কলকাতা 

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাবলী বাংলার রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গতকাল রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে আক্রমণ তাকে হেনস্তা এবং তার গাড়ির তলায় চাপা পড়েছে দুই ছাত্র বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করছি। ইতিমধ্যে এসএফআই ছাত্র সংগঠনটি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে যদি রাজ্য সরকার কোন পদক্ষেপ না করে তাহলে রাজ্যজুড়ে যে আন্দোলন শুরু করবে তার হুঁশিয়ারি দিয়ে দিয়েছে। ফলে আগামী দিনে এই রাজ্যে বামপন্থী ছাত্র যুবদের আন্দোলনে যে উত্তাল হতে শুরু করবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে শাসক দল ইচ্ছা করলেই এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব কম ছিল না। কারণ তিনি খুব ভালো করেই জানেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত পাঁচ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি যে যাদবপুরে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে সে বিষয়ে অবশ্যই উপাচার্য অবহিত রয়েছেন। সুতরাং শিক্ষা মন্ত্রী যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সফরে গেছেন তখন উপাচার্যের উচিত ছিল বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা এবং ছাত্র সংগঠনগুলির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা করা।

Advertisement

কিন্তু তা উপাচার্য করেন নি। উপরন্তু জানা যাচ্ছে ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার জন্য তিনি নাকি বারবার শিক্ষা মন্ত্রীর কাছে পুলিশ ডাকার অনুরোধ করেছিলেন কিন্তু ঘটনারচক্রে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকার বিরোধী ছিলেন। কারণ এর আগে এক উপাচার্য পুলিশ দেখে যে বিপাকে পড়েছিলেন তার পরিণতিতে সেই উপাচার্যকে যে সরে যেতে হয়েছিল তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির ট্রাপে পা দিয়ে ফেলেন। গাড়ি চালাতে বলে তিনি যেভাবে ছাত্রদেরকে আরো বেশি ক্ষুব্ধ করে তুলেছেন তাতেই বিপাকে পড়েছেন শিক্ষা মন্ত্রী।

আর এই বিপাক শুধু শিক্ষা মন্ত্রীর একার নয় এর প্রভাব পড়বে রাজ্য রাজনীতিতে। মমতার সরকারের উপরে এবং শাসক দলের উপরে। এই ঘটনা কে সামনে রেখে সিপিএম এবং অন্যান্য বামপন্থী সংগঠনগুলি যেভাবে গতকাল থেকেই প্রচারে নেমেছে এবং তার পাল্টা হিসাবে গদি মিডিয়া যেভাবে শিক্ষামন্ত্রীকে বাঁচাতে নেমেছেন তাতে হিতে বিপরীত হতে চলেছে। সাধারণ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত খবর কি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করছেন বলে জানা গেছে? এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দল এবং সরকারের ভাবমূর্তি যদি ফেরাতে হয় তাহলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে এখনই মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি এ কাজটি করতে পারেন তাহলে বামপন্থীদের পালের হাওয়া এক্ষুনি তিনি কেড়ে নেবেন আর যদি না পারেন তাহলে কিন্তু বামপন্থীদের গণআন্দোলনে এই সরকারে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। কি হবে আর কি করবেন সেটা মমতা ব্যানার্জি সবচেয়ে ভালো জানেন? তবে এটা পরিষ্কার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গতকালের ঘটনা এবং এর ভবিষ্যৎ পরিণতি হচ্ছে এই রাজ্যের রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দেওয়া! আগামী দিনে বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় মোড় নেবে তাতে তৃণমূল কংগ্রেসে সমূহ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে!

এএ


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ