প্রাইমারি শিক্ষাকে আরো কার্যকর করে তুলতে অনুসন্ধানের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে একদিনের কর্মশালা
বিশেষ প্রতিনিধি : শিশুর প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার হল শিক্ষা। শিশুদের শেখানো শুধুমাত্র শিক্ষক কিংবা স্কুলের দায়িত্ব নয়, বাবা-মায়েরও দায়িত্ব সন্তান যথাযথ শিক্ষা পাচ্ছে কিনা, তার খোঁজ রাখা।
শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা অর্থাৎ ভিত শক্তপোক্ত হলে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়।স্কুলের পরিবেশ, বাড়ির পরিবেশ এবং শিক্ষকের গুণে এই কাজটি সম্ভব। এই কথার মাথায় রেখে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে অনুসন্ধান সোসাইটি হাতে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার ওপর একগুচ্ছ কর্মসূচি।

প্রথম, ‘বাংলা শব্দ ও বানান শিক্ষার উপায়’ নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে এই কর্মসূচির শুভ সূচনা হয়। সূচনা করেন বিশিষ্ট ভাষাবিদ ডঃ পবিত্র সরকার। পরে একই ভাবে ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত-এর ওপর পাঁচটি আলাপচারিতায় অংশ নেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা। শিক্ষাদান আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা যায় কিভাবে এবং সেই পথে অন্তরায় কি কি, ড্রপ আউট বাড়ছে কেন– এ সমস্ত বিষয়েও বক্তব্য রাখেন প্রবীণ শিক্ষাবিদগণ।
এবার অনুসন্ধান সোসাইটি হাতে নিয়েছে সারাদিনের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালার।সোসাইটির সম্পাদক শিক্ষক গৌরাঙ্গ সরখেল জানিয়েছেন রাজ্যব্যাপী দুই ভাগে হবে এই কর্মশালা। প্রথমটি হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গে, পরেরটির পরিকল্পনা উত্তরবঙ্গে। আগামী ১৩ এপ্রিল কলকাতার সল্টলেকে লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হবে প্রথম কর্মশালাটি। মূলত বিদ্যালয়ের পড়াশোনা আরও আকর্ষণীয় কী করে হতে পারে, সেটাই হবে কর্মশালার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকেরাও অংশ নিতে ইতিমধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করা শুরু করেছেন। দুপুরের আহারসহ রেজিস্ট্রেশন ফি রাখা হয়েছে ১০০ টাকা।
প্রাথমিক ও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা আলোচনার সবকটি দিক ধরার চেষ্টা করা হয়েছে এই কর্মশালায় বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ডঃ অমরেন্দ্র মহাপাত্র। তিনি এই কর্মশালায় প্যানেল ডিসকাশনের কি-নোট বক্তব্য রাখবেন। কর্মশালাটির সূচনা করবেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডঃ দীপক চন্দ্র মন্ডল এবং স্বাগত ভাষণ দেবেন বিশিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক ও গণিতের অধ্যাপক ডঃ পার্থ কর্মকার। তিনি এই কর্মশালা রূপায়নে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানান অনুসন্ধান সোসাইটির সম্পাদক। তিনি জানান কর্মশালায় থাকবেন শিশু শিক্ষা সম্বন্ধে অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, লেখক ও শিশু-মনোবিদগণ। ইতিমধ্যে রিসোর্স পার্সন হিসেবে সম্মতি জানিয়েছেন অধ্যাপক ডঃ দেবব্রত মজুমদার, মিলন দত্ত, ডঃ আব্দুল বারী, দিব্য গোপাল ঘটক, ডঃ সৈয়দ নুরুসসালাম, বিশ্বনাথ দাশগুপ্ত, মেচবাহার শেখ, সঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রকৌশলী প্রশান্ত ভট্টাচার্য, বিজ্ঞানী মতিয়ার রহমান খান, বিজ্ঞানী ওয়াশেকুল ইসলাম, মনোজ রায়, অজিত নায়েক, ডঃ দীপঙ্কর ঘোষ, সাবির আহমেদ, শেখ আলী আহসান, ডঃ চন্দন মিশ্র প্রমুখ। পৌরোহিত্য করবেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রশাসক আরফান আলী বিশ্বাস।
অনুসন্ধান সোসাইটির মুখ্য পরামর্শদাতা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মতিয়ার রহমান খান বলেছেন, কর্মশালাটির মুখ্য ফোকাস হল–শিক্ষকের কাজকে আরো আকর্ষণীয় ও কার্যকর করে তোলা, গুড-প্যারেন্টিং বা অভিভাবকত্বের মাধুর্য কীভাবে তা দেখানো এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গিতে সহযোগিতা করা। এছাড়াও থাকবে হাতে-কলমে এক্সপেরিমেন্ট, লেখাপড়া সহ শিশুদের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়নে অভিভাবকদের করণীয় নিয়ে থাকবে ‘গুড-প্যারেন্টিং’ এর উপর তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা–আমাদের সন্তান আমাদের ভবিষ্যৎ।
প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্যায়ন, নথিপত্র সংরক্ষণ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগীমূলক মনোভাব সৃষ্টি ও শিক্ষকদের উৎসাহ প্রদানে কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েও আলোচনা থাকবে কর্মশালাটিতে। একটি ফোল্ডারও প্রকাশিত হতে যাচ্ছে কর্মশালা উপলক্ষে।
অভিজ্ঞ শিক্ষক, শিক্ষা প্রশাসক, শিক্ষাবিদ, শিশু মনোবিদদের উপস্থিতিতে আগামী ১৩ এপ্রিলের এই কর্মশালাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন শিক্ষা জগতের অনেকেই।