আন্তর্জাতিক 

বাংলাদেশের সংরক্ষণ ব্যবস্থায় সংস্কার করার নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত! এবার কি শান্তি ফিরবে?

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশের ছাত্রদের দাবি মেনে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পক্ষে রায় দিল সে দেশের শীর্ষ আদালত। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চাকরি ও শিক্ষায় সমস্ত ধরনের কোটা তুলে দেওয়া হবে। সেই সিদ্ধান্তের উপর গত ৫ই জুন বাংলাদেশের হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন তীব্রতা পায় গত জুন মাস থেকে। সেই আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত কত সপ্তাহ থেকে কার্যত ধ্বংসাত্মক আন্দোলনে পরিণত হয়।

তীব্র হিংসার পরিপ্রেক্ষিতে এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ সরকার গত বৃহস্পতিবার থেকেই সমগ্র দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। শুক্রবার সকাল থেকে কারফিউ জারি করা হয় এবং দেশজুড়ে সেনাবাহিনী নামানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত শুনানির আবেদন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে সেই মামলার শুনানির শেষে রায় ঘোষণা করতে গিয়ে কোটা প্রথা বা সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার পক্ষেই রায় দিল সেই দেশের শীর্ষ আদালত।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রবিবার বাংলাদেশের সুপ্রিম দেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মোট সাত শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচ শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য। বাকি দুই শতাংশ থাকবে অন্য শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত। ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে বলেছে আদালত।

গত কয়েক দিন ধরে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ঢাকার রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সংঘর্ষে প্রাণ গিয়েছে বহু মানুষের। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১৫১। বাংলাদেশে শুক্রবার রাত থেকে কার্ফু জারি করেছে সরকার। যা এখনও চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে সেনা।

শুনানির পর বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দীন এএফপিকে বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হাই কোর্টের রায় বেআইনি ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে পাঁচ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। অন্যান্য শ্রেণির জন্য থাকবে আরও দুই শতাংশ সংরক্ষণ।’’

বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল এবং ৪৪ শতাংশ আসন সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। ১৯৭২ সাল থেকে এই নিয়ম চলে আসছিল। ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। ২০১৮ সালে সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। পরে সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। সেই আন্দোলনে গত কয়েক দিন রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল বাংলাদেশ। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বাংলাদেশে অশান্তি কিছুটা কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ