কলকাতা 

Aliah University: আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে উঠেছেন, প্রতিবাদী হন পথে নামুন, প্রতিবাদেই পারে বাঁচাতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সাম্প্রতিককালে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা এবং বাংলার জনরব নিউজ পোর্টালও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক খবর করেছে। একটা মহল থেকে বারবার দাবি করা হয়েছিল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমস্যার নেপথ্যে নাকি তৎকালীন উপাচার্য মহম্মদ আলী সাহেব রয়েছেন। আমরা আশা করেছিলাম মহম্মদ আলী সাহেব উপাচার্যের পদ থেকে সরে যাওয়ার পর অবশ্যই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব গতি নিয়ে আবার জেগে উঠবে এবং বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের তো বটেই বাংলার সংখ্যাগুরু সমাজের মধ্যেও আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও মূল্যবোধ শিক্ষার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করবে। কিন্তু মহম্মদ আলীর বিদায়ের পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি বরং আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি দেওয়াকে কেন্দ্র করে আবার নতুন করে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছে ।শুধু তাই নয় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যে সমস্যা ছিল সেই সমস্যা এখনো নাকি বিদ্যমান বলে পড়ুয়ারা দাবি করছেন, গবেষকদের দাবিও একই। এই প্রেক্ষাপটে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক আমাদের কাছে এই নিবন্ধটি পাঠিয়েছেন আমরা জনস্বার্থে তা প্রকাশ করছি।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যায়তন থেকে অচলায়তনে পরিণত হয়েছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যতটা দুরবস্থা হতে পারে আলিয়া এখন সেই পর্যায়ে। এই সমস্যা এক-দু দিনের নয়, দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জিভূত সমস্যা। দীর্ঘদিনের জমা হওয়া শ্যাওলা যেমন নদীর গতিপথ বন্ধ করে দেয়। আলিয়ার সমস্যা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে বন্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইউ. জি. সির প্রতিনিধি দল ১২ বি অনুমোদন দিতে ভিজিট করে ২০১৮ সালে তারপর তিন বছরের মধ্যে ন্যাক ভিজিট করানোর নির্দেশ দিয়ে যান। সেই নির্দেশের চার বছর পার হয়ে গেলো। আমরা দেখেছি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে ন্যাক ভিজিট না করায়, ইউজিসি তাঁদের অনুমোদন বাতিল করেছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কি ইউজিসি অনুমোদন বাতিলের পথে হাটছে? আলিয়ার সমসাময়িক ও পরবর্তীতে গড়ে উঠা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাক ভিজিট বাকি নেই। অভিযোগ উঠছে দীর্ঘ তিন বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো উন্নয়ণ হয়নি। দেওয়া হয়নি দপ্তরের পক্ষ থেকে উন্নয়ণ বাবদ প্রাপ্য টাকাও।

Advertisement

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শ্রীবৃদ্ধির জায়গা তার গবেষণা। কিন্তু দুঃখের বিষয় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১ বছর ধরে পিএইচডি গবেষণায় ভর্তি বন্ধ হয়ে আছে। আলিয়ার অনেক ছাত্র-ছাত্রীর জে আর এফ এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, অথচ গবেষণায় সুযোগ পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে ২৮০ জনের শিক্ষক পদ তৈরি হয়। তারমধ্যে এই পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৯০ জনের মত। এখনও ৯০ টি শুন্যপদে নিয়োগ বাকি। বঞ্চিত শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষাকর্মী, বেহাল দশা শিক্ষার। বিল্ডিং পরিকাঠামোর অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারছে না সোশ্যাল সায়েন্স এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন, দর্শন, সমাজবিদ্যা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি।

বিশ্ববিদ্যালয় বিগত এক বছর ধরে আর একটি সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, হোস্টেলের জমি হস্তান্তর কেন্দ্রিক বিবাদ। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মোট পড়ুয়া প্রায় সাত হাজার সেখানে হোস্টেলের সুযোগ পায় প্রায় ১৩০০ মত শিক্ষার্থী। পার্কসার্কাস ও তালতলা ক্যাম্পাসের জন্য কোনো হোস্টেল ও খেলার মাঠ নেই। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ ভর্তি হয় প্রান্তিক জেলার দরিদ্র মেধাবী সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা। তাহলে এদের হোস্টল থেকে বঞ্চিত করে কি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না? ২০১৬ সাল থেকে ওই জমিতে প্রস্তাবিত পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য দফায় দফায় আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব গেছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কেন নিজেদের জমি অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেবে? যদি একান্তই দিতেই হয়, তা আলোচনার মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আর একটি অন্যতম সমস্যা এই মূহুর্তে নেই পূর্ণ সময়ের উপাচার্য। দীর্ঘ ন’ মাস ধরে একজন আংশিককালীন সময়ের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। তিনি মাদ্রাসা বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদেই আছেন। যদিও বর্তমান উপাচার্যের একাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তিনি প্রফেসর নন, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তারপরেও তিনি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য? প্রাক্তন উপাচার্যের অবসরের দীর্ঘ ন’ মাস হয়ে গেলেও এখনও নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য গঠিত হয়নি কোনো সার্চিং কমিটি।

দীর্ঘদিন ধরে অজস্র সমস্যায় জর্জরিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তাতে সমস্যা নিরসনে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই সরকারের। অথচ এই সরকার সংখ্যালঘুদের ভোটেই ক্ষমতায় বসেছেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষানুরাগী, সংখ্যালঘু দরদী মানুষজনকে এগিয়ে আসতে হবে, প্রয়োজনে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, পথে নামতে হবে। নাহলে বাঁচানো যাবে না সংখ্যালঘু সমাজের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান এই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে। কেন না এখানে রক্ষকেই ভক্ষক হয়ে উঠেছে। । আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আজও কনভোকেশন হয়নি। আরও সমস্যা – সেন্ট্রাল লাইব্রেরি নেই, বিশ্ববিদ্যালয় কোম্পানির বকেয়া বিল মেটাতে পারছে না যার ফলে কোম্পানির মালিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ১০ টি মামলা করেছে। ক্লাসরুমের অভাব। একটি বর্ষের ছাত্ররা ক্লাস করে, তো আর একটা বর্ষের ছাত্ররা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে পরবর্তী ক্লাসের জন্য। অনেক বিভাগের এই সমস্যা। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিল্ডিং, ক্লাসরুম, হোস্টেল, লাইব্রেরি, দরজা জানালা, কিছুই মেরামত হয়নি এই পর্যন্ত।ল্যাব গুলি প্রয়োজনীয় ইনস্ট্রুমেন্ট এর অভাবে ধুঁকছে।

নানান সমস্যার সমাধান করতে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়ে আসুন। সবাই তাকিয়ে রয়েছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে যারা ষড়যন্ত্র করছেন তাদের পতন সুনিশ্চিত হক । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর সরকার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে কাজ না করলে সাধারণ মানুষ ভোটব্যাংকের হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে অন্য ইতিহাস রচনা করতে দ্বিধা করবেন না। এখনো সময় আছে সাধু সাবধান। বাঙালি মুসলমান সমাজের আধুনিক শিক্ষা প্রসার ঘটাতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গতি সচল রাখতে আপনাকে, আমাকে, পথে নামতে হবে, পথেই পারে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ