দেশ 

মাদ্রাসাগুলিকে বন্ধ কিংবা আর্থিক সাহায্য থেকে এখনই বঞ্চিত করা যাবে না নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে দেওয়া এবং তাকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার যাতে কোন অর্থ সাহায্য না করে সে বিষয়ে সম্প্রতি দেশের সমস্ত রাজ্যের মুখ্য সচিবদের চিঠি দিয়েছিলেন জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপারসন প্রিয়াঙ্কা কানুনগো। সেই প্রস্তাবের উপরে সোমবার স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়েছে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের সুপারিশ মত বা পরামর্শ মত কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার মাদ্রাসাগুলির ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ নিতে পারবে না।

উত্তরপ্রদেশ এবং ত্রিপুরা সরকার সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছিল, অনুমোদনহীন এবং সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলি থেকে পড়ুয়াদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য। জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ওই নির্দেশিকাগুলি জারি করা হয়েছিল। উভয় রাজ্যের নির্দেশিকার উপরেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশ সরকারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দ নামে একটি সংগঠন। মামলাকারী পক্ষের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশিকায় সংখ্যালঘুদের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানোর সংবিধানের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। মামলাটি ওঠে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে। কমিশনের প্রস্তাব এবং দুই রাজ্যের নির্দেশিকার উপর সোমবার স্থগিতাদেশ জারি করেছে আদালত। এর মধ্যে আর কোনও রাজ্য এই বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করলে, সেটির উপরেও স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে। একই সঙ্গে কেন্দ্র এবং প্রতিটি রাজ্য সরকারের থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

সম্প্রতি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। তাতে মাদ্রাসার ‘ঐতিহাসিক ভূমিকা’ এবং শিশুদের শিক্ষার অধিকারে তার প্রভাব নিয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১১ অধ্যায়ের ওই রিপোর্টে কমিশনের মূল পরামর্শ ছিল, বিভিন্ন রাজ্যে মাদ্রাসাগুলিতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা হোক এবং সেগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হোক। কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো শিশু শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইনের (আরটিই, ২০০৯) লক্ষ্য হল সমতা, সামাজিক ন্যায় এবং গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু তার পরেও একটি বিপরীতধর্মী চিত্র দেখা যাচ্ছে। সেখানে শিশুদের মৌলিক অধিকার এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে।’’

জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, শুধুমাত্র বোর্ড এবং একটি ইউডিআইএসই কোড থাকা মানেই মাদ্রাসা যে শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত আইন মানছে, এমনটা নয়। বেশ কিছু ঘটনার উদ্ধৃতি এবং উদাহরণ দিয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বলা হয়েছে মাদ্রাসাগুলিকে যেন সাহায্য না করা হয়। পাশাপাশি, মুসলমান সম্প্রদায়ের শিশুকে মাদ্রাসায় ভর্তি না করিয়ে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল জাতীয় কমিশন। সেই সুপারিশের প্রেক্ষিতেই উত্তরপ্রদেশে মাদ্রাসার পড়ুয়াদের অন্য সরকারি স্কুলে ভর্তি করানোর নির্দেশিকা জারি হয়েছিল।

জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের এই পরামর্শে কার্যত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে তাদের অবস্থান জানাতে হবে বলে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। তবে এটা পরিষ্কার সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সংখ্যালঘুদের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা পরিচালনা করা এবং তাদের ধর্মীয় শিক্ষা ও কৃষ্টি কালচারের প্রচার করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের এই সুপারিশের সাংবিধানিক অধিকারের উপরে আঘাত হানা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট কার্যত নাগরিকদের সেই অভিযোগেই সিল-মোহর দিল বলে মনে করা হচ্ছে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ