চলে গেলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও প্রাবন্ধিক আব্দুর রাউফ
সেখ ইবাদুল ইসলাম : স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবাংলায় বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী লেখক প্রাবন্ধিক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন আব্দুর রাউফ। আজ বৃহস্পতিবার ৯ জুন তিনি ইহলোক ত্যাগ করে পরলোকে গমন করলেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি রেখে গেলেন এক পুত্র এবং তার স্ত্রীকে। তিনি স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় শিক্ষা মন্ত্রী হুমায়ুন কবিরের প্রতিষ্ঠিত চতুরঙ্গ পত্রিকার দীর্ঘদিন সম্পাদনা করেছেন। এই পত্রিকাটি বাংলার গবেষক মহলে জনপ্রিয় ছিল। এরকম একটি প্রেস্টিজিয়াস পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন আব্দুর রাউফ এর মতো মানুষ।
আব্দুর রাউফ ১৯৪৭ সালের দোসরা ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেছিলেন হুগলি জেলার তারকেশ্বর থানার গয়েশপুর গ্রামে। তিনি তারেকেশ্বর হাই স্কুল থেকে দশম শ্রেণী পাস করেছিলেন পরবর্তীকালে মৌলানা আজাদ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর মননশীল লেখা এ বাংলার অসংখ্য পাঠককে আকৃষ্ট করেছে। তিনি আনন্দ বাজার, যুগান্তর, দৈনিক বসুমতি, আজকাল, প্রতিদিন, স্টেটসম্যান ,বাংলা স্টেটসম্যান সহ বেশ কয়েকটি পত্র পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার শাণিত কলম এ বাংলার মজলুম অসহায় মানুষের মুখ হয়ে উঠেছিল। তিনি কোনো সময়ই আপস করেননি আপসহীন লড়াই করেছেন সাংবাদিকতা জগতে।
সংবাদ প্রতিদিনের কলামিস্ট হিসাবে তিনি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে ছিলেন। তিনি একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন। দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী এবং মুসলমানদের অবস্থা নিয়ে তিনি ভাবতেন এবং চিন্তা করতেন। তিনি একাধিক গ্রন্থের লেখক হিসাবে বাংলার মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন।
তার লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল : স্বাধীনতার উত্তর পর্বে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান, মুক্তমনের সংকট, বহুমাত্রিক নজরুল, ভারতের বাংলাভাষী মুসলমান, গণতন্ত্র ও সংখ্যালঘু সমস্যা প্রভৃতি। তিনি সালে নতুন গতি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন, সমতট সংস্থার পক্ষ থেকেও তিনি সম্মানিত হয়েছিলেন।
তার মৃত্যুতে বাংলা একজন সুযোগ্য সন্তানকে হারালো। তিনি সারাজীবন সততার সঙ্গে কাজ করেছেন। কোন প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করেননি। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষক সাংবাদিক ইবাদুল ইসলাম বলেন, আব্দুর রউফ এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় দুই দশকের। ছোটবেলা থেকেই তার লেখার প্রতি আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ ছিল। সংবাদ প্রতিদিনের তিনি যখন কলাম লিখতেন সেই সময় আমি গ্রামের বাড়িতে বসে প্রতিটি সংখ্যা পড়তাম। পরবর্তীকালে কলকাতায় আসার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে আব্দুর রাউফ সাহেবকে আমার আইডল বলে মনে করতাম। তার মৃত্যু আমাদের কাছে বেদনার। আমরা একজন বাংলার সত্যিকারের বিবেক কে হারালাম। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক এই কামনা করি।