনিট নাগাদ আমার সঙ্গে কথা হয় শোভনদেববাবুর। তার পর আমি শো কজ় চিঠি দেখি। এক পাতার শো কজ় চিঠি দিয়েছিল। আমি দু’পাতার জবাব দিয়েছি। শোভনদেব যে হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর থেকে শো কজ় চিঠি পাঠিয়েছিলেন, সেই নম্বরে আমি ৯টা ৩৫ মিনিটে আমার জবাব পাঠিয়ে দিয়েছি পিডিএফ করে।’’ হুমায়ুন আরও বলেন, ‘‘এর আগে এক পাতার শো কজ়ের চিঠি দিয়েছিল। তার তিন পাতার জবাব দিয়েছিলাম। আমি বলেছি, আমার কাছে দল আগে নয়। আমি হুমায়ুন কবীর।’’

হুমায়ুনের দাবি, তাঁর ১০ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের একটি বক্তব্যের মধ্যে শুধুমাত্র ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়োর জন্য তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘দলের পক্ষ থেকে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় মাত্র সাত লাইনে আমার কাছে আমার বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। ৩১ সেকেন্ডের নির্দিষ্ট বক্তব্যে তৃণমূল দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে ও দলের ক্ষতি হয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। আমি তার জবাব দিয়েছি। আমি দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙেছি, এমনটা মনে করি না।’’

শোকজের জবাব দিতে গিয়ে তিনি কি লিখেছেন তার ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘কোন প্রেক্ষিতে আমি বলেছি, কেন বলতে বাধ্য হয়েছি, সব ব্যাখ্যা রয়েছে চিঠিতে। আমি আমার অবস্থানে অনড়। আমি তৃণমূল করি ঠিকই, কিন্তু দলের আগে আমার জাতি। দল করি বলে আমার জাতিকে নিয়ে কেউ কিছু বলবে আর হুমায়ুন কবীর চুপচাপ শুনবে, সেটা হবে না। আমি আমার বক্তব্যের জন্য কোথাও ক্ষমা চাইনি। ভবিষ্যতেও চাইব না। তাতে দল যেটা ভাল মনে করবে করবে।’’

শোভনদেব হুমায়ুনের চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পিডিএফ পেয়েছি। চিঠিটির হার্ডকপি করতে পাঠিয়েছি। তার পর সেটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে পাঠানো হবে এবং তার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ