বেঙ্গল মডেল এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-এর উদ্যোগে প্রাইমারি শিক্ষকদের নিয়ে বিজ্ঞান ও গণিত কর্মশালা
নিজস্ব প্রতিনিধি : উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাপায় বেঙ্গল মডেল এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-এর তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক পর্যায়ের বেসরকারি স্কুলের বিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষকদের নিয়ে একদিনের এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শনিবার (২ নভেম্বর ২০২৪)। সাতটি বিদ্যালয়ের ৪২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেন এ দিনের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায়।
শিশুদের পাঠ যাতে আনন্দময় হয়ে ওঠে, সত্য কথা বলতে শেখে, এক কথায় জীবনের ভীত যাতে মজবুত হয়, এটাই ছিল এই কর্মশালার মুখ্য বিষয়। শিশুরা যা বইয়ের পাতায় দেখে, তা যে আমাদের দৈহিক গঠন, পরিবেশ, প্রকৃতির বাইরে অন্য কিছু নয়, সেটাই পরিষ্কার করে এদিন বলা হয় এই কর্মশালায়। এগুলি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা শিশুরা কীভাবে পাবে, শিক্ষকরা কীভাবে পাঠ পরিকল্পনা করবেন এবং ক্লাসরুম পরিচালনা করবেন, তার মডেল তুলে ধরেন বিজ্ঞান ও গণিতের দুই প্রশিক্ষক। সূর্যের আলোর বর্ণালী অর্থাৎ সাতটি রংয়ের-বিচ্ছুরণ, চুম্বকের আকর্ষণ বিকর্ষণ সেখান থেকে অভিকর্ষজ টানের কথা অর্থাৎ কোনো বস্তু উপর থেকে নিচের দিকে কেন পড়ে, এছাড়াও খাবার সোডা, ভিনেগার, পাতিলেবু এগুলি দিয়ে ছোট ছোট বিক্রিয়া করে দেখান বিজ্ঞানের শিক্ষক নাজিম মল্লিক। গণিতের ধারণা শিশুর জন্মের প্রথম দিন থেকেই হয়ে যায়। সে একমাত্র একজনকেই তখন চেনে। তিনি হচ্ছেন তার মা। তারপর সে চেনে তার পিতাকে। তিনি দ্বিতীয়।
ধীরে ধীরে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। অর্থাৎ গণনার ধারণা সে সকলের অজান্তেই শিখে যায়। আমরা প্রকৃতির এই নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থাকে আমল না দিয়ে চাপিয়ে দেওয়া যখন থেকে শুরু করেছি তখনই গণিত হয়ে গিয়েছে ভয়ের। এই অভ্যাস আমাদের ত্যাগ করতে হবে। আমাদের দেহ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, প্রকৃতির ফুল-ফল, মাকড়সার জাল–কত কিছুই না আছে আমাদের শিক্ষার জন্য। শিশু-শিক্ষায় এগুলির প্রতি নির্ভরশীলতা বাড়লে ঝঞ্ঝাট অনেক কমে যাবে, অন্যদিকে শিশুরাও অংক, বিজ্ঞান, বাংলা, ইতিহাস- সমস্ত কিছুই শিখবে মনের আনন্দে, স্কুলে আসতেও উৎসাহ পাবে। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী গণিত শিক্ষকদের প্রতি এই কথা জোর দিয়ে বলেন শিক্ষক নায়ীমুল হক। গণিতের বিভিন্ন হিসেব যেমন যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ, ভগ্নাংশের ধারণা যেগুলি ক্রমান্বয়ে শিশুদের কাছে নিরস হয়ে যায়, সেগুলি কতটা আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তা তিনি বেশ কিছু মডেল তৈরি করে দেখান। তিনি বলেন শিশুদেরকে ভালোবেসে পড়ালে তাদের জন্য আরও অভিনব এবং যথোপযুক্ত পদ্ধতি শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেই বের করে ফেলতে পারবেন। উদ্বুদ্ধ হয়ে এদিনই অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজে হাতে গণিতের বেশ কয়েকটি মডেল তৈরি করে ফেলেন, যেগুলি অতি চমৎকার হয়েছে বলে বর্ণনা করেন আয়োজক সংস্থা বেঙ্গল মডেল এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সম্পাদক সেখ আহাসান আলি।
এদিন কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন সহযোগী সংস্থা অনুসন্ধান সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বারাসাত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ আলী আহসান। হাতে-কলমে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এদিনের পারফরমেন্সে সেরা স্কুলের শিরোপা তিনি তুলে দেন অগ্নিবীণা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে। এই কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন প্রাইমারি পর্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে এ ধরনের অ্যাক্টিভিটি মূলক কর্মশালা সচারচর দেখা যায় না। বেঙ্গল মডেল চাইল্ড ইনস্টিটিউট-এর এই আয়োজন থেকে সমাজের কিছু প্রাপ্তি যোগ ঘটলো।
এদিন অসাধারণ গুণমান সম্পন্ন একটি চার পৃষ্ঠার স্মারক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। দেশের বরেণ্য বিজ্ঞানী, শিক্ষা প্রশাসক, গবেষকদের কলমের স্পর্শে জীবন্ত হয়ে উঠেছে ‘শিশু শেখা-শিখি’ নামক স্মারকখানি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তরুণ চিকিৎসক তৌহিদুর রহমান, বিশিষ্ট শিক্ষাপ্রেমী আবুল কালাম আজাদ প্রমূখ। দিনের শেষে বেঙ্গল মডেল চাইল্ড ইন্সটিটিউট-এর ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুকান্ত সমাদ্দার উপস্থিত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আবারও এই ধরনের আয়োজনে শামিল হতে সকলকে অগ্রিম আমন্ত্রণ জানান।