কলকাতা 

Aliah Movement : আলিয়ার আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবার আমরণ অনশনের পথে, আন্দোলনকারীদের সমর্থনে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরী : আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরণ অনশনে বসতে চলেছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য আগামীকাল সোমবার ১০ ই জানুয়ারি সময়ের বিচারে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের আন্দোলন ১০০ দিনে পড়বে।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি বলে সূত্রের খবর। যদিও ইতিমধ্যে সংখ্যালঘু’ দপ্তর এর পক্ষ থেকে দু-দুবার আলোচনার জন্য আন্দোলনকারী ছাত্রদের ডাকা হয়েছিল এবং আলোচনা হয়েছিল বলে জানা গেছে। তবে সেই আলোচনা সদর্থক হওয়া সত্ত্বেও কোন কারণে এখনো পর্যন্ত আলিয়ার ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। আন্দোলনকারী ছাত্রদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আলোচনা ফলপ্রসূ এখনো হয়নি ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে যে শর্ত দেয়া হয়েছে বা দাবি জানানো হয়েছে সেই সব দাবি এখনো পূরণ হয়নি।

Advertisement

আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দাবি ১০০ দিন অবস্থান কর্মসূচি অতিবাহিত হওয়ার পরও রাজ্যের সংখ্যালঘু মন্ত্রী এবং সংখ্যালঘু দপ্তরের আধিকারিকরা এ বিষয়ে কোনো সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ না করায় তারা বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনের পথে যাচ্ছে। পড়ুয়াদের দাবি গুলি হল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অন্য প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ওই জমি মিউটেশন ও ওই জমিতে হোস্টেল সহ খেলার মাঠ, হোস্টেল নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত ভাড়া বাড়ি প্রদান ,বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাপ্য সম্পূর্ণ অর্থ সঠিক সময়ে প্রদান সহ একাধিক দাবি।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “সংবাদপত্রে প্রকাশিত আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অন্য প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের সিদ্ধান্তের খবর সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনি অবগত আছেন। এই খবর, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান-প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, শুভাকাঙ্ক্ষীদের আহত করেছে। বর্তমানে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত হোস্টেল নেই, নেই খেলার মাঠ-স্টাফ কোয়াটার। এতদসত্বেও, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খেলার মাঠ, হোস্টেল এর ব্যবস্থা না করেই, প্রস্তাবিত সেই একই জমির একটা অংশ অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে আমরা মর্মাহত।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অর্থ বর্ষের প্রাপ্য বাজেট নির্ধারিত অর্থ বন্ধ রাখা হয়েছে। আর প্রাপ্য অর্থ না পাওয়ায় শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকাঠামো জনিত প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন ছাত্রছাত্রীরা, তাদের ভবিষ্যতের দায় কে নেবে?

বাজেটে নির্ধারিত অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়কে না দেওয়ায় থমকে আছে শিক্ষার পরিকাঠামো তৈরির কাজ, থমকে প্রস্তাবিত জমিতে হোস্টেল ও খেলার মাঠ নির্মাণও। এমনকি সংখ্যালঘু দফতরের চরম উদাসীনতায় বন্ধ সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের WBCS কোচিং। নেই বিভাগগুলিতে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক, ইনস্ট্রুমেন্ট ও বইয়ের অভাবে ধুঁকছে লাইব্রেরি ও ল্যাব গুলি, আটকে রাখা হয়েছে উচ্চশিক্ষার জন্য নেট, সেট, গেট,এর মতো কোচিং ব্যবস্থা।

অর্থের অভাবে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাক মূল্যায়নে।বিভিন্ন অজুহাতে ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ বাবদ বরাদ্দ অর্থও অনেককে দেওয়া হয়নি, বা আংশিক দেওয়া হয়েছে।উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধীনে থাকা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও গবেষকরা যে পরিমানে স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ পায়, সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের অধীনে থাকা একমাত্র আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও গবেষকরা সেই পরিমান স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ পায় না।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা এমনই যে বিদ্যুতের বিল, কর্মচারীদের বেতন দিতে অক্ষম এই প্রতিষ্ঠান, পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী আদি তালতলা ক্যাম্পাস বস্তি আগ্রাসন ও আবর্জনার স্তুপে বিপর্যস্ত শিক্ষার পরিবেশ -পরিকাঠামো যা বৃহত্তর ছাত্র সমাজের কাছে যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। সংখ্যালঘু দফতরের অধীন একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এত করুণ অবস্থা কেন এ প্রশ্ন নাড়া দেয় সাধারণ মানুষের বিবেককে।

বারবার আবেদন নিবেদনেও সংখ্যালঘু দফতর কর্ণপাত না করাতে বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে 10 দফা দাবিতে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক সার্কাস ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালীন অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচী নেওয়া হয় আগামী 10 জানুয়ারি তার 100 তম দিনে পদার্পন। 4 ঠা অক্টবরে (04/10/21)আমাদের অবস্থান বিক্ষোভের যাত্রা শুরু হয়। এই দীর্ঘ আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীরা বহু বাধা বিপত্তির সম্মুখীন । বহু সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে দীর্ঘ অবস্থানে সাময়িক হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।

18 নভেম্বর(18/11/21) সংখ্যালঘু দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী সহ, একাধিক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই আক্রান্ত হতে হয়েছে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের, গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে বেশ কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে। কোনও তরফে আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের খোঁজ নেওয়া বা আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন সে উত্তরও অজানা। এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও দপ্তরের কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের কোনো সদর্থক ভূমিকা নেয়নি। তাঁদের এই অবহেলা, উদাসীনতায় আমরা মর্মাহত।দুই দফায় দপ্তর কর্তৃপক্ষ ও ছাত্র প্রতিনিধি দীর্ঘ আলোচনা ও সুরাহার আশ্বাস মিললেও পূরণ হয়নি একটি দাবিও এই প্রেক্ষিতে আমরা আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পক্ষে :

মনসুর হাবিবুল্লাহ-6290259674,আব্বাসুদ্দিন সর্দার 9091242759,মিরাজুল ইসলাম -8777689651,সাজিদুর রহমান -9123008957″।

 

জানা গেছে, আগামীকাল সোমবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন। ঐদিন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কসার্কাস ক্যাম্পাসে সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করেছেন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে ঘোষণা হতে পারে পরবর্তী কর্মসূচি।

ইতিমধ্যেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাজিদর রহমান এর নেতৃত্বে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করে মিছিল হয়েছে আগামী দিনে এই ধরনের মিছিল সমগ্র রাজ্যজুড়ে হবে বলে সূত্রের খবর।

যে সমস্যাটি আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে দিতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতো সেই সমস্যাটি দিনের-পর-দিন ফেলে রেখে মমতা সরকারকে সংখ্যালঘুদের কাছে ভিলেন বানানোর অভিপ্রায় এখনো পরিষ্কার হচ্ছে না।

বাংলার সাধারন সংখ্যালঘু সমাজ মনে করছে এই মুহূর্তে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্যুতে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলে সমস্যা আরো বাড়তে পারে। আর এর ফলে ক্ষতি হতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির। সংখ্যালঘু সমাজের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ভাবমূর্তি রয়েছে তাতে আঘাত অনেকটাই লেগেছে আলিয়া ইস্যুতে। অতএব সরকারকে এখনই এই বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে সমস্যার সমাধান করা উচিত বলে মনে করছে রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজ। তা না হলে বুদ্ধদেব বাবুর মত ঔদ্ধত্য দেখালে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ভোটব্যাঙ্ক হচ্ছে এ রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমরা, সেই ভোটব্যাঙ্ক কোনো কারনে ভেঙ্গে গেলে তাতে ক্ষতি হবে মমতারই।

ছবি : ফাইল চিত্র।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ