কলকাতা 

বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে? শাহের মন্ত্রকের কাছে ব্যাখ্যা চাইলো হাইকোর্ট

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : দিল্লি থেকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের কি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থান নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দিল্লির মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকেও সমগ্র বিষয়টি নিয়ে আদালতে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। আগামী বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

বাংলার বেশ কয়েক জন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে দিল্লিতে আটক করা হয়েছিল। অভিযোগ, তার পর তাঁদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে মামলাকারীর আইনজীবী জানান, একটি পরিবারের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সঙ্গে আট বছরের শিশুও রয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি বুধবার কলকাতা হাই কোর্টে হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে ওড়িশায় পরিযায়ী শ্রমিকদের আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে আটক নিয়ে মামলাটি আদালতে উঠেছে। শুনানি হয়েছে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানেই রিপোর্ট দিতে হবে কেন্দ্রকে।

Advertisement

ওড়িশার মামলাটির ক্ষেত্রে হাই কোর্ট জানিয়েছিল, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওড়িশার মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের আটকে রাখা হয়েছে? কিসের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে? কোনও এফআইআর দায়ের হয়েছে কি? আটক করার পরে ওই পরিযায়ীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে? এখন তাঁরা কোথায় রয়েছেন?— এই প্রশ্নগুলি ওড়িশার মুখ্যসচিবকে করতে হবে। তাঁর জবাব দেখে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। এই মামলাটির সঙ্গে দিল্লির মামলার ফারাক কোথায়? বৃহস্পতিবার জানতে চায় আদালত। মামলাকারীর আইনজীবী জানান, ওড়িশার ক্ষেত্রে কাউকে দেশের বাইরে পাঠানো হয়নি। এ ক্ষেত্রে সেই অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই পরিবারকে। এর পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট চায় হাই কোর্ট। কেন্দ্রের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদীকে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। মামলাকারীর পরিবারের তরফে বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে ছিলেন আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী। রাজ্যের তরফে ছিলেন আইনজীবী বিশ্বব্রত বসুমল্লিক।

বীরভূমের পাইকরের ছ’জন শ্রমিক দিল্লিতে আটক হওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবারই হাই কোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের হয়েছিল। পরিবারের তরফে আইনজীবী জানিয়েছিলেন, কাজের সূত্রে দিল্লি গিয়েছিলেন ওই শ্রমিকেরা। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। দ্রুত তাঁদের ফিরিয়ে আনা হোক, আদালতে আর্জি জানান পরিবারের লোকজন।

দুই পরিবার সূত্রে খবর, গত মাসের ১৮ জুন দিল্লির রোহিনী পুলিশ জেলার কে. এন কাটজু থানা এলাকায় ছ’জনকে আটক করা হয়। আটক হওয়ার পরেই তাঁরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জানান, বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। দ্রুতই পরিবারের সদস্যেরা দিল্লিতে এসে যেন তাঁদের মুক্ত করান। এ কথা শোনামাত্রই পরিবারের সদস্যেরা দিল্লির উদ্দেশে রওনা হন। তাঁরা সেখানে পৌঁছোলে কে. এন কাটজু থানা থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশি সন্দেহে যাঁদের আটক করা হয়েছিল, তাঁদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ‘পুশ ব্যাক’ করিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোথা থেকে তাঁদের ‘পুশ ব্যাক’ করানো হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও তথ্য থানার তরফে জানানো হচ্ছে না বলেই অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যেরা। তাঁরা জানান, তাঁরা এ বিষয়ে রাজ্য শ্রম দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, তাঁরা এ নিয়ে হাই কোর্টে মামলা করবেন। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের নির্দেশের পর বিজেপিকে কটাক্ষ করেছেন সামিরুল। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রথম সারির আর এক বিজেপি নেতা, যিনি সারা ক্ষণ রাষ্ট্রবাদী সনাতন হিন্দু হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে চান, তিনি সব বিষয়ে মুখ খুললেও বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের আটক করার বিষয়ে নীরব। আসলে এরা সত্যিই বাংলার গরিব মানুষের বিরোধী। যদি সত্যিই বাংলাদেশি ধরা পড়ে, তাদের নিয়ম মেনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোকে আমি সমর্থন করি। কিন্তু প্রমাণ থাকার পরেও বাংলার বহু পরিযায়ী শ্রমিককে আটক করে রাখা হয়েছে। আমরা আইনের পথে লড়ছি। হাই কোর্ট রিপোর্ট তলব করেছে। বাংলার পরিযায়ী শ্রমিক ভাইবোনেদের জন্য আমাদের লড়াই জারি থাকবে। কিন্তু যাঁরা সারা ক্ষণ দেশ-দেশ করে গলা ফাটান, তাঁরা কেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সহানুভূতি দেখাচ্ছেন না? এর নেপথ্যে আরও বড় কোনও চক্রান্ত নেই তো? লড়াই হবে।’’


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ