“আপনারা রাস্তায় থাকলে আমাকেও পাহারাদার হিসাবে জেগে থাকতে হয়,আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এখানে আসিনি, আন্দোলনের সমব্যথী হিসাবে এসেছি। বড় দিদি এসেছি। আমাকে সময় দিন। ভাল থাকুন’’শনিবার সকালে জুনিয়র চিকিৎসকদের ধরনা মঞ্চে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান
বিশেষ প্রতিনিধি : গণআন্দোলনের অন্যতম নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে যে কোন রাজনৈতিক সংকটকেই সামনে থেকে মোকাবিলা করতে পারেন তা আবারও প্রমাণ করলেন। দীর্ঘ ৩৪ /৩৫ দিন ধরে চলা জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্ম বিরতি এবং আন্দোলন শেষ পর্যন্ত এক নিমেষে সমস্ত প্রচার নিজের দিকে টেনে নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সকালে নিজে চলে গেলেন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বসে থাকা জুনিয়ার চিকিৎসকদের ধর্না মঞ্চে যা ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে অনন্য হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানেই তার ফলিত রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।
শনিবার সকালে রাজ্য পুলিশের ডিজিপি রাজিব কুমারকে সঙ্গে নিয়ে ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চে পৌঁছে যাওয়ার পরেই খানিকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। তাঁরা কি করবেন ভেবে উঠতে পারেননি হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী কে দেখে খানিকটা ঘাবড়ে যান তারপরেই স্লোগান উঠতে থাকে we want justice। মুখ্যমন্ত্রী স্লোগান চলাকালীন সময়ে মাইক হাতে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। স্লোগান শেষ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করেন,‘‘আমার নিরাপত্তাজনিত বারণ থাকা সত্ত্বেও নিজে ছুটে এসেছি। আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাচ্ছি। ছাত্র আন্দোলন থেকে আমি উঠে এসেছি। কাল ঝড়জল হয়েছে। আপনারা যে ভাবে বসে আছেন, আমার কষ্ট হচ্ছে। ৩৪ দিন ধরে বসে আছেন। আমিও রাতের পর রাত ঘুমোইনি। আপনারা রাস্তায় থাকলে আমাকেও পাহারাদার হিসাবে জেগে থাকতে হয়।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করব। আমি একা সরকার চালাই না। সকলের সঙ্গে আলোচনা করব। যদি কেউ দোষী হন, শাস্তি পাবেন। সিবিআইকে অনুরোধ করব, দোষীদের ফাঁসি হোক। কেউ দোষী থাকলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেব। এটুকু বলতে এসেছি।’’
রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান বলেন, ‘‘আপনারা আমাদের ঘরের ভাইবোন। আমি কোনও অবিচার হতে দেব না। সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি নতুন করে তৈরি করা হবে। তাতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, পুলিশ থাকবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি ভেঙে দিলাম। নতুন করে তৈরি করা হবে। বাকি আপনাদের যা দাবি আছে, যদি সত্যি কেউ দোষী হয়, তারা শাস্তি পাবে। কেউ আমার বন্ধু বা শত্রু নয়। যাঁদের আমার বন্ধু বলছেন, আমি তাঁদের চিনিই না। প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁরা এসেছেন। সাধ্যমতো পদক্ষেপের চেষ্টা করব। আপনারা কাজে ফিরুন। আমি কোনও আপনাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করব না।’’
মমতা বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা চলছে। কোনও পদক্ষেপ আপনাদের বিরুদ্ধে করা হবে না। এখন আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এখানে আসিনি। আন্দোলনের সমব্যথী হিসাবে এসেছি। বড় দিদি এসেছি। আমাকে সময় দিন। ভাল থাকুন।’’
ধর্নামঞ্চে আন্দোলনকারীদের যা খাবার দেওয়া হচ্ছে, নির্বিচারে তা না খাওয়ার অনুরোধ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে আসা মানে নিজেকে ছোট করা নয়। বড় করা। এটা আমার শেষ চেষ্টা।’’
জুনিয়র ডাক্তারেরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁদের প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল নবান্নে। ৩২ জন সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু বৈঠক ভেস্তে যায়। ডাক্তারেরা বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার দাবি করেছিলেন। কিন্তু সরকার তাতে রাজি হয়নি। শনিবারের বারবেলায় এই আচমকা মুখ্যমন্ত্রীর আগমন জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকে আবার পুনরায় যে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে ছুটে গেলেন এরপর যদি চিকিৎসকরা কর্মবিরতি চালিয়ে যান তাদের তারা যে সাধারণ মানুষের আর সহানুভূতি পাবেন না সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মমতার সঙ্গে অন্য রাজনীতিবিদের এখানেই তফাৎ তিনি দেখালেন সমগ্র দেশের মানুষকে একটা গণ আন্দোলনকে কতটা মর্যাদা দেওয়া যায় এটা তিনি প্রমাণ করলেন।