জেলা 

অভিষেকের নয়া ডায়মন্ডহারবার মডেল তৃণমূলকেই সমস্যায় ফেলতে পারে ! নওশাদের চাপেই ?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গত শুক্রবার ফলতাতে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে যে ৭০ হাজার মানুষ তাঁর কেন্দ্রে বার্ধক্যভাতার জন্য নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে রাজ্য সরকার এখনই টাকা পাঠাতে পারবে না। অভিষেক বলেন, ‘‘সরকার যবে দেবে দিক! তার আগে আমরা ডায়মন্ড হারবারের ৭০ হাজার মানুষকে বার্ধক্যভাতা দেব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এটাই ডায়মন্ড হারবার মডেল। কারও যদি গায়ে লাগে, তা হলে কিছু করার নেই।’’ তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ এ-ও বলেছিলেন যে, তাঁর সংসদীয় এলাকায় এক-দেড় লক্ষ সক্রিয় তৃণমূলকর্মী রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তিনি এই ভাতা দেবেন।

অভিষেকের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা । একথা মানতেই হবে তৃণমুল কংগ্রেসের আমলে বার্ধক্যভাতা কিংবা বিধবা পেতে হলে তৃণমূলের পঞ্চায়েত নেতাদের উপহার দিতে হয় । শুধু তাই নয় পঞ্চায়েত থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে গেলেও উৎকোচ দেওয়াটা নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে । এটা যারা ভুক্তভোগী তারা ভালভাবেই জানেন । এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অভিষেকের এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে চমক বলা যেতে পারে । তবে ৭০ হাজার পরিবারকে যদি এক হাজার টাকা করেও ভাতা দেওয়া হয় তাহলে মাসে সেই টাকার অংক ৭ কোটি , বছরে ৮৪ কোটি । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । তবে বলতে হয় তিনি যেসব প্রকল্প কিংবা নেতাকে অন্য দল থেকে ভাঙিয়ে আনছেন তাঁদের কাজ কোথায় ? তাছাড়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে ধরনের রাজনীতি করছেন তাতে স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের অন্য অংশের তৃণমূল কর্মী তো বটেই সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বঞ্চনা অভিযোগ দানা বাধবে । তার পরিণতি কী হবে ? সেটা কী ভেবে দেখেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রশ্ন উঠবে দল থেকে যদি ডায়মন্ডহারবারের মানুষদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে রাজ্যের অন্য লোকসভা কেন্দ্রের মানুষদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা কেন হবে না ? আর এই প্রশ্নের মুখেই তৃণমূলকে অস্বস্তিতে পড়তে হতে পারে । এমনও হতে পারে রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ তৃণমূলের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে? তার পরিণতিতে কী হবে ?

Advertisement

অবশ্য রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের আর একটি মত হল, যেভাবে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট্রের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন, তিনি ডায়মন্ডহারবার লোকসভায় দাঁড়াবেন এবং অভিষেককে হারাবেন । ৫৬% মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাস ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রে। আর ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হয়েছিলেন মুলত বাঙালি মুসলিম ভোটের জোরেই । দুঃখের হলেও সত্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ে ডায়মন্ডহারবার মডেল কতটা উন্নত তা কলকাতা পুরসভার এলাকার মেটিয়াবুরুজেই গেলেই সাধারণ মানুষ টের পাবেন । অথচ এই এলাকার মানুষ অভিষেককে ঢেলে ভোট দিয়েছেন । তা সত্ত্বে এই এলাকার রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে পানীয় জলের ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে এমন একটি জায়গা আছে তা একুশ শতকে কল্পনা করা অসম্ভব । তাই নওশাদ ভোট দাঁড়ানোর কথা বলার পরেই এবার আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে ভোট নেবার চেষ্টা করছেন অভিষেক ?

তাই যে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয় কিংবা এখনই করা হচ্ছে না সেই প্রকল্পের কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ ভোট আদায়ের কৌশল করা হচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত । তবে একথা মানতেই হবে সাধারণ মানুষ হয়তো খানিকটা এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে । কিন্ত সার্বিক বিচারে লোভ দেখিয়ে ভোট নেওয়া হলে ভবিষ্যতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ।

অভিষেকের প্রকল্পের বাস্ততা  : অভিষেকের নতুন ডায়মন্ডহারবার মডেল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। প্রথমত একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে এই ধরনের  কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে চালানো সম্ভব নয় । এর ফলে যে আবেগ নিয়ে তিনি এই ঘোষনা দিয়েছেন তা বুমেরাং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । আর এই ধরনের উদ্যোগ নিয়ে আদালতে মামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।

একজন সাংসদ বা রাজনীতিবিদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় মানুষের সঙ্গে জনসংযোগের মাধ্যমে । আর পঞ্চায়েত স্তরের সাধারণ কর্মীদের আচরণে। এর প্রভাব সরাসরি মানুষের মধ্যে পড়ে । ভাতা দেবেন অথচ সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ না করে এভাবে অর্থ দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা হলে জেতার নিশ্চয়তা থাকে না । অন্যদিকে নওশাদকে আটকাতে গিয়ে যদি এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয় তাতে হয়তো সাময়িক সাফল্য পাওয়া গেলেও, সার্বিক সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয় । ডায়মন্ডহারবার এলাকায় নওশাদের জনপ্রিয়তা খুব ভাল । এই পরিস্থিতিতে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করে নওশাদকে হারানো গেলেও বাস্তবে একটা ক্ষত চিহ্ন থেকে যাবে । যা ভবিষ্যতে বাংলার সামনে চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়ে যাবে ।

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ