কলকাতা 

Mamata Banerjee: কবিগুরুর জন্মদিনে সাহিত্য সাধনার জন্য মমতাকে কেন বিশেষ সম্মান? প্রশ্ন তুলে পুরস্কার ফেরালেন বিশিষ্ট গবেষক রত্না রশিদ, সাহিত্য আকাদেমি থেকে পদত্যাগ করলেন বিশিষ্ট লেখক অনাদি রঞ্জন বিশ্বাস

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরী : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে নিরলস সাহিত্য সাধনার ফল স্বরূপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশেষ সম্মান প্রদান করেছিল বাংলা আকাদেমি। বাংলা আকাদেমির চেয়ারম্যান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এই সম্মানের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন রাজ্যের বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের সঙ্গে আলোচনা করার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার নিরলস সাহিত্য-সাধনার জন্য এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে। আর মুখ্যমন্ত্রীর এই সম্মান প্রাপ্তি নিয়ে গতকাল থেকেই সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দিলেন বর্ধমানের বিশিষ্ট গবেষক লেখিকা রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুসলমানের বিয়ের গান নিয়ে গবেষণা করে এই বাংলায় তো বটেই বাংলাভাষীদের কাছে খ্যাতি  লাভ করেছেন। রত্না রশিদ একজন বিশিষ্ট গবেষক তো বটে একইসঙ্গে উচ্চমানের লেখিকাও। তিনি ৩৯ টি পুরস্কার পেয়েছেন দেশ এবং বিদেশ থেকে।তিনি ২০০৯ সালে বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ২০১৯ সালে পেয়েছেন অন্নদাশঙ্কর রায় স্মৃতি সম্মান। মুখ্যমন্ত্রীকে নিরলস সাহিত্য-সাধনার স্বীকৃতি স্বরূপ বিশেষ সম্মান প্রদান করার প্রতিবাদ জানিয়ে রত্না রশিদ ফিরিয়ে দিলেন মমতা সরকারের দেওয়া ২০১৯ সালের অন্নদাশঙ্কর রায় স্মৃতি সম্মান। এই সম্মান তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। বাংলা আকাদেমি চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে রত্না রশিদ ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন আমি এই সম্মান প্রত্যাখ্যান করছি।

এদিকে একই কারণ দেখিয়ে সাহিত্য আকাদেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ নামে বিশেষ কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন অনাদি রঞ্জন বিশ্বাস।অনাদি অনাদি রঞ্জন বিশ্বাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, কলকাতায় রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর দিন কবিতাকে যে ভাবে অসম্মান করা হয়েছে, তাতে তিনি ‘বিরক্ত’। সেই কারণেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার রত্না জানিয়েছেন, যে ভাবে বাংলা আকাদেমি এই পুরস্কার ঘোষণা করেছে তার একটা প্রতিবাদ দরকার। তিনি বলেন, ‘‘উনি এক জন মান্যগণ্য মানুষ। উনি আমাদের সবার ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ওঁর কাছ থেকে পরিপক্ক সিদ্ধান্ত আশা করি। পুরস্কার দিলেই উনি নিয়ে নেবেন কেন!’’

অন্য দিকে, আন্দামান থেকে অনাদি জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে বাংলা কবিতাকেই অসম্মান করেছে কলকাতা। তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথকে বুকের মাঝে রেখেছি। তাঁর কবিতা আমার কাছে দুর্মূল্য। সেই কবির জন্মদিনে যদি কবিতার নাম করে এমন পুরস্কার দেওয়া হয়, তা হলে কবিতাকেই সামগ্রিক ভাবে অসম্মান করা হয়। তারই প্রতিবাদে আমি সাহিত্য অকাদেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’’

মুসলিম বিয়ের গান-সহ নানা বিষয়ে গবেষণা রয়েছে রত্নার। অজস্র প্রবন্ধ এবং গল্প লিখেছেন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে তিরিশটি পুরস্কার। তার মধ্যে ২০১৯ সালে পাওয়া অন্নদাশঙ্কর স্মারক সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছেন তিনি। ২০০৯-এর আকাদেমি পুরস্কার নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘এই পুরস্কারের গরিমা রক্ষিত হয়নি। সাহিত্য সাধনার বিষয়। আমার এই সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।’’

অনাদিও বলছেন, তাঁর এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। তিনি বলেন, ‘‘এতে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। আমি বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি, বাংলা সাহিত্য কেমন ভাবে যেন রাজনীতির কবলে পড়ে গিয়েছে। এ বছর একটি নাটকের বই সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছে। সাহিত্য অকাদেমি তো নাটকের বইকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য নয়। তার জন্য তো সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি রয়েছে।’’

ব্রাত্যের নাম না করে অনাদি বলেন, ‘‘সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার যে বইকে দেওয়া হয়েছিল, সেটি প্রাথমিক তালিকায় ছিল না। পরে জুড়ে যায়। কী ভাবে, তা আমি সদস্য হিসাবেও জানতে পারিনি।’’ অনাদির কথায়, ‘‘যিনি সেই পুরস্কার পেয়েছিলেন, সেই লেখকই বাংলা আকাদেমির সভাপতি হিসাবে কাল কবিতার অসম্মান করেছেন।’’

পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত থেকে কোনভাবেই সরে আসবেন না বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন রত্না রশিদ বন্দোপাধ্যায়। রত্না বলেছেন, ‘‘সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসব বলে তো আর প্রতিবাদ জানাইনি।’’ অন্য দিকে, অনাদি বলছেন, ‘‘প্রতিবাদ তো প্রতিবাদই। এমন ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এসেছি। করছি। ভবিষ্যতেও করব।’’


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ