কলকাতা 

১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন জাতীয় পতাকা তুলতে গেলে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা হামলা করতে পারেন আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিলেন রাজ্যের বিরোধীদলের একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী, জাতীয় পতাকা তুলতে নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন কেন? জানতে হলে ক্লিক করুন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বিশেষ প্রতিনিধি : শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যাচার এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছে যে স্বাধীনতা দিবসের দিনে পতাকা তুলতে ভয় পাচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলের একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষ বিধায়ক পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী।

আগামী ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন যাতে নির্বিঘ্নে জাতীয় পতাকা তুলতে পারেন তার জন্য সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী। চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেছেন স্বাধীনতার 75 তম বর্ষে যখন সমগ্র দেশ জুড়ে হর ঘর মে তেরেঙ্গা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে ঠিক তখনই পশ্চিমবাংলার একজন বিরোধীদলের বিধায়ক হিসাবে তিনি পতাকা তুলতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ গত বছর ১৫ ই আগস্ট এর দিন বিধায়ককে জাতীয় পতাকা তুলতে বাধা দেওয়া হয়েছিল এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের একাধিক নেতা কর্মীর উপর গত বছর হামলা হয়েছিল বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন। একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১৫ই আগস্ট পতাকা তোলার জন্য তাাঁর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

Advertisement

কয়েকদিন আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে জাতীয় পতাকা তুলতে বাধা দিয়েছিল তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা বলে অভিযোগ তাই নিয়ে রাজ্যজুড়ে বিজেপি ক্ষোভ প্রকাশ করছে মিছিল করছে। এই প্রেক্ষাপটে, নওশাদ সিদ্দিকীর এই অভিযোগ রাজ্য তো বটেই দেশজুড়ে চাঞ্চল্য পড়েছে। একজন বিধায়ক যখন নিজেই জাতীয় পতাকার তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা দাবি করছেন তখন স্বাভাবিক নিয়মেই পশ্চিমবাংলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অন্যদিকে এই রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন নিরব কেন তা নিয়ে ও জনমানষে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত এখুনি তার কর্মীদেরকে সংযত করা না হলে আগামী দিনে এই রাজ্য থেকে তৃণমূলের  বিদায় শুধু সময়ের অপেক্ষা হয়ে দাঁড়াবে।

 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাঠানো বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর ইংরেজিতে লেখা চিঠি র বাংলা অনুবাদ পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলো।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

ভারত সরকার

নয়াদিল্লি

 

বিষয়: ১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা দিবসে নাগরিকদের জাতীয় পতাকা উত্তোলনে তৃণমূল কংগ্রেসের বাধাদান থেকে জরুরী ভিত্তিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আবেদন

প্রধানমন্ত্রীজী,

স্বাধীনতার ৭৫ তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করি সেইসমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যারা লড়াই করেছেন দেশের মুক্তির জন‌্য। আমি স্মরণ করি ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী তাদের মহান চিন্তাধারাকে। আমাদের কাছে এটি অতি আনন্দের ও গর্বের বিষয় যে আমরা স্বাধীনতার ৭৫ তম বার্ষিকী উদযাপন করছি। এই উপলক্ষে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের “হর ঘর তিরঙ্গা” কর্মসূচী, যে নোটিশটি ৮ই আগষ্ট ২০২২ তারিখে জনসমক্ষে ইস্যু হয়েছে সেটা দেখেছি।

অত্যন্ত বেদনা ও ক্ষোভের সঙ্গে জানাই যে গতবছর ১৫ই আগষ্ট আমার বিধানসভা এলাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে (বারুইপুর পুলিশ জেলা) তৃণমূল কংগ্রেসের আশ্রিত সমাজবিরোধী-দুষ্কৃতিরা আমাকে বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন বাধা দিয়েছিল। তারা আমাদের কর্মী-সমর্থকদেরও বিভিন্ন গ্রামে বলপূর্বক বাধা দিয়েছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন কর্মসূচীতে। তারা জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল; জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সময়ও বাধা দিয়েছিল। স্থানীয় পুলিশ থানাতে জানানো সত্ত্বেও তারা দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

এবছর ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনও এই দুষ্কৃতিরা বাধা দিয়েছে। তারা বহু স্থানে জাতীয় পতাকা তুলতে দেয়নি, জাতীয় সঙ্গীত গাইতেও বাধা দিয়েছে। আইএসএফ সমর্থকদের মারধর করা হয়, তাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়, এমনকি গুলিও চালানো হয়। এইসব ঘটনাগুলো স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব মোদাস্সের হোসেন পিতা: প্রয়াত মোহাত আলি, বাহারুল ইসলাম পিতা: প্রয়াত আবদুল হাকিম মোল্লা, আওছান মোল্লা পিতা: জোনাপ মোল্লা, আবুল খায়ের গায়েন পিতা: প্রয়াত আইজল গায়েন-এর নেতৃত্বে হয়েছে। এরা তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কাইজার আহমেদ মোল্লা পিতা: কবির আহমেদ মোল্লার নির্দেশে এই অপকর্ম করেছে।

গতবছর ২রা মে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার পর থেকেই রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীরা বিরোধীদলের ওপর লাগাতার আক্রমণ ( শারীরিক হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি) করে চলেছে। বারুইপুর পুলিশ সমেত বিভিন্ন থানায় বহু অভিযোগ করা সত্ত্বেও কোন সুরাহা হয়নি। আমরা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে চিঠি দিয়েছি। কমিশনের একটি দল কয়েকমাস আগে কিছু স্থান পরিদর্শন করেছে। আমি আশা করি কলকাতা হাইকোর্ট আমাদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন।

গতকালও কাইজার আহমেদের দলবল আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা করেছে এবং খুনের হুমকি দিয়েছে। গতবছরের মতো এবারও স্বাধীনতা দিবস পালনে বাধা দেবে বলে শাঁসিয়েছে।

গতবছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে ঐ এলাকার মানুষদের গ্রামে, গ্রামে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিন।

আপনাকে স্বাধীনতা দিবসের আগাম শুভেচ্ছা।

 

জয় হিন্দ

ধন্যবাদসহ

মোহাম্মদ নওসাদ সিদ্দিকী

বিধায়ক, ভাঙড় বিধানসভা

চেয়ারম্যান, আইএসএফ


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ