কলকাতা 

মাধ্যমিক পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে স্কুল শিক্ষা দফতর যদি রাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করত মুখ্যমন্ত্রী কী মেনে নিতেন? মাদ্রাসার ক্ষেত্রে নীরব কেন?

শেয়ার করুন

বুলবুল চৌধুরী : মমতা সরকারের আমলে প্রশাসন কি মুখ্যমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে? নাহলে রাজ্য মাদ্রাসা ক্রিড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে চৌঠা ফেব্রুয়ারি কেন? প্রশ্ন এই বাংলার মাদ্রাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের! কোন লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে হাই মাদ্রাসা পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ আগে রাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে! আগামী ১০ই ফেব্রুয়ারি থেকে রাজ্যজুড়ে মাদ্রাসা বোর্ডের হাই মাদ্রাসা আলিম ফাজিল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। চলবে পঁচিশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

সম্প্রতি প্রতিটি জেলার মাদ্রাসা গুলিকে মাদ্রাসা শিক্ষা ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই জেলা স্তরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ করতে হবে। সেই মোতাবেক অধিকাংশ জেলার ক্রিড়া প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে যায় জানুয়ারি দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এবং তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট জেলাগুলির ক্রিড়া প্রতিযোগিতা সম্পূর্ণ হয়। এরপরই রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর থেকে ঘোষণা করা হয় ২৮ শে জানুয়ারি থেকে ৩০ শে জানুয়ারি পর্যন্ত হুগলির চুঁচুড়া শহরে রাজ্য স্তরের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।

Advertisement

হঠাৎই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেয়া হয় ২৮ তারিখে নয় এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতাটি হবে চৌঠা ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রাজস্তরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দার্জিলিং থেকে শুরু করে দীঘা পর্যন্ত যে সকল মাদ্রাসাগুলি রয়েছে অর্থাৎ ৬১৪ টি মাদ্রাসা প্রায় ৫০০ এর বেশি এমএসকে এবং কয়েক হাজার এসএসকে ছেলেমেয়েরা া এই ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন ১০ই ফেব্রুয়ারি থেকে হাই মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হলে কিভাবে চৌঠা ফেব্রুয়ারি এই সকল ছেলেমেয়েরা ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে।

বেশ কয়েকশো ছেলে-মেয়েকে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে বঞ্চিত রাখা হবে আবার যে সকল মাদ্রাসায় পরীক্ষার সেন্টার হচ্ছে সেখানকার ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রচন্ড টেনশনে পড়তে হবে। একইসঙ্গে এই ধরনের তুঘলঘি সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তো ক্ষুব্ধ একইসঙ্গে অভিভাবক অভিভাবিকাদের মধ্যে প্রচন্ড অসন্তোষ শুরু হয়ে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মাদ্রাসার শিক্ষা দফতরের রাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতার এই আয়োজন প্রকৃতপক্ষে কয়েক শো ছেলে মেয়েকে বঞ্চিত করবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। এ নিয়ে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, স্কুল শিক্ষা দফতর মাধ্যমিক পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে রাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে নীরব থাকতেন!

মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষার মুখে এই ধরনের সিদ্ধান্তকে বাংলার সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছে না। মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর কেন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ নিয়ে দফতরের আধিকারিকরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক বললেন আসলে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর মাদ্রাসার রাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে হাস্যকর এ পরিণত করেছে। মানুষের কাছে একটা উপভোগ্য বিষয় হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন এই দফতরের আধিকারিকরা। কোনরকম চিন্তাভাবনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এই সকল আধিকারিকরা করেন বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন না। কারণ এদের সকলেরই সন্তান পড়াশোনা করে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় গুলিতে। সুতরাং তাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রতি যদি দায়িত্ব থাকতো তাহলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অন্তত ১০ বার চিন্তা করতেন। নাগরিকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে 28 শে জানুয়ারি ক্রিড়া প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কথা ছিল কোন অজানা কারণে তা পিছিয়ে গেল? পি বি সেলিম এর মত যোগ্য একজন আইএএস অফিসার থাকা সত্ত্বেও তিনি কি একবারও ভেবে দেখেননি যে এই সময় হাই মাদ্রাসা বা মাদ্রাসা বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষা রয়েছে।! নাকি উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য পিবি সেলিম থেকে শুরু করে সকলেরই এক, কোন রকমে রাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতাটা শেষ করতে হবে। কোন আন্তরিক উদ্যোগ নেই! এটা যদি হয় তাহলে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজ কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ