আন্তর্জাতিক 

Imran Khan: ‘‘দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কেনাবেচা চলছে,শেষ বল পর্যন্ত আমি লড়াই চালাব’’ : ইমরান খান

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : সরকার প্রায় খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক মহল বলছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গদিচ্যুত হতে শুধু সময়ের অপেক্ষা। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। ইমরান খান এই সংকটকালে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের মানুষের উদ্দেশ্যে কি বলেন সেই কৌতুহল সমগ্র বিশ্ববাসীর ছিল। অবশ্য অনেক পর্যবেক্ষক দাবি করেছিলেন আজকের ভাষণের মধ্য দিয়েই ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ইঙ্গিত দেবেন।

কথামতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভাষণ দিতে এলেন। এলেন বললে ভুল হবে খানিকটা পাকিস্তানের ক্রিকেট অধিনায়ক এর মতই সপাটে ব্যাটিং-বোলিং সবকিছু করে দিলেন ইমরান খান। বিশ্বের তাবড় তাবড় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যৎবানিকে ব্যর্থ করে তিনি বললেন আমি পদত্যাগ করছি না শেষ বল পর্যন্ত খেলে যাওয়ার চেষ্টা করব।তাঁর ভাষায়‘‘শেষ বল পর্যন্ত আমি লড়াই চালাব।’’ পাক প্রধানমন্ত্রী এও জানিয়েছেন, রবিবার অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হবেন তিনি।

Advertisement

বিদেশি শক্তির সাহায্য নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার জন্য বিরোধীদের নিশানা করেছেন পাক ক্রিকেটার-রাজনীতিক। অভিযোগ করেছেন, ‘‘দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কেনাবেচা চলছে।’’ এক ভারতীয় সাংবাদিকের বইয়ের উদাহরণ তুলে ইমরান বলেছেন, ‘‘ওই বইয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে লেখা আছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নেপালে গোপন বৈঠক করেছেন।’’

ঘটনাচক্রে, ইমরানের বিরুদ্ধে পাক পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)। নওয়াজের ভাই শাহবাজ বিরোধী জোটের তরফে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার।

অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক ছাড়াই পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন মুলতুবি হয়ে গেল। সরকারের প্রস্তাব মেনে ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি আগামী রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সভা মুলতুবির কথা ঘোষণা করেন। ওই দিনই পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব ঘিরে ভোটাভুটির মুখোমুখি হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ইমরান সরকার।

তিন দিনের বিরতির বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছিল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর সচিব পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি বৈঠকের জন্য অধিবেশন মুলতুবির আবেদন জানান। ডেপুটি স্পিকার সেই আবেদন মেনে নেন। বিরোধী পক্ষ আপত্তি তুললেও তিনি তা খারিজ করে দেন। বিরোধী নেতা শাহবাজ শরিফ ইঙ্গিত দিয়েছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য তাঁরা পার্লামেন্টে প্রস্তাব আনতে পারেন।

এর আগে সোমবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিশেষ অধিবেশনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিল শাহবাজের নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধী পক্ষ। কিন্তু সেই প্রস্তাব ঘিরে বিতর্কের আগেই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সভা মুলতুবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম। পাক সংবিধান অনুযায়ী ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা পেশের সাত দিনের মধ্যে ভোটাভুটি বাধ্যতামূলক। ইমরান সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, রবিবার (৩ এপ্রিল) আস্থা ভোটের মুখোমুখি হবেন প্রধানমন্ত্রী।

তবে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিতে স্পষ্ট, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে গরিষ্ঠতা হারিয়েছেন ইমরান। পাক সেনার তরফেও তাঁকে ইস্তফা দেওয়ার ‘বার্তা’ পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় ইমরানের সঙ্গে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার বৈঠকের পরে সেই জল্পনা আরও জোরাল হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৩৪২ আসনের পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের ‘জাদু সংখ্যা’ ১৭২। ইমরানের দল পিটিআই-এর সদস্য ১৫৫ জন। কিন্তু পিটিআই-এর বেশ কয়েক জন পার্লামেন্ট সদস্য ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে ইমরানের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ইমরান সরকারের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)-এর ৭, বালুচিস্তান আওয়ামি পার্টি (বিএপি)-র ৫ এবং জামহুরি ওয়াতন পার্টির রয়েছেন ১ জন সদস্য রয়েছেন। অন্য দিকে তিন প্রধান বিরোধী দল, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর ৮৪, পাকিস্তান পিপল্‌স পার্টি (পিপিপি)-র ৫৬ এবং মুত্তাহিদা মজলিস-ই-আমল (এমএমএ)-র ১৫ জন সদস্য রয়েছেন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ