বিনোদন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য 

শারদীয়া উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি ও গল্পকার কাজী দিলরুবা রহমানের এক গুচ্ছ কবিতা

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

দুই বাংলায় শারদীয়া উৎসব খুবই জনপ্রিয়। আর এই উৎসব উপলক্ষে দুই বাংলা জুড়ে প্রকাশিত হয় অসংখ্য সাহিত্য পত্র পত্রিকা। এইসব পত্রিকাতে দুই বাংলার বিশিষ্ট কবি লেখক গল্পকারদের সেরা লেখা প্রকাশিত হয়। @বাংলার জনরব বেশ কয়েক বছর ধরে উৎসব সংখ্যা প্রকাশ করছিল। কিন্তু সম্প্রতি লকডাউনের পর থেকে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাই বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের লক্ষ্যে আমরা মহালয়ার দিন থেকে প্রকাশ করব আমাদের সাহিত্য সংখ্যা অনলাইনে। মহালয়ার ঠিক আগের দিন আমরা প্রকাশ করছি বাংলাদেশের বিশিষ্ট গল্পকার ও কবি কাজী দিলরুবা রহমানের একগুচ্ছ কবিতা। আশা করি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে। সবাইকে আগাম শারদীয়া উৎসবের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। সম্পাদক।

_________________________________________________

 

সমুদ্র কথন

কাজী দিলরুবা রহমান

বেঁচে আছি ভালোভাবে

Advertisement

এই এখানে নির্ভিক দাঁড়িয়ে

সমুদ্রের বেলাভুমিতে

লুটিয়ে পরা ঢেউ আবার চলে যায়

আসা-যাওয়ার মধ্যখানে

থেকে যায় বালু সমান

এক টুকরো সুখের জমি যেন

ডুবে যায় একে একে জলে

ভেসে উঠে সকালের ঘুমের মত

কখনো সূর্যদয়ের বেশে

এক ফালি জীবন জমি

ভয়কে হারিয়ে

বেঁচে যায় মরে যাওয়া কেউ

ঢেউ ছুঁয়ে ভেসে থাকে

মানুস সমুদ্র স্রোতে ভাসে না

তলিয়ে যায় বহু গভীরে

ফিরে না কোন ভোরে

কখনো সমুদ্র ক্রোধে ফুটে

গভীর গর্জনে শঙ্খের মুখে

কানে মধুর লাগে

সেটুকু সুখ পেতে কত জন

ছুঁটে আসে সমুদ্রে

পাড়ের মানুসগুলো বিসর্জনে চলে

সমুদ্র জলোচ্ছাসের সংগে

তারাও এমনি করে দাঁড়িয়ে

থাকে হয়তো

ঐ টুকু সুখ পেতে।কেউ কেউ

জীবন ভরে সুখ পায়

কেউ কেউ হাড়িয়ে যায়।

 

  (২)

বাস্তবিক

কাজী দিলরুবা রহমান

একদিন আমিও চলে যাবো সব কিছু রেখে

প্রত্যহের মতো পরনের পরিধেয় থরে থরে

গুছানো রবে মরা কাঠের আলমারিতে

আমার টুথ ব্রাশ যথাস্থানে কিছু দিন স্মৃতি

হয়ে প্লাস্টিক হোল্ডারে একাকী দিন কাটাবে,

সোবার খাটটি বেশ বড় ভয়ে কেউ সোবেনা

হয়তো, বেঁচে থাকতে আমারও মৃতদের শয্যা

ভয় হতো এসব অমূলক জানি তবুও ভয়

এক ধরনের অনুভূতি। রোজকার হাটার পথে

পথিক কুকুর জড়িয়ে যেত নিত্য সঙ্গি,

কোন মুহূর্ত থামাবে না ওদের পথ চলা।

বাজারের ব্যাগ অন্য কারো হাতে, প্রতিদিনের

মতো লোকজন ব্যাংকে যাবে,

আমার অনুপস্থিতি জানতে চাইবে না কেউ।

চারিপাশের শব্দ পতন

বৃষ্টিহীন দিনের অসহ্য কিম্বা বৃষ্টিময় মুগ্ধতা

আমাকে বিরক্ত কিম্বা আনন্দ কোনটা দিবে না।

ঋতুগুলো গড়াবে আপণ নিয়মে আমার মরে

যাওয়া ওদের নিয়মে বাধ সাধবেনা।ফুল গাছে

কেউ আর পানি দিবেনা একদিন ওরাও মরে যাবে।

        (৩)

উচ্চতা পরিমাপক

কাজী দিলরুবা রহমান

 

একদিন সন্ধ্যার ম্লান রূপ-কল্প

অস্তিত্বকে গ্রাস করতো সূর্য গ্রহন

হাস-পাস সময় কেটে যেতে।

দিন শেষে ঘন অন্ধকারের ভয় কেটে

এখন অপেক্ষা শুধু আরো একটি

সুন্দর ভোরের,আলোর স্পষ্টতায় পৌঁছাতে

রাতের অন্ধকার নদীতে সাঁতার কাটার

বিকল্প নেই আর।কেন জানি তারুন্যের

এক রাশ সজীব স্রোতে ভেসে যায় দিনগুলি

ভাবনা হীন, তাড়না বিহীন অদ্ভুত কোন

সুর বয়ে নিয়ে যায় নিজেকে নিজে

দারুন উপভোগ্য এই সব সময়

পড়ালেখার দায়িত্ব নেই, সংসারে খুব বেশী

সন্তানের সু বন্টনের বাড়তি চিন্তা নেই

কেবল মৃত্যু ভয়ের মুখে লাগাম দিয়েছি

তাই হয়তো সত্য বলতে দ্বিধানিত্ব নই আর

যা কিছু ভন্ডামী আর অতিরঞ্জিত মনে হয়

প্রতিবাদে অথবা অবহেলায় সরে যাই

সেখান থেকে।এটা হয়তো সম্ভব অতি

লোভ নেই বলে।আমরা যত উঁচুতেই

উঠি না কেন অন্যের উচ্চতা আমাদের

কখনো সুখী হতে দেয় না লোভের কারনে।

মৃত্যুকেও সহজ করে বরণ করতে পারিনা

পার্থিব ভোগের দায় ছাড়তে চাই না বলে।

      (৪)

জীবনের সংগ্রাম

কাজী দিলরুবা রহমান

গ্রীষ্মের দাব দাহে পোড়া তপ্ত

শরীর মন জগতের সব জীব

শান্ত হয় পেয়ে আষাঢ়ী বৃষ্টির

ফোঁটা, ফসলী ভুমি বয়ে যায়

জলের প্লাবনে, পলি পরে মাঠে

কৃষকের চাষাবাদ নরম জমিতে

পুকুর-নালা,বিল-খাল পেরিয়ে

নদী মুখ হয়ে বিলিন সাগরে

যাত্রার পথ সূর্যের তাপে বাষ্প

হয় সাগরের জল, জন্ম নেয়

একটু একটু মেঘ টুপটাপ ঝরে

পরে আবার ভুমি বক্ষে বর্ষার

মেঘমালা অশনি আঘাত হানে

তুমুল বৃষ্টির উম্মাতাল উম্মাদনে,

বেসামাল মেঘের জল নিয়ম ভেঙ্গে

নেমে আসে বণ্যা ভেসে যায় সব

প্রকৃতিকে অভিশাপ দিয়ে নেই লাভ

জেনে গেছে বানভাসী মানুষ

দৃঢ় মনে দাঁড়ায় ঘুরে বেঁচে থাকার

স্বপ্ন নিয়ে বাঁধে ঘর, চষে জমি

ফসলে আমোদে মাতে বেলাভূমি।

          (৫)

‘নদীর বনে কাশফুল’

  কাজী দিলরুবা রহমান

কোন এক কাশভোরে তোমাকে

দেখেছি আমি কবিতার মতো করে

দুলেছিলে হাওয়ায় ছন্দে আনন্দে

ভরেছিল মন এক আকাশ শুভ্র মেঘে।

শরৎ শেষে মিলিয়ে গেলে বহু দিন

হবে দেখিনি তোমাকে আর তো,

ভুলে যাই মাঝে ঋতু আসে ঋতু যায়,

ভুলে যাই তোমাকে শীতের কুঞ্জনে,

গ্রীষ্মের তাপে পোড়া মন বর্ষায় কেঁদে

হয় সারা, বিষণ্ণ আকাশ এলোমেলো

বাতাস উড়িয়ে নেয় স্বপগুলো,তবুও

পাখি উড়ে আকাশ ময়,জীবন চলে

শান্ত নদীর বেগে কেউ ফিরে না ফেলে

আসে পথে, ফিরে আসে শরৎ যখন

সাদা ফুল নেচে উঠে নদীর বনে

ফিরে না স্রোত সময় যে বয়ে যায়

মানুষের মন আর চোখ আগামীর

পথে, অবসরে যায় না তাকে ধরে

রাখা, পুরোনে কাপুড়ে গন্ধ থাকে

কিন্তু বেশী দিন যায় না পরা,

অবসরে ভাজ খুলে চোখ মেলে

ক্ষণিক নিবৃত্ত হয় মনের পিপাসা

____________________________

কাজী দিলরুবা রহমান, ঢাকা,বাংলাদেশ।

 

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ