দেশ 

দূর্ঘটনায় আহত উন্নাওয়ের ধর্ষিতার অবস্থা সংকটজনক , এই ইস্যুতে রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায় , দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করল উত্তরপ্রদেশের পুলিশ

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বাংলার জনরব ডেস্ক : যত কান্ড উত্তরপ্রদেশে । আর আইন-শৃঙ্খলার অবনতি জনিত কারণকে সামনে এনে আজ সংসদেও বিরোধী আওয়াজ তোলে। গতকাল রবিবার রায়বরেলীতে  দুর্ঘটনার শিকার হন উন্নায় ধর্ষিত মহিলা ও তার আত্মীয়রা । বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ওই মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে । আদালতে মামলা চলছে । ঠিক সেই সময় রবিবার রায়বেরিলীতে গাড়ি দূর্ঘটনার জেরে  দু’জনের মৃত্যু হয়, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গণধর্ষণ কাণ্ডের এক সাক্ষীও। নির্যাতিতাকে খুন করতেই দুর্ঘটনার ‘ষড়যন্ত্র’ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর মা। এই ঘটনার তদন্তভারও তুলে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। ইতিমধ্যে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।

রবিবার, দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন ওই নির্যাতিতা। বেশ কিছুক্ষণ কাটলেও, তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। লখনউয়ের কিংস জর্জ’স মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর ফুসফুসে আঘাত লেগেছে। তাঁর দেহের ডান দিকে সবচেয়ে বেশি চোট লেগেছে। কলার বোন, হাত ও উরুর হাড় ভেঙে গিয়েছে। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। ওই হাসপাতালের ভর্তি তাঁর আইনজীবীও।

Advertisement

রবিবারের দুর্ঘটনা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন উঠে আসছে। ওই নির্যাতিতার জন্য যে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছিল তিনি সে সময় ছিলেন না। যে ট্রাকের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে তার নম্বর প্লেটের উপর কালো রঙ লাগানো ছিল। এ সব নিয়েই সরাসরি অভিযোগ করেছেন নিগৃহীতার মা। তিনি বলেন, ‘‘এটা সাধারণ একটা দুর্ঘটনা নয়, আমাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিরাট ষড়যন্ত্র। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত শাহি সিংহ ও আরেক যুবক আমাদের হুমকি দিয়ে চলেছে। তারা আমাদের দেখে নেবে বলেছে। জেলে থাকলেও সব কলকাঠি নাড়ছেন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেঙ্গার।’’  তাঁর এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে সিবিআই।

সোমবার, দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিবিআইয়ের একটি দল। আরেকটি দল হাসপাতালেও যায়। অন্যদিকে, সাংবাদিক বৈঠক করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক ট্রাকের চালক ধরা পড়েছে। পুলিশের দাবি, চালক জানিয়েছে, ট্রাক কেনার জন্য নেওয়া ঋণ শোধ করতে না পারাতেই তার নম্বর প্লেটে কালো রঙ লাগানো হয়েছিল। যাতে সেটা ধরা না পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিতার জন্য একজন বন্দুকধারী–সহ ৯ রক্ষী নিয়োগ করা হয়েছিল। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই নিগৃহীতার বন্দুকধারী রক্ষী সুরেশ বলেন, ‘‘গাড়িতে জায়গা ছিল না। তাই আমাকে বলা হয়, গাড়িতে ৫ জন রয়েছে, চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’

এই ঘটনা নিয়ে ঝড় ওঠে সংসদেও। নির্যাতিতাকে খুনের ‘চক্রান্ত’ করা হয়েছিল বলে রাজ্যসভায় জিরো আওয়ারে অভিযোগ তোলেন সপা সাংসদ রামগোপাল যাদব। সপা-র পাশে দাঁড়ায় বিএসপি, কংগ্রেস ও আপ-ও। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। এরপর অবশ্য কিছুক্ষণের জন্য মুলতুবি হয়ে যায় অধিবেশন। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। এ নিয়ে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে দেখাও করবে মহিলা কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল।

দেশজুড়ে এই গাড়ি দূর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে যাওয়ার পরেই বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার এবং আরও ৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হল।

পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (হত্যা), ৩০৭ (হত্যার চেষ্টা), ৫০৬ ( হুমকি), ১২০ বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় ১০ জনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, তার মধ্য রয়েছেন বিজেপি বিধায়কও। এফআইআর হয়েছে আরও ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধেও।”

নিগৃহীতার মা দুর্ঘটনাতে পরিবার মুছে ফেলার চক্রান্ত বলে দাবি করার কয়েক ঘণ্টা পরই এফআইআর দায়ের করা হয়। নিগৃহীতা মহিলার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন।

তাঁর মা সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে বলেছেন, “এটা কোনও দুর্ঘটনা নয়, আমাদের সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত।”


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

Leave a Comment

1 + 5 =