জেলা 

কৃষ্ণনগরে একান্নবর্তীর চমক আইসল্যান্ডের হলগ্রিমস চার্চ

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

দীপাঞ্জন দে: দুর্গাপুজোয় কৃষ্ণনগরে ঘুরতে এসে ইউরোপের নিও-গথিক স্থাপত্যশৈলীর এক জলজ্যান্ত উদাহরণ দেখে অনেকেই স্তম্ভিত হচ্ছেন। হ্যাঁ, আইসল্যান্ডের বিখ্যাত হলগ্রিমস চার্চের দেখা মিলছে কৃষ্ণনগরে। আইসল্যান্ডের অন্যতম বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক এটি। এমনিতেই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। তারপর ২৪৪ ফুট (৭৪.৫মিটার) যার উচ্চতা। গির্জার ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় প্রথমে গির্জাটি কম লম্বা হবে বলেই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু চার্চ অফ আইসল্যান্ডের নেতারা একটি বড় চূড়া চেয়েছিলেন, যেটি আইসল্যান্ডের ক্যাথলিক চার্চ ক্যাথেড্রালকে ছাড়িয়ে যায়। অবশেষে এর উচ্চতা এমনই হয় যে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হলগ্রিমস চার্চকে দেখা যায়। এহেন হলগ্রিমস চার্চেরই দেখা মিলল নদিয়ার কৃষ্ণনগরে।

কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঘিরে প্রতিবছরই উন্মাদনা তুঙ্গে থাকে, যেখানে দুর্গাপুজো অনেকটাই ফিকে পড়ে যায়। হাতে গোনা দু-একটি বড় পুজো এবং কয়েকটি ঐতিহ্যমন্ডিত পুজো— এই হল কৃষ্ণনগরের দুর্গাপুজোর চরিত্র। সেই অভাববোধ থেকেই একদিন চায়ের দোকানের আলোচনায় কয়েকজন বন্ধু কৃষ্ণনগরে বড় করে একটি দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক ভেবেচিন্তে একটি নামও দেওয়া হয়— পুরোদস্তুর বাঙালিয়ানাকে ধরার চেষ্টা করা হয়। বাঙালি পরিবারকে একসঙ্গে বেঁধে রাখার ভাবনা থেকেই ‘একান্নবর্তী’ নামটির জন্ম হয়। ২০২০ সাল থেকে শুরু হয় একান্নবর্তীর দুর্গাপুজো। প্রথম বছর তাদের বাজেট ছিল ৯ লক্ষ টাকা, দ্বিতীয় বছর যা বেড়ে হয় ১৫ লক্ষ টাকা। আর তৃতীয় বর্ষে অর্থাৎ ২০২২ সালে একান্নবর্তীর দুর্গাপুজোর বাজেট এক লাফে বেড়ে হয় ৩৪ লক্ষ টাকা। হবে নাই বা কেন? বিশাল বড় আয়োজন যে! দুর্গাপুজোয় এত বড় আয়োজন কৃষ্ণনগর আগে কখনো দেখেনি।

Advertisement

কৃষ্ণনগরের বুকে আইসল্যান্ডের বিখ্যাত হলগ্রিমস চার্চকে গড়ে তুলেছে ক্লাব একান্নবর্তী। আর এই নির্মাণ হয়েছে বেশ দৃষ্টিনন্দন। মণ্ডপের আলোকসজ্জাও বেশ সুন্দর। মণ্ডপের ভিতরটিও গির্জার আদলেই গড়া। আর বিশাল গর্ভগৃহে রয়েছে মহাদেবের একাধিক রূপ। দুর্গা প্রতিমাটিতেও রয়েছে চমক। সেটি আনা হয়েছে কলকাতা কুমারটুলির বিখ্যাত প্রতিমা শিল্পী মোহনবাঁশী রুদ্রপালের ওয়ার্কশপ থেকে। ২০২২ সালে একান্নবর্তীর পুজোর একাধিক চমকের মধ্যে অন্যতম হল ক্লাবের নিজস্ব পুজোর গানের এলবাম। বাংলা গানের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের নিয়ে তারা এই অ্যালবামটি করেছেন।

হলগ্রিমস চার্চের অনুকরণ এমনভাবেই করা হয়েছে যে, গির্জার সামনে লেইফ এরিকসনের মূর্তিটিও তারা স্থাপন করেছেন। আইসল্যান্ড তো বটেই, সমগ্র ইউরোপের একটি সুউচ্চ চার্চ হল ‘হলগ্রিমস’। সেটিকেই হুবহু তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এই চার্চ একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সেখানে একজন পর্যটক ভিউয়িং ডেকে উঠতে পারেন এবং আশেপাশের পাহাড় দেখতে পারেন। গির্জার ভিতরের অংশ প্রায় ১৮ হাজার বর্গফুট। এটি একটি বিখ্যাত লুথারিয়ান প্যারিস চার্চ। হলগ্রিমস চার্চ তৈরি হতে প্রায় ৪১ বছর সময় লেগেছিল। ১৯৪৫ সালে এর নির্মাণকার্য শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৯৮৬ সালে। ২০২২ সালে কৃষ্ণনগরের একান্নবর্তীর পুজোয় এহেন হলগ্রিমস চার্চ দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন। আয়োজকরা এতে খুবই খুশি। এই পুজো ইতিমধ্যে একাধিক পুরস্কারও জিতে নিয়েছে।

লেখক: অধ্যাপক, চাপড়া বাঙ্গালঝি মহাবিদ্যালয়, নদিয়া।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ