কলকাতা 

ডানা ভাঙ্গা-খাঁচার পাখির আর কী মূল্য !! দেখতে হবে – জানতে হবে বিশ্ব। এমন-ই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নারী দিবসে অনুসন্ধানের আলাপচারিতায় বিশেষজ্ঞরা

শেয়ার করুন

নায়ীমুল হকের প্রতিবেদন : পাখির ঠিকানা কখনোই খাঁচা হতে পারে না। আর, ডানা ছেঁটে দেওয়া মহাপাপ। তবে এ’ কেবল পাখির জন্য প্রযোজ্য নয়, সৃষ্টির সকল কিছুর জন্যই একই কথা। নারী দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানা আঙ্গিকে এসব কথাই উঠে আসে বারবার। আর তাই, এসমস্ত কিছুর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার অনুসন্ধানের আয়োজনে নারী দিবসের সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল আলাপচারিতায় নানা অভিজ্ঞতার আলোকে গুরুত্তপুর্ণ সমস্ত কথা উঠে এলো বার বার। নিজ নিজ ক্ষেত্রে কেবল নারীই নয়, নারী-পুরুষ সকলের বিচরণ যত বাড়বে, জানতে পারবে এই সৃষ্টি, উন্মেষ ঘটবে ততই। আর এটাই তো বিকাশ, সুস্থিত উন্নয়নের পথ। তবে, একথাও ঠিক, ক্ষেত্র নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছুটা যেমন আমরা আমাদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য করি। তাদের পড়াশুনার ক্ষেত্র নির্বাচন করতে দেখি, কোন বিষয়ে তাদের দক্ষতা, স্বভাব, প্রকৃতি, পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং অবশ্যই কিছুটা তাদের জিন-গত অবস্থান। ঠিক তেমনই, কিংবা বলা যেতে পারে, আরও গুরুত্ব দিয়ে ভেবে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া জরুরি যে, কার বিচরণভূমি হবে কোন দিক।

উল্লেখ্য, এদিন সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান ছিল ভার্চুয়াল মাধ্যমে এবং সমগ্র উপস্থাপনায় ছিলেন মহিলারা। এদিন আলাপচারিতার বিষয় ছিল কোনো প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে রাখতে পারেনি যাঁদের। প্রথম বক্তা ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শিলিগুড়ি রবীন্দ্র নগর গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও লেখিকা ড. দূর্ব্বা ব্রহ্ম। তিনি মনে করিয়ে দেন নারীদের পাশাপাশি ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর শিকার কিন্তু পুরুষেরাও। সুতরাং নারী-পুরুষের এই বৈষম্য-ই থাকা উচিত নয়। ভায়োলেন্স বন্ধ হওয়া উচিত, তা যার উপরেই হোক না কেন।

Advertisement

উত্তর চব্বিশ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রাম হিঙ্গলগঞ্জ। সেখানে ভীষণ ভাবে পিছিয়ে পড়া মূলত মহিলাদেরকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে এম ও এম সেল্ফ হেল্প গ্রুপ। দিন-রাত এক করে কাজ করছেন তাঁরা। তাঁদের প্রতিনিধি সৌমিতা কয়াল জানালেন, তাদের নিয়ে লড়াইয়ের কথা। প্রবল ইচ্ছাশক্তি মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে, তার এক নজির গড়েছে এখানকার গ্রামবাসীরা। নানারকম সামাজিক বাধা ঠেলে এমনকী আমফান-এর মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও উঠে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। কী করে তাঁরা তাঁদের হাতের কাজকে পৌঁছে দিতে পারছেন বিভিন্ন জায়গায়। তারা আজ সত্যিই বুঝিয়ে দিতে পারছেন কোন মানুষই মূল্যহীন নন। অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি অসমের তিনসুকিয়া মার্গারিটা কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক অধ্যাপিকা দীপশ্রী দাস সরকার। নিজের জীবনের পদে পদে বাধাকে সরিয়ে তিনি কীভাবে আলোকবৃত্তে এসে দাঁড়িয়েছেন, সেকথা শোনালেন শ্রোতৃবৃন্দকে। আরো বললেন, যারা কাজ করে তাদের জন্য বাধা আসে। মনে সাহস রেখে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে যারা এগোতে পারে, তারাই আলটিমেটলি বিজয়ী হয়। কোভিড অতিমারিতে তিনি তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের লড়াই করার কাহিনি তুলে ধরেন। মোবাইল নেটওয়ার্ক পেতে গাছের মাথায় উঠে পড়তে হচ্ছে, এমন কষ্টকর অবস্থার কথাও তিনি সকলকে শোনান।

নারী দিবসের প্রাক্কালে সমাজের বিভিন্ন বর্গের মানুষের সামনে রাখা হয়েছিল কয়েকটি প্রশ্ন। তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত সম্বলিত একটি সংকলন ‘ক্ষনিকের ভাবনা, আগামীর দিশা’ প্রকাশিত হয় এই অনুষ্ঠানে।

 

নারী দিবস নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল দুটি পৃথক বিভাগে নারীকেন্দ্রিক সাধারন জ্ঞান ও মেধা প্রতিযোগিতা। অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যারা প্রথম দিকের স্থান দখল করে নিয়েছে এমন সাত জন কৃতী ছাত্র-ছাত্রী হল অহনা হাতি, প্রীতম দত্ত, অদ্রীশ পতিতুন্ডি, রাজবীর সাউ, দিব্যেন্দু পাল, নাজমুল আলম, অভিষিক্তা দাস। এদেরকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কোরে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন টাকি হাউস মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ-এর প্রধান শিক্ষিকা ড. স্বাগতা বসাক।

এদিন নারী দিবসের অনুষ্ঠানে আলাপচারিতার পাশাপাশি ছোট থেকে বড়দের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সকলকে নজর কেড়ে নেয়। এই পর্বে অংশগ্রহণ করে শ্রেয়শী মজুমদার, সঞ্চালী ঘোষ, অরিত্রি সাহু, দেবাঞ্জনা চক্রবর্তী, কীর্তিজিত চক্রবর্তী, আর্যা শীল, সুমিতা পাল প্রমুখ।

 

অনুসন্ধান কলকাতার ইতিবৃত্ত নিয়ে বলেন বিশিষ্ট শিক্ষিকা মিতালী মুখার্জী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপিকা চৈতালি দত্ত।

সভার কাজ সুচারুরূপে সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষিকা ও সাংবাদিক শর্মিষ্ঠা শীল ও নাফিসা ইসমাত। সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সায়নী কর্মকার। মূলত এই প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনুসন্ধান কলকাতার পক্ষে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন-এর এই উদ্যোগে পাশে থাকতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিশু সাহিত্য সংসদের বিশিষ্ট কর্মকর্তা অন্তরা দত্ত।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ