বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনের নামে নাটক করে শীর্ষ আদালতের রায় বদলানো যাবে না, প্রতিক্রিয়া হাকিমের, পাল্টা প্রতিক্রিয়া চাকরিহারাদের
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের শীর্ষ আদালত চাকরিহারাদের নিয়ে যে রায় প্রদান করেছে তা কার্যকর করা হবে আন্দোলন করে কিংবা নাটক করে টিভিতে মুখ দেখিয়ে শীর্ষ আদালতের রায়কে কার্যকর থেকে সরানো যাবে না। রাজ্য সরকার শীর্ষ আদালতের রায়কে কার্যকার করতে বদ্ধপরিকর। সেই সেই কাজটা তারা করবে, শনিবার এমনই মন্তব্য করেছেন রাজ্যের পুরো ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিহারাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাঁর উপর ভরসা রাখলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। অনেকেই তা করেছেন। কিন্তু কিছু মানুষ এখনও আন্দোলন করে যাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায় বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন করে বদলানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন ফিরহাদ।
দুর্নীতির অভিযোগে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার ফলে চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৩৫ জনের। আদালতের রায়ের পর থেকেই চাকরিহারা এই শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের একাংশ পথে নেমেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থানে বসেছেন চাকরিহারাদের ওই অংশ। ওই দিন রাতেই বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। শনিবার তাঁদের এই অবস্থানের তৃতীয় দিন। চাকরিহারাদের উপর পুলিশের বলপ্রয়োগের পর কিছুটা অস্বস্তিতে রাজ্য সরকার। ফিরহাদ আরও বলেন, ‘‘নেতাজি ইন্ডোরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যা ব্যবস্থা করার করবেন। সেই বিশ্বাসটা রাখলেই হয়ে যেত। এত গোলমালের দরকার ছিল না। বেশির ভাগ মানুষই বাড়ি চলে গিয়েছেন। যাঁরা টিভিতে মুখ দেখাতে চান, তাঁরাই এখনও বসে আছেন। এটা নাটক হচ্ছে।’’
আন্দোলনের ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘যখন সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন যাবে, তখন যদি কেউ বলেন, শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন, তখন তো তাঁদেরই বিপদ বাড়বে। বিকাশ ভবনে কর্মীদের আটকে রাখা হয়েছিল। এ ভাবে মানুষের উপর অত্যাচার করে তো আন্দোলন চলতে পারে না। দুর্নীতির বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট দেখছে। তারা যা বিচার করেছে, সেটা তারাই বদলাতে পারে। বিকাশ ভবনে আন্দোলন করে তা বদলানো যাবে না।’’
ফিরহাদের মন্তব্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়েছে বিকাশ ভবনের সামনে। চাকরিহারা আন্দোলনকারীদের এক জন বলেন, ‘‘সরকারের বা শাসকদলের কেউ তো এক বারও আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করলেন না! এই ধরনের মন্তব্য আমরা গায়ে মাখি না। আমাদের হকের চাকরি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বোধ থাকলে উনি এই মন্তব্য করতে পারতেন না।’’
অন্য এক চাকরিহারা বলেন, ‘‘মানবিকতা থাকলে উনি এটা বলতে পারতেন না। আমরা যোগ্য। এত দিন চাকরি করার পর আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন আমরা রাস্তায় পড়ে আছি। এটা নাটক! ওঁর কথা মানি না।’’ আর এক জন বলেন, ‘‘এটা যদি নাটক হয়, তবে নাটকের সংজ্ঞা কী, দেখতে হবে। আমাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ন্যায্য দাবিতে এই আন্দোলন করছি। এটাকে নাটক বললে কিছু করার নেই। আন্দোলন চলবে।’’