কলকাতা 

মুখ্যমন্ত্রীর ‘ব্যক্তিগত’ কথা প্রকাশ্যে এনে রাজ্যপাল সঠিক কাজ করেননি বলে মনে করছে শাসক দল

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপালের কাছে খানিকটা দুঃখ প্রকাশ করেই একান্তে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর রিভিউ বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী থাকলে তিনি যাবেন না , এবং রাজ্য প্রশাসনের কোনো আধিকারিক যোগ দেবেন না  এই কথাটি গতকাল রাতে রাজ্যপাল টুইট করে প্রকাশ্যে আনেন । এটা নিঃসন্দেহে ছিল সৌজন্যমূলক এবং ব্যক্তিগত কথাবার্তা সেই ব্যক্তিগত কথা বার্তাকে প্রকাশ্যে এনে রাজ্যপাল সঠিক কাজ করেননি বলে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন ।

রাজ্যপালের ওই টুইটের খবর, সোমবার মধ্যরাতেই দিয়েছিল আনন্দবাজার ডিজিটাল। তার পরেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। রাতেই ওই বিষয়ে তৃণমূলের অন্দরে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়। অতঃপর মঙ্গলবার সকাল থেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতানেত্রীদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর কাছে আর্জি জানাতে থাকে, রাজভবনের সঙ্গে এই ধরনের ‘বার্তা বিনিময়’ বন্ধ করে দেওয়া হোক। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘সমস্ত পর্যায়ের রাজনীতিতেই এই ধরনের বার্তা বিনিময় চালু থাকে। মুখ্যমন্ত্রী নিজস্ব সৌজন্যবোধ থেকে রাজ্যপালকে বার্তা পাঠিয়ে জরুরি ভিত্তিতে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। রাজ্যপাল সেটা জনসমক্ষে এনে ঠিক করেননি। এটা কিন্তু রাজ্যপাল সুলভ কাজ নয়। যিনি নিজেকে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান বলে অহরহ দাবি করেন, তিনি এমন আচরণ করলে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক! এর পরে রাজভবনের সঙ্গে এমন যোগাযোগ রাখা যাবে কি না, সেটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’’

Advertisement
সোমবার মধ্যরাতে রাজ্যপাল টুইট করে দাবি করেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠক বয়কট করার পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতার। ধনখড়কে ‘বার্তা’ পাঠিয়ে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। টুইটে এমনই দাবি করেছিলেন রাজ্যপাল। টু‌ইটে রাজ্যপালের দাবি, মোদীর প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী (রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এবং নন্দীগ্রামের বিধায়ক) থাকলে তিনি হাজির থাকতে পারবেন না বলে তাঁকে বৃহস্পতিবার রাতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। ধনখড় লেখেন, ‘ঘটনার যে ভুল বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে, তার প্রেক্ষিতেই জানিয়ে রাখতে চাই, গত ২৭ মে রাত ১১টা ১৬ মিনিটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লেখেন, আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারি? খুব জরুরি। তার পরেই উনি আমায় ফোন করে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ওই বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী থাকলে তিনি সদলে ওই বৈঠক বয়কট করবেন’। টুইটের ‌শেষ লাইনে ধনখড় লিখেছিলেন, ‘অহং জিতল, হেরে গেল নাগরিক পরিষেবা’।
পাশাপাশিই অন্য একটি টুইটে মমতা এবং রাজ্যের অধুনা প্রাক্তন মুখ্যসচিব এবং মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ধনখড় লেখেন, ‘দেশের সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দীর্ঘ ইতিহাসে ২৮ মে দিনটি কালো দিন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর পর্যালোচনা বৈঠকে ধ্বংস হয়েছে দেশের গণতন্ত্র’। প্রসঙ্গত, প্রশাসনিক স্তরের অনুমান, আলাপন প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে না থাকাতেই তাঁকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারে বদলির নির্দেশ পাঠানো হয়। তিন দিন ধরে টানাপড়েন চলার পর সোমবার আলাপন মুখ্যসচিব পদে অবসর নেন। তার পরেই মমতা তাঁকে তিন বছরের জন্য নিজের মুখ্য উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করেন। মঙ্গলবার আলাপনের আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই দায়িত্ব নেওয়ার কথা।

তার আগেই রাজ্যপালের ওই টুইট সামগ্রিক ভাবে তৃণমূল শিবিরকে কুপিত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তিনিও বিষয়টিকে ভাল ভাবে নেননি। তবে শেষ পর্যন্ত ধনখড়ের এই আচরণ রাজভবন-নবান্ন সম্পর্কে কোনও ছায়াপাত করে কি না, তা দেখার। প্রাথমিক ভাবে দলের নেতাদের একাংশ চাইছেন, রাজ্যপালের সঙ্গে ‘একান্ত আনুষ্ঠানিক এবং সংবিধান সম্মত’ ছাড়া অন্য কোনও সম্পর্কই যেন না রাখা হয়। তা শেষ পর্যন্ত হবে কি না, সেটি নির্ভর করছে মুখ্যমন্ত্রী উপরেই। কিন্তু এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, রাজভবন-নবান্ন সঙ্ঘাত এর ফলে আরও উচ্চগ্রামে পৌঁছল। সৌজন্যে ডিজিটাল আনন্দবাজার।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

15 − 6 =