“যাঁরা মমতার আঁচলের তলায় থেকে রাজনীতিতে বড় হয়ে বিজেপিতে এসে করে খাচ্ছে দিলীপ ঘোষ তাঁদের থেকে শিখবে না। দিলীপ ঘোষ জানে কীভাবে লড়াই করতে হয়” : দিলীপ ঘোষ
বিশেষ প্রতিনিধি : বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দীঘায় জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষ। দিলীপ ঘোষের এই অনুষ্ঠানে যোগদান বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলে তার পরিণতিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, দিলীপের এই সফর বিজেপি দল অনুমোদন করে না। নাম না করে দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
আর এ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে দিঘার বিচে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে চাঁচাছোলা ভাষায় যার জবাব দিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। দিলীপের কথায়, “অনেকে ভাবেন বাংলায় বিজেপি তৈরি হয়েছে ২১ সালের পর। তাঁরা বাংলায় বিজেপির মোট শহিদের সংখ্যাও জানেন না, তাই তাঁরা বলেন ৫৭ জন শহিদের কথা। অথচ বাংলায় বিজেপির শহিদ সংখ্যা ২৫৭ জন!”
বলেছেন, “যাঁরা মমতার আঁচলের তলায় থেকে রাজনীতিতে বড় হয়ে বিজেপিতে এসে করে খাচ্ছে দিলীপ ঘোষ তাঁদের থেকে শিখবে না। দিলীপ ঘোষ জানে কীভাবে লড়াই করতে হয়।”
তিনি এও বলেন, “অনেকে অভ্যাসবশত বিতর্ক শুরু করেছেন। মজার কথা হল, আমি কেন ভগবানের কাছে এসেছি, তাতে অনেকের কষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে আমার পার্টির কিছু লোকের! তাঁদের বলব, হতাশ হবেন না, বরং বিজেপিকে বাংলায় সত্যিকারের এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে প্রকৃত লড়াইটা করুন।”
সৌজন্যের রাজনীতি বোঝাতে দিলীপ টেনে এনেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরের প্রসঙ্গ। দিলীপের কথায়, “আমার পাড়ায় তৃণমূলের নেতার বিয়ে হচ্ছে বলে আমি সেখানে যাব না, এরকম নোংরা জঘন্য রাজনীতি দিলীপ ঘোষ করে না। আমারবাড়ির জামাই অন্য পার্টি করে বলে আমি তার বাড়িতে যাব না! যারা এই অপ সংস্কৃতি আনতে চাইছে তারা বিজেপি বোঝে না।”
টানা সাড়ে আট মিনিটে একাধিক প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন দিলীপ। রাগে গজ গজ করতে করতে বলেছেন, “দিলীপ ঘোষ ৪২ বছর ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে সমাজের কাজ করছে, আমার দিকে আঙুল তোলার হিম্মত কারও নেই, না পক্ষে না বিপক্ষের। যাদেরকে আমি নিয়ে এসে নেতা বানিয়েছি, যারা বিজেপিতে এসে করে খাচ্ছে তাদেরই বেশি পেট ব্যাথা হচ্ছে!”
তিনি রাজ্য সভাপতি থাাকাকালীন বাংলায় বিজেপির সাংসদ সংখ্যা ১৮ তে পৌঁছেছিল। বিধায়ক সংখ্যাও ৭৭ এ পৌঁছয়। ওই প্রসঙ্গ টেনে দিলীপ বলেন, “এখন বিধায়করা দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, সাংসদ সংখ্যা কমছে, পঞ্চায়েতেও নেতা কমছে। কেন এই পরিস্থিতি? য়াঁরা আমাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের উদ্দেশে আমিও প্রশ্ন রাখছি, বাংলায় বিজেপি পিছিয়ে যাচ্ছে কেন?”
খানিক থেমে জবাবও দিযেছেন দিলীপ নিজেই। তাঁর কথায়, “বিজেপি কর্মীরা সন্দেহ করে না, যতদিন পার্টির মধ্যে সন্দেহ ছিল না ততদিন পার্টি এগিয়েছে, যেদিন থেকে এই অপসংস্কৃতি ঢুকেছে সেদিন থেকে পার্টি পিছোচ্ছে! আসলে যাঁরা নেতৃত্বে রয়েছেন, কর্মীরা তাঁদের ভরসা করতে পারছেন না।”
তাৎপর্যপূর্ণের বিষয় হয় এদিন দিঘা থেকে ফেসবুক লাইভে সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতে দিলীপকে বলতে শোনা গিয়েছে জয় জগন্নাথ। আর সাংবাদিক বৈঠক শেষে তাঁকে ঘিরে থাকা ভিড় থেকে স্লোগান উঠেছে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, তৃণমূল কংগ্রেসে দিলীপ ঘোষ স্বাগতম!”
দিলীপ অবশ্য আগেই স্পষ্ট করেছেন, ‘প্রয়োজনে রাজনীতি ছেড়ে দেবেন কিন্তু বিজেপি ছাড়ার প্রশ্নই নেই।’ দিলীপের চাঁচাছোলা বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা কী বলেন, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে জনমানসে।