জেলা 

বিবেকবর্জিত মানসিকতা সব ক্ষতির মূলে’, বিবেক জাগানোর ডাক দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

১৫ই জুন, ২০২২ মালদা: জামাআতে ইসলামী হিন্দ, মালদা জেলার উদ্যোগে রাজ্যজুড়ে পরিচালিত ক্যাম্পেইন ‘জাগ্রত বিবেক, মানবিক সমাজ’ উপলক্ষে মালদা প্রেস কর্নারে অনুষ্ঠিত হল সাংবাদিক সম্মেলন। জামাআতের জেলা সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান,  মানবিক মূল্যবোধের নিরিখে সভ্য সমাজ গড়ে ওঠে। সমাজের মানবিক মুখ যদি ঘুণে ধরা হয় তাহলে সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। যদি রাষ্ট্রযন্ত্র মানবিক মূল্যবোধের আধারে দেশকে পরিচালিত না করে তাহলে রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নয়ন হওয়া সম্ভবপর নয়।

রাষ্ট্রের ও রাজ্যের শাসকগোষ্ঠীর সর্বাধিক দায়িত্ব হল মানুষের মানবাধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। অত্যাচারের অবসান ঘটানো। অন্যায়ের প্রতিকার করে ন্যায়কে সুনিশ্চিত করা। আইনের অনুশাসনকে দৃঢ়ভাবে বলবৎ করা। আইনের অনুশাসন সবাইকে মেনে চলতে হবে। শাসক ও নাগরিক সমাজ সবাইকে।

Advertisement

সমাজের মানবিক চেহারা অর্জনের জন্য উপরোক্ত কার্যকর পন্থা বাস্তবায়নেই কেবল সুশৃঙ্খল সমাজ গঠন সম্ভব হবে -এমন ধারণা করা যায় না। নেতিবাচক সকল খারাবি ও ভ্রষ্টতাকে উৎখাত করতে হবে। জাতপাত, বর্ণবাদ, অস্পৃশ্যতার মূলোৎপাটন একান্ত দরকার। ঘৃণার রাজনীতিকে সর্বক্ষেত্রে রোধ করতে হবে। হিংসা, বিদ্বেষের প্রচার বন্ধ করতে হবে। ধর্মীয় মহাপুরুষদের অবমাননাকে প্রশ্রয় দেওয়া অপরাধতুল্য। কেননা, এতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি হয়। দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরিবেশ তৈরি হয়। যারাই ধর্মীয় মহাপুরুষদের কটূক্তি করবে তাদের দেশের প্রচলিত দণ্ডবিধির আওতায় এনে বিচার করতে হবে। নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দাল পয়গম্বর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি অবমাননাকর কটূক্তি করে মুসলিমদের শুধু ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেননি, সারা বিশ্বে ভারতের মর্যাদাকে নষ্ট করেছেন। উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার দিয়ে সমাজকর্মী জাভেদ আহমেদের বাড়ী ধুলিস্যাৎ করার ঘটনা বেআইনী ও সংবিধান বিরোধী। বিভিন্ন জায়াগায় বুলডোজার দিয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়ী-ঘর ধ্বংসের ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বুলডোজার ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের বাড়ী-ঘর ধ্বংস করা ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপ ছাড়া কিছু নয়। কেন্দ্রীয় সরকার এবং দেশের শীর্ষ আদালতকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সাংবিধানিক পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

ধর্ম, ভাষা, জাতপাত ও বর্ণের ভিত্তিতে যেকোন প্রকার বৈষম্য মানবতাকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা, সহিংসতাকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে। তবেই দেশে শান্তি বজায় থাকবে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা, তাদের জীবন-জীবিকার স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে নাগরিকত্ব প্রদান এবং নাগরিকত্ব বর্জনের যেকোন আইনি বিধানকে মান্যতা দেওয়া মানবতাবিরোধী কাজ।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গণপিটুনি, এনকাউন্টারে হত্যার ঘটনা ঘটছে। এটি নিন্দনীয়। খাদ্য ও পোশাকের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হচ্ছে। পরিণামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ ও বিদ্বেষ বাড়ছে। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে ঔপনিবেশিক দেশদ্রোহী আইনের ব্যবহার ও পুনর্বিবেচনাকে পরিত্যাগ করতে হবে। এই আইন স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়। সভ্য সমাজে এই আইন চলতে পারে না।

মনে রাখতে হবে যে, সংখ্যালঘুদের মনে ভীতির সঞ্চার করে, তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে দেশ এগোতে পারে না। এতে বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে বাধাগ্রস্ত হয় অর্থনীতিবিদরা সেই হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। সরকারকে এ বিষয়ে সংবেদনশীল হতে হবে।

জামাআতে ইসলামী হিন্দ সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছে। ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ কাঠামো গড়ে তোলার দাবি সরকারের কাছে রাখছে। ভ্রাতৃত্ব, ভালবাসা ও প্রেমের বন্ধনে সবাই যেন একে অপরকে আপন করে নেয় — জামাআত সেই কামনা করে। সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা সর্বত্র করতে হবে, যাতে সুস্থ সমাজ গড়ে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, জামাআতের পক্ষ আমাদের দাবী হল-

সাম্প্রদায়িক রাজনীতি-মুক্ত দেশ গড়ে উঠুক।

• ঘৃণা ও ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা হোক।

• আইনের অনুশাসন কায়েম করা হোক।

• চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মান্যতা দিতে হবে।

• দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ প্রশাসন।

• সম্পদের সুষম বণ্টন।

• অশ্লীলতা ও যৌন উৎচ্ছৃঙ্খলাকে বন্ধ করতে হবে।

• সকল মাদক দ্রব্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের জিল্লুর রহমান, জার্জিশ আলী, আনিসুর রহমান, মহবুল হক প্রমুখ।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ