শুধু মুসলিমদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেই হবে না, বাস্তবে প্রমাণ করতে হবে, জঙ্গিপুরে আন্দোলনকারী মুসলিমদের উপরে পুলিশের অকথ্য নির্যাতন মমতার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করছে!
সেখ ইবাদুল ইসলাম: ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে এদেশের সংখ্যালঘু মুসলিমরা আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্র করে চলেছে। এর ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবাংলায়। গত শুক্রবার জুম্মার দিন থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সেই আন্দোলন জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে । আর একশ্রেণীর পুলিশ অফিসার যেভাবে মুসলিমদের আন্দোলনে অত্যাচারের নির্মমরোলার চালাচ্ছেন তার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী নীরব রয়েছেন কেন সেটা নিয়ে এ রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজ প্রশ্ন তুলছে। যদিও বুধবার মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ওয়াকফ সম্পত্তি আপনাদের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না আপনাদের সঙ্গে আপনাদের দিদি আছেন।
মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষে জৈন সম্প্রদায়ের উদ্যোগে বুধবার উদ্যাপিত হচ্ছে ‘নবকার মহামন্ত্র দিবস’। তারই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বলেন, ‘‘আমি জানি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সংখ্যালঘুদের মনে একটা দুঃখ আছে। আপানারা ভরসা রাখুন, বাংলায় এমন কিছু হবে না যাতে বিভাজন হয়। সবাইকে একসঙ্গে থেকে বাঁচতে হবে। জিও, জিনে দো (বাঁচুন, বাঁচতে দিন)।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘আপনারা সবাই একসঙ্গে বাঁচার কথা বলুন। কেউ কেউ রাজনৈতিক প্ররোচনা দেয়। আমি বলছি, দিদি আছে, দিদি আপনাদের রক্ষা করবে। আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। কেউ উস্কানিতে পা দেবেন না।’’
ওয়াকফ বিল সংসদের দুই কক্ষে পাশ হয়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাতে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আইনের গেজেট নোটিফিকেশনও হয়ে গিয়েছে তার পর। নতুন আইন নিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘সমগ্র সমাজের স্বার্থে, মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থে এই চমৎকার আইন (ওয়াকফ আইন) প্রণয়নের জন্য আমি দেশের সংসদকে অভিনন্দন জানাই। এখন ওয়াকফের পবিত্র চেতনা সুরক্ষিত হবে। মুসলিমদের অধিকারও সুরক্ষিত হবে এই আইনের ফলে।’’ কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের বিঁধে মোদী এ-ও বলেছেন, ‘‘তোষণের রাজনীতি নতুন নয়। স্বাধীনতার সময়ই এই তোষণের বীজ বপন করা হয়েছিল। দ্বি-জাতি তত্ত্ব সাধারণ মুসলিমদের সিদ্ধান্ত ছিল না। তোষণের রাজনীতির মাধ্যমেই কংগ্রেস ক্ষমতা পেয়েছে। কিছু মৌলবাদী নেতা সম্পদ পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, সাধারণ মুসলিমরা কী পেয়েছেন? গরিব মুসলিমরা কী পেলেন?’’ উল্টো দিকে, ওয়াকফ আইন অসংবিধানিক, এই অভিযোগ করে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে কংগ্রেস।
ঘটনাচক্রে, বুধবার মমতাও স্বাধীনতার সময়কার প্রসঙ্গ এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বিভাজন তো আমরা করিনি। সেই স্বাধীনতার সময়ে হয়েছে। কেউ কেউ আপনাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে উস্কানি দিচ্ছে। তাতে পা দেবেন না।’’ ভোটের অঙ্কে দেখতে গেলে গত ১৪ বছর ধরে বাংলায় সংখ্যালঘুদের একটচেটিয়া সমর্থন রয়েছে তৃণমূলের দিকে। ক্রমে তা মমতার দলের রাজনৈতিক পুঁজিতেও পরিণত হয়েছে। বিজেপি প্রায়ই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘সংখ্যালঘু তোষণের’ অভিযোগ তোলে। মমতা তা-ও উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে (বাংলায়) ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। আমরা কী করব, তাদের বার করে দেব?’’
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবারের সভা থেকে সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেও তাতে অনেকটাই বিরক্ত এ রাজ্যের মুসলিম সমাজ। কারণ ওয়াকফ সম্পত্তি বাঁচানোর লড়াইয়ের বা আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য এ রাজ্যের একশ্রেণীর পুলিশ অফিসার যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারী মুসলিমদের উপরে আক্রমণ করেছে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিরব কেন? মুসলিমদের ভোটের লোভে তাদেরকে নানাভাবে আশ্বস্ত করা হচ্ছে সেই আশ্বস্ত করার নেপথ্যে শুধু যে ভোটের অংক আছে। এটা স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে যেভাবে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারী মুসলিমদের উপর তা এক কথায় জালিয়ানওয়ালাবাগকে স্মরণ করে দিচ্ছে।
একদিকে মুসলমানদের পাশে থাকার আশ্বাস অন্যদিকে পুলিশ দিয়ে মুসলিম আন্দোলনকারীদেরকে দমন পীড়ন করানোর যে চক্রান্ত মমতা প্রশাসন নিয়েছেন তা অবশ্যই নিন্দনীয়। জঙ্গিপুরে যা ঘটেছে তার পরিণতিতে অবিলম্বে ওই জেলার এসপি এবং ওই এলাকার ডিআইজি এবং আইজি কে সরিয়ে দেওয়া উচিত বলে এ রাজ্যের মুসলিম সমাজ মনে করছে। খোদ রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও মঙ্গলবার এর ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন বাম আমলেও আমরা আন্দোলন করেছি সেই আন্দোলনে এইভাবে দমন পীড়ন করা হয়নি। একথা বলতে দ্বিধা নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা এবং কাজের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে। বিগত ১৪ বছরে এ রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজের উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেমন কোন কাজ করেননি বলেই আমরা মনে করি।