জেলা 

নাট্যের প্রসার ঘটাতে নাট্য উৎসব ও নাট্য প্রতিযোগিতা

শেয়ার করুন

‌অভিজিৎ হাজরা, বাগনান, হাওড়া :- গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া মহকুমার বাগনান ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত স্বাধীনতা সংগ্রামের পীঠস্থান বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব এর উদ্যোগে ২৩ তম নাট্য উৎসব ও স্কুল ভিত্তিক নাট্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হল বাঙালপুর সিংহবাহিনী তলায় বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব প্রাঙ্গণে। এবারের নাট্য উৎসব মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছিল প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব, নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা ” মনোজ মিত্র স্মৃতি মঞ্চ ” ।

নাট্য উৎসব প্রসঙ্গে বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব এর সম্পাদক তপন ঘোষ বলেন, ‘ বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব আজম্ম গৌরব মাহাত্নে অন্যান্য ক্লাব গুলো থেকে সম্পুর্ণ পৃথক। এই ক্লাব তৈরি হয়েছিল ১৯৩৩ খ্রীঃ। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলের একটি ক্লাবের নাম ‘ বয়েজ ক্লাব ‘ দেখে এবং তাদের কর্মধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এই ক্লাবের নামকরণ করা হয় ” বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব ” । এই ক্লাব সাহিত্য – সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাগনান থানার মধ্যে বলা যায় শীর্ষে।এই এলাকার মধ্যবিত্ত,উচ্চ মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এক সময় নাটক দেখার জন্য কলকাতার নামী দামী হলে যেত।অআর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষ জনের নাটক দেখার ইচ্ছা থাকলেও তারা কলকাতায় যেতে পারত না।২৫ বছর আগে এই এলাকার মানুষের মনোরঞ্জন এর জন্য নাট্য উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলাম আমরা। নাট্যের প্রসার, এলাকার যুবক- যুবতীদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানো, নাটকের প্রতি যুব সম্প্রদায়ের উৎসাহ বৃদ্ধি ঘটানো, অভিনয়ের প্রতি যুব সমাজকে উৎসাহিত করার জন্য এই নাট্য উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন। বিগত দিনে নাট্য প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে আমরা নানান অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি। অভিনয়ের দিন নাট্য দল গুলি নানান অজুহাত দেখিয়ে অভিনয় করতে আসতো না।তারপর আমারা নাট্য প্রতিযোগিতা করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রদর্শনী নাট্য উৎসব করার মনস্থির করে প্রদর্শনী নাট্য উৎসব করে চলেছি। এই বৎসর আমরা নাট্য উৎসব এর পাশাপাশি বিদ্যালয় ভিত্তিক নাট্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছি।

Advertisement

২৫ বছর আগে এই নাট্য উৎসবে ও প্রতিযোগিতা শুরু হলেও এই বৎসর নাট্য উৎসব ও প্রতিযোগিতার ২৩ তম বর্ষ।কারণ করোনা মহামারির সময়ে আমরা ২ বৎসর নাট্য উৎসব সংগঠিত করতে পারি নি ‘ । নাট্য উৎসব ও প্রতিযোগিতা প্রসঙ্গে বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব এর সভাপতি গোপাল ঘোষ বলেন, ‘ শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব বলেছিলেন ‘ থিয়েটারে লোক শিক্ষে হয় ‘ । কিন্তু বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নাটক, যাত্রাপালা, তরজা,কবি গান, বাউল, কীর্ত্তন ,পালা গান, পল্লীগীতি,কেষ্ট যাত্রা,রাম যাত্রা,ঘেঁটু গান ইত্যাদির মতো মাটির গান , মাটির সুর , মাটির সংস্কৃতি আজ কালের কপল জলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে বসেছে।তাই তার পুনরুদ্ধারে নাট্য চর্চা ও প্রসারে এই নাট্য উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে । ‌ বাঙালপুর ‘ বয়েজ ক্লাব ‘ এর কার্যকরী কমিটির সদস্য দীপঙ্কর ঘোষ বলেন,’ আগে এখানে নাটক -যাত্রার চর্চা ছিল।

এই চর্চা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।আগে নাট্য প্রতিযোগিতা করা হতো।২০ থেকে ৩০ টি নাট্য দল প্রতিযোগিতায় অংশ গ্ৰহণ করতো। পরবর্তী সময়ে প্রতিবন্ধকতার কারণে নাট্য প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দিয়ে নাট্য উৎসব সংগঠিত করে চলেছি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নয়। নাট্য প্রদশর্নী।নাট্য প্রযোজনার মাধ্যমে নাট্য উৎসব করে চলেছি। এই বছর আমরা নতুন ভাবে সংযোজন করেছি,নাট্য উৎসব এর পাশাপাশি স্কুলের ছাত্র -ছাত্রীদের মধ্যে নাট্য চর্চার প্রসার ঘটানোর জন্য ছোট ছোট ছাত্র -ছাত্রীদের মধ্যে সুস্থ সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য এই বৎসর বিদ্যালয় গুলিকে নাট্য উৎসবে সামিল করা হয়েছে নাট্য প্রতিযোগিতায় অংশ গ্ৰহণের মাধ্যমে। মোবাইলের সহজলভ্যতা, ইন্টারনেটে সহজলভ্যতার ফলে বিনোদন আজ সকলের হাতে হাতে। তাঁরা নিজেদের প্রতিভা বিকাশে আগ্ৰহী নয়। এই অবস্থাতে তাদের সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা , সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা এবং সুস্থ মানসিকতা গড়ে তোলার জন্য নাট্য প্রতিযোগিতায় ছাত্র -ছাত্রীদের সামিল করা হয়েছে।সুস্থ সংস্কৃতি, সুস্থ পরিবেশ, সুস্থ মানসিকতা তৈরির ক্ষেত্রে নাটক – যাত্রা একটা বড় ভূমিকা রাখে। আগামী প্রজন্মের মধ্যে যাতে এই মানসিকতা গড়ে ওঠে সেটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তিন দিন ব্যাপী নাট্য উৎসবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের নামকরা ছয়টি নাট্যদল প্রদশর্নী মূলক নাটক পরিবেশন করেন।এর পাশাপাশি বাগনান এলাকার তিনটি হাই স্কুল নাট্য প্রতিযোগিতায় অংশ গ্ৰহণ করে। প্রতিযোগিতা মূলক নাটক গুলি হলো ‘” মুগকল্যাণ হাই স্কুল” পরিবেশিত নাটক ‘ দন্তরঙ্গ ‘। ” ভুঁঞেড়া বি, এল, এস হাই স্কুল পরিবেশিত নাটক ‘ ‘ আবীর রাঙানো নতুন প্রভাত ‘ । ” বাঙালপুর ইউ সি হাই স্কুল ” পরিবেশিত নাটক ‘ উদ্ভুটে রাজার বিদ ঘুটে কান্ড ‘ । প্রদশর্নী মূলক নাটক গুলি হলো ‘ কালপুরুষ ‘ ,আগরপাড়া – র ” ফিরায়ে দিও না মোরে ” ।’ ক্রান্তিকাল ‘ সোদপুর – র ” স্বচ্ছ কাঁটা ” । ‘ আলেয়া ‘ ইছাপুর – র ” সামলে ধরুন ” । ‘ পালা দৃশ্য কাব্য ‘ উলুবেড়িয়া – র ” বদ্ধ ভূমিতে নন্দিনী ” । ‘ ইউনিট মালঞ্চ ‘ হালিশহর -র ” নিশিকুটুম “। ‘ বিরাটি সারণী,বিরাটি ‘ -র ” রঙ ” । ‌ তিন দিন ব্যাপী এই নাট্য উৎসব ও প্রতিযোগিতা এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সংস্কৃতি প্রেমী বিদগ্ধজন ‘ বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব ‘ এর নাট্য উৎসব এর পাশাপাশি বিদ্যালয় ভিত্তিক নাট্য প্রতিযোগিতা করার জন্য উচ্চ প্রশংসা করেছেন। তাঁরা বলেন, ‘ বাঙালপুর বয়েজ ক্লাব প্রতি বৎসর এই ধরণের নাট্য প্রতিযোগিতা করুক স্কুল গুলিকে সংগঠিত করে।এর পাশাপাশি এলাকার সাংস্কৃতিক ক্লাব গুলিকে ও এই নাট্য প্রতিযোগিতায় সামিল করার উদ্যোগ গ্ৰহণ করুক ‘ ।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ