দেশ 

তৃণমূল কেন আই এসএফকে ভয় পাচ্ছে এনিয়ে কি বললেন দলের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী?

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবঙ্গে এইরকম অভূতপূর্ব পরিস্থিতি আর দ্বিতীয়টি বোধহয় হয়নি। কলকাতার উচ্চ আদালতের নির্দেশ, কলকাতার শহীদ মিনার ময়দানে আইএসএফের তিন হাজার লোক আসতে পারবেন আর ৩০টি গাড়ি থাকবে। সর্বোপরি, পার্টির চেয়ারম্যান, বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী সহ ২০ জন সমাবেশে থাকতে পারবেন না। এর মধ্যে পার্টির রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিত মাইতি সহ আরো দুজন রাজ্য কমিটির সদস্যও আছেন। অন্য যেকোন দলের সভা-সমাবেশে কোন বাধা, বিপত্তি নেই। যত মাথাব্যথা আইএসএফ কে নিয়েই। আসলে আইএসএফ চায় মানুষের ঐক্য; ওরা চাই মানুষের মধ্যে বিভক্ত। সমস্যাটা এখানেই।

পার্টি আদালতের নির্দেশের মান্যতা দিয়ে সমাবেশস্থলে তিন হাজার চেয়ার রেখেছিলেন। কিন্তু সকাল থেকেই মানুষ সমাবেশ প্রাঙ্গনে এসেছেন। শীতের দুপুর। কিন্তু প্রখর রোদের তাপ। তাকে উপেক্ষা করেই ময়দান ভরে উঠেছে। একজন আইএসএফ বিধায়ককে সামলাতে যদি প্রশাসনকে এত তোড়জোড় করতে হয়, তাহলে দশটি বিধায়ক হলে কি হবে? ক্রমশ আদিবাসী-দলিত-সংখ্যালঘু সহ পিছড়ে বর্গের মুখপাত্র হয়ে উঠছে আইএসএফ। তাই তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত প্রশাসনের ঘুম নেই।

Advertisement

তাই সমাবেশের একদম শেষে নওসাদ সিদ্দিকী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বললেন, প্রশাসনের এই চূড়ান্ত অসহযোগিতায় রাগ ও ক্ষোভ হতেই পারে। কিন্তু এটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, আইএসফের ওপর তৃণমূল কংগ্রসের এত রাগ কেন? কারণ, দলিত, আদিবাসী, মুসলমানদের হয়ে কাজ করছে এই দল। তাই আইএসএফ একটি প্ল্যাটফর্ম। তাই যেনতেন প্রকারে রাজ্যসরকার দলটিকে আটকাতে চাইছে; চক্রান্ত করছে। কিন্তু আইএসএফকে ঘরে ঢোকানোর চেষ্টা ব্যর্থ। আজকের সমাবেশ তারই প্রমাণ। তিনি ঘোষণা করলেন, আগামী বছর মহানগরীর ব্রিগেডে সমাবেশ হবে। তিনি তো থাকবেনই। আর থাকবেন দলের প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকী। ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আইএসএফ এক ইঞ্চি মাটিও ছাড়বে না। নওসাদ সিদ্দিকীর গলায় ছিল এই প্রত্যয়ের সুর।

নওসাদ সিদ্দিকী বলেন, দলিত, আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার চলছে। জল-জঙ্গল-জমিন কেড়ে নিয়ে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে কর্পোরেটদের হাতে দেশের সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছে। ওয়াকফ আইন সংশোধনের মাধ্যমে মুসলমানদের সম্পত্তির ওপর হস্তক্ষেপ করতে চাইছে বিজেপি সরকার। তাই এই অপদার্থদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায়বিচার এখনও পাওয়া যায়নি। পরিবারের পাশে থেকে রাস্তায় ও আদালতে লড়ে ইনসাফ ছিনিয়ে আনতে হবে, নওসাদ সিদ্দিকী জানান।

সমাবেশে আইএসএফ রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষে বলেন অফিস সম্পাদক নাসিরুদ্দিন মীর, রাজ্য কমিটির সদস্য লক্ষীকান্ত হাঁসদা, গাজী সাহাবুদ্দিন সিরাজী, তাপস ব্যানার্জি, কুতুবুদ্দিন ফাতেহি। তাঁরা বলেন, সংগ্রামই শেষ কথা। মেকি সংখ্যালঘু দরদ দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস মুসলমানদের একাংশকে বিভ্রান্ত করছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। তাঁরা বলেন, জল, জঙ্গল, জমিন দখল করে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত রুখতে হবে। দেওচা পাঁচামীতে কয়লা খনির নাম করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ রুখতে একজোট হতে হবে। তাঁরা বলেন, সমাবেশ বানচাল করার অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু অধিকার বুঝে নিতেই আমরা জড়ো হয়েছি। আমাদের ধমকে, চমকে বাধা দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। কিন্তু আইএসএফ শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্র্রিক পথে এগিয়ে যাবে। তাঁরা বলেন, সংখ্যালঘুদের মসিহা আজ ভাঁওতাবাজে পরিনত হয়েছে। মুসলিমদের চাকরি না পায় তার জন্য চক্রান্ত করছেন। মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। আজ্যে বেশি মাদ্রাসা আছে। অনেকগুলিই শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে।

মালদা জেলার আইএসএফ নেতা আলি কালিমুল্লাহ্ মালদা ও মুর্শিদাবাদের গঙ্গা ভাঙনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এর ফলে জেলাগুলিতে আম, লিচু চাষের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু রাজ্যসরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রসারও করছে না। মুর্শিদাবাদের আইএসএফ নেতা হাবিব শেখ বলেন, এই জেলা একসময় ছিল সুবেহ্ বাংলার রাজধানী। সেটা এখন রাজ্য সরকারের অপদার্থতায় পরিযায়ী শ্রমিকের রাজধানী হয়ে গেছে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেএনইউ-এর প্রাক্তন ছাত্রনেত্রী ও বর্তমানে অধ্যাপনারত আলবিনা শাকিল। তিনি সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর দমনপীড়নের কথা তুলে ধরে বলেন, সংবিধান আমাদের সবাইকে সমানাধিকার দিয়েছে। কিন্তু মোদী সরকার সংখ্যাগুরু মতবাদের দ্বারা এটাকে গত দশবছর ধরে শেষ করতে চাইছে। তার উদাহরণ হিসেবে তিনি সিএএ ও এনআরসি-র প্রসঙ্গ তোলেন। এই প্রসঙ্গেই তিনি প্যালেস্তিনীদের ওপর জায়নবাদী ইজরায়েলের নৃশংস গণহত্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ওয়াকফ সংশোধনী আইন সংবিধান বিরোধী। এর বিরূদ্ধে লড়াই করতে হবে।

সমাবেশে অধ্যাপক প্রসেনজিত বসু বলেন, প্রতিহিংসা দেখাচ্ছে রাজ্য সরকার। বিধায়কের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে। শর্তসাপেক্ষে সমাবেশ হচ্ছে। চারজন রাজ্য কমিটির সদস্য থাকতে পারছেন না। আমরা আদালতের রায়কে সম্মান দিচ্ছি কিন্তু তাদের এই রায় নিয়ে আমরা একমত নয়।

আইএসএফ নেতা মাহিউদ্দিন মাহী বলেন, অধিকার কেড়ে নিতে হবে। এমনি,এমনি কেউ দেবে না।

সমাবেশে এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুসা কারিমুল্লাহ্, তৌহিদ আহমেদ খান, সাহাদাত শাহ্, ছাত্র নেতা রাকেশ বেরা প্রমুখ। অডিও মাধ্যমে সমাবেশকে অভিনন্দন জানান দলের রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিত মাইতি। সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন দলের রাজ্য কমিটির কার্যকারী সভাপতি সামসুর আলি মল্লিক।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আই এস এফ নেতৃত্ব আইনজীবী মহ: জামির হোসেন, জুবি সাহা, আইনজীবী সেখ সাব্বির আহমেদ, অধ্যাপক বাপি সরেন, অনির্বাণ তলাপত্র প্রমুখ।

দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি সমাবেশে উপস্থিত সকল কর্মী, সমর্থক, অতিথিবৃন্দ, মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ, পার্টি ও স্টুডেন্ট ফ্রন্টের স্বেচ্ছাসেবকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ