মুখ্যমন্ত্রীর নদী-ভাঙন নিয়ে ঘোষণার প্রতিবাদ এসডিপিআইয়ের
বিশেষ প্রতিনিধি : মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী মুর্শিদাবাদ সফরে এসে প্রশাসনিক সভা থেকে এই জেলার উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপের কথা জানালেন। সেই সব প্রতিশ্রুতির অন্যতম হলো নদী-ভাঙন প্রতিরোধ সংক্রান্ত। এ বাবদ ৬২.৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করলেন। কিন্তু তাঁর এই ঘোষণা নানা কারণেই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
প্রথমত, নদী-ভাঙন প্রতিরোধ কোনো ছোটখাট সমস্যা নয়। এজন্য নদী বিশেষজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা-প্ল্যানিং করা জরুরি। কিন্তু এসব না করে তিনি কি করে এই টাকা বরাদ্দের কথা বলছেন? এভাবে টাকা বরাদ্দ কি আগের মতই সমস্যার সমাধানের বদলে নেতা-মন্ত্রী ও তাদের চামচাদের পকেট ভর্তি করবে না?
দ্বিতীয়ত, তিনি ঘোষণায় বলেছেন পদ্মা ও গঙ্গা নদীর ভাঙন প্রতিরোধের কথা। তাহলে এর সীমানা অত্যন্ত বিস্তৃত। তিনি যেখানে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে দূরে সরিয়ে রেখে একটা মন্দির তৈরি করেছেন (পুরীর জগন্নাথ মন্দির) ২০৫ কোটি টাকা, প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলার শুধুমাত্র ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার জন্য বিপুল অর্থের টাকা ব্যয় করছেন (এবছর ২৫০ কোটি টাকা), একইভাবে প্রতিবছর পূজার জন্য ক্লাবগুলিকে মোটা অংকের টাকা প্রদান করছেন (এ বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা), সেখানে এই অতি নূন্যতম অর্থে কতখানি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব? সর্বোপরি প্রশ্ন হঠাৎ করে তিনি এমন ঘোষনা করে বসলেন কেনো? অনেকেই মনে করছেন— সম্প্রতি এসডিপিআই দলের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন প্রতিরোধে ঐতিহাসিক পদযাত্রা করা হয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবি তোলা হয় সেই কারণেই তিনি তড়িঘড়ি এই ঘোষণা করলেন যাতে এখানকার রাজনীতি এসডিপিআই-এর দিকে ঝুঁকে না যায়।
আমরা ইতিপূর্বে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকেই শুনেছি, “নদীর ধারে মানুষ কেন বাড়ি তৈরি করে?” প্রশ্ন– তিনি কি জানেন না, মানুষ নদীর ধারে গিয়ে বাড়ি তৈরি করে না, নদীই ভাঙন-বিধ্বংসী হয়ে এগিয়ে এসে জনবসতীকে গ্রাস করে। তাছাড়া, আরও একটি প্রশ্ন—কেন্দ্র একসময় নদী-ভাঙন প্রতিরোধে ১০০ কোটি টাকা প্রদান করে, সেই টাকা আজ পর্যন্ত খরচ করা হয়নি কেনো বা সেই টাকা কোথায় গেলো?
সার্বিক বিচারে, তাই এসডিপিআই মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা করছে। দাবি করছে, নদী-ভাঙন প্রতিরোধ, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের জন্য নদী বিশেষজ্ঞ ও ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা উপযুক্ত প্রজেক্ট তৈরি করে স্থায়ী সমাধানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। রাজ্য একাই করতে না পারলে কেন্দ্রকে চাপ সৃষ্টি করা হোক। তাছাড়া, একে জাতীয় সমস্যা ঘোষণা করে এর সমাধানে এসডিপিআই সহ অন্যান্য দল নিয়ে সর্বদলীয় সভা ডেকে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা হোক, যাতে কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় সমস্যা ঘোষণা করে এর সমাধানে ব্যবস্থা নেয়।