মমতার রাজনৈতিক কৌশলে কর্মবিরতি তুলতেই হবে জুনিয়র চিকিৎসকদের! এরপরও অনড় থাকলে হারাবে জনসমর্থন!
সেখ ইবাদুল ইসলাম: গতকাল শুক্রবার আমার কর্মস্থল থেকে ট্রেনে করে আসছিলাম পথে দেখা হল এক প্রবীণ শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি কথায় কথায় জানতে চাইলেন আচ্ছা জুনিয়ার চিকিৎসকদের আন্দোলন এবং আর জি করের মর্মান্তিক ঘটনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে কতটা চাপে ফেলতে পেরেছে? আমি বললাম অবশ্যই চাপে পড়েছে কিন্তু এই চাপটা কলকাতা শহর কেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত সমাজের চাপ। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত সমাজ এখনো মমতার সঙ্গে আছে। এই কথার সঙ্গে বিশিষ্ট লেখক এবং শিক্ষক এবং বাংলার কিংবদন্তি সাহিত্যিক মোস্তফা সিরাজের জামাই সিরাজুল ইসলাম সাহেব একমত হলেন। তিনি স্বীকার করলেন এত আন্দোলন সত্ত্বেও যদি এখন ভোট হয় তাহলেও মমতা ২০০ এর বেশি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসবেন।
তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রবীণ এই শিক্ষক বললেন কন্যাশ্রী যুবশ্রী লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে শুরু করে গ্রাম বাংলার সার্বিক উন্নয়নে যে চিত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিগত ১০-১২ বছরে বাংলার মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন তার সুফল তিনি পাচ্ছেন। একইসঙ্গে তিনি একথাও স্বীকার করলেন আরজি করের ঘটনায় যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্দীপ ঘোষকে পুনরায় পোস্টিং না দিতেন তাহলে হয়তো আন্দোলন এত বড় হত না। কথার মাঝে আমি বলেছিলাম মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন ভাবে রাজনীতি করেন অর্থাৎ তার রাজনৈতিক যে দিশা সেটা অনেক সময় মনে হয় তিনি ভুল পথে যাচ্ছেন। আবার সেই ভুল পথ থেকেই তিনি ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। দার্জিলিং এর ঘটনাবলী কথা যদি মনে করা যায় অনেকেই ভেবেছিলেন গোরখা জন মুক্তি মোর্চার সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে মমতা ভুল করছেন। কিন্তু দেখা গেল মমতা সঠিক কাজ করেছেন।
কেন জানিনা আমার প্রথম দিন থেকেই মনে হচ্ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জুনিয়র চিকিৎসকদের এই আন্দোলন যে কোনদিন সামলে নেবেন! বৃহস্পতিবারের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর সবাই যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে কাঠগড়াতে দাঁড় করাতে চাইছেন ঠিক তখনই আমার মনে হয়েছিল এখান থেকেই হঠাৎই ঘুরে দাঁড়াবেন মমতা। কোন একদিন সকালে দেখা যাবে মমতা পৌঁছে গেছেন জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন মঞ্চে! আসলে মানুষের ভাবনা যে এভাবে সত্য হবে সেটা আমি ভেবে উঠতেই পারিনি। আজ সাড়ে এগারটার পরেই যখন আমার কাছে এই খবরটি এসে পৌঁছালো তখন খানিকটা বিস্মিত হলেও একেবারেই অবাক হয়নি। কারণ নামটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার কাছে সবই সম্ভব। ৩৪ দিন ধরে চলা জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন এক ধাক্কায় কেমন ভাবে একটি মাত্র কথাতেই শেষ করে দিয়ে গেলেন তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কোন রাজনীতিবিদ ভারতবর্ষে করতে পারবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে।
মেলালেন তিনি মেলালেন! রাজ্যের সাড়ে সাত হাজার জুনিয়র চিকিৎসকের আন্দোলনকে এক ধাক্কায় তিনি থামিয়ে দিলেন। শুধু থামালেন তা নয়, এতদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে সমালোচনা সমগ্র দেশ তথা বিশ্ব জুড়ে শুরু হয়েছিল তাও একদিনে কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে চিত্র পাল্টে গেল।
মমতা তো এলেন দেখলেন জয় করলেন কিনা এখনো পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। জুনিয়র চিকিৎসকরা কী করবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এরপর জুনিয়র চিকিৎসকরা আন্দোলন চালিয়ে গেলে সাধারণ মানুষের যে সমর্থন হারাবেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। জুনিয়র চিকিৎসকদের সব দাবি তিনি মেনে নেবেন বলে কথা দিয়েছেন, একজন রাজনীতিবিদ কথা দিলে সবটাই রাখেন এটা আমাদের ভারতবর্ষে বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে তিনি যেভাবে আন্দোলনকারীদের মঞ্চে গিয়ে পৌঁছেছেন। একজন মুখ্যমন্ত্রী হয়েও কোনরকমভাবে ইগো দেখাননি তারপরেও জুনিয়র চিকিৎসকরা যদি এই আন্দোলন অব্যাহত রাখেন তাহলে জনবিচ্ছিন্ন যে তারা হয়ে যাবেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।
এই পরিস্থিতিতে জুনিয়র চিকিৎসক সংগঠনের উচিত এখনই কর্মবিরতি থেকে সরে আসা এবং নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে সরব হওয়া। প্রয়োজন হলে এই দুনিয়ার চিকিৎসকদের উচিত হবে সিবিআই দফতরের সামনে ধরনায় বসা। কারণ মনে রাখতে হবে এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই দফতর অভিযান করবেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই এটা মিলিয়ে নেবেন এই রাজ্যের সিবিআই দফতরের সামনে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা যে অবস্থানে বসবেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। এই আন্দোলন এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবে যে এই রাজ্যে বিজেপির অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে।