মাদ্রাসা নিয়ে বিরোধী দলনেতার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রতিবাদ
অনুদেব দাস , প্রধান শিক্ষক দাবড়া হাই মাদ্রাসা : মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকতম শিক্ষা ব্যবস্থার একটি প্রতিষ্ঠিত উদাহরণ বিগত ১১ বছর সরকারি স্কুলে সহশিক্ষক হিসেবেএবং প্রায় সাড়ে তিন বছর মাদ্রাসায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হল মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা।স্কুল শিক্ষার সাথে মাদ্রাসা শিক্ষার বিন্দুমাত্র কোন তফাৎ নেই এবং সমস্ত সর্বভারতীয় পরীক্ষার ক্ষেত্রেও মাদ্রাসা থেকে পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের সমমর্যাদা দেওয়া হয়।বিগত দিনেও একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলতো ২০০৮ থেকে সরকার নিজস্ব প্রয়োজনে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকেও পৃথক করে এবং পৃথক দপ্তর স্থাপন করে যাতে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি করা সম্ভব হয় ।বর্তমান সরকারও যথেষ্ট সদিচ্ছার সাথে এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যার সুফল হিসেবে প্রত্যন্ত প্রান্তের সাধারণ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষার আলোকে আলোকিত হচ্ছে ।রাজনৈতিক স্বার্থে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই শিক্ষা ব্যবস্থা কে কলুষিত করার চেষ্টা কখনো কাঙ্ক্ষিত নয় মাননীয় বিরোধী দলনেতার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।
সাক্ষী গোপাল ঘোষ,সহকারি শিক্ষক কলাছড়া হাই মাদ্রাসা : ১৯ বছর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছি। কখনও স্কুলের থেকে আলাদা কিছু অনুভব হয়নি। আনেক হিন্দু ছাত্রছাত্রী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে । আনেক হিন্দু শিক্ষক মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করি। সব সময় সুন্দর সম্প্রীতির আবহে কাজ করেছি।কখনও স্কুল ও মাদ্রাসা আলাদা কিছু বলে অনুভব হয়নি।
ড. মহ: নাজমুল আরেফিন,সহ-শিক্ষক,পদুমপুর সাইফুদ্দিন হাই মাদ্রাসা : ‘শুভেন্দু বাবুর নির্দিষ্ট বক্তব্যে অবাক হইনি! উনার মতো উলঙ্গ নেতার কাছে এটাই প্রত্যাশিত। গিরগিটীপনার আগে উনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেশকিছু মাদ্রাসায় আর্থিক সাহায্য দিয়েছিলেন। তাহলে উনাকে এর উৎসাহদাতা বলতে হয়। পরোক্ষে মাদ্রাসায় কর্মরত সমস্ত অমুসলিম শিক্ষকদের কার্যত উনি অপমান করলেন। তীব্র ধিক্কার ও নিন্দা জানিয়ে সময় নষ্ট করতে চাই না।
সুশান্ত চক্রবর্তী, সহকারি শিক্ষক নবস্থা এ এস এফ হাই মাদ্রাসা, বীরভূম : দিল্লীর কেন্দ্র,কলকাতা রাজ্যে একসাথে বলতে হবে নিয়োগ দিন মাস্টার ডিগ্রি,phd সব শেষ এবার এক্সাম নিয়ে চাকরি দিন।দেশ,কাল, পাত্র,ধর্ম নির্বিশেষে চাকরি দিন।এখন উপলক্ষে যেন উদ্দেশ্যকে ছড়িয়ে যেতে না পারে তা হলে চাকরি পেলেও হাই কোর্ট,সুপ্রিম কোর্ট কেন ঘুরব? চাকরি দেওয়া সরকারের কাজ সব সরকার যেই ক্ষমতায় থাকবে ।না হলে আমার ভাই চাকরি পায় নি কাল হয়ত আমাদের ছেলেমেয়েরাও পাবে না।শেষের সে দিন ভয়ংকর।আমাদের ভুলিয়ে দেওয়া হবে নানা রঙে।কিন্তু চাকরি কেউ দেবে না। না কেন্দ্র, না রাজ্য।
মহঃ উমায় রুদ্দিন (সহকারি,শিক্ষক)(উলুবেড়িয়া হাজী ইসাক দারুল উলুম সিদ্দিকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা) :মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যে কুরুচিকর ও হিংসামূলক মন্তব্য করে সংখ্যালঘু সমাজ তথা ছাত্র-ও শিক্ষক সমাজকে অপমানিত করেছেন ।তার এই বিদ্বেষ মূলক মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উনি জানেন না যে, পশ্চিমবঙ্গের বেশীর ভাগ মাদ্রাসাতে বর্তমানে ৫০% থেকে ৬০% অমুসলিম শিক্ষক এমনকি অনেক মাদ্রাসাতে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকা কর্মরত আছেন । প্রায় ৩০%-৩৫% অমুসলিম ছাত্র-ছাত্রী সুনামের সহিত লেখাপড়া করছে মাদ্রাসাতে। অমুসলিম ছাত্র-ছাত্রীরা মাদ্রাসা পর্যদের পরীক্ষায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে স্থান করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ।তাই শুভেন্দু বাবুর এই ধর্মীয় বিভেদের উস্কানি মূলক রাজনীতি কে ধিক্কার জানাই। তিনি অবিলম্বে ক্ষমাপ্রার্থনা করে তার মন্তব্য প্রত্যাহার করুক।
আফতাব মল্লিক, সহকারী শিক্ষক,সারদা তাজপুর হাই মাদ্রাসা, হাওড়া : আমার মাদ্রাসার নাম সারদা তাজপুর হাই মাদ্রাসা ( হাওড়া)। এর আগে ছয়ানি ইসলামীয়া সিনিয়র মাদ্রাসাতে ( উত্তর চব্বিশ পরগনা) ছিলাম। ২০১১ সাল থেকে চাকরি করছি। আমার দুই মাদ্রাসাতেই হিন্দু ছাত্রছাত্রী আছে এবং হিন্দু শিক্ষক আছেন। জীবনে কেউ কোন অসহিষ্ণুতার সম্মুখীন হয়নি বা হননি। এখানে জঙ্গি তৈরি হয়না, ভবিষ্যতের সুনাগরিক তৈরি হয়।
আমিনুল ইসলাম, রসায়ন বিদ্যার সহকারি শিক্ষক, মাওলানা জামাল উদ্দিন সিদ্দিকীয়া হাই মাদ্রাসা, হাওড়া : মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বতর্মানে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুকরণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীদের উৎসাহিত করার জন্যই গঠিত হলেও বতর্মানে অনেক অমুসলিম ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন মাদ্রাসাতে শিক্ষার উন্নত পরিকাঠামো ও সম্প্রীতির বাতাবরণে প্রকৃত শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ শিখে একজন দায়িত্বশীল সমব্যাথী নাগরিক হচ্ছে।
দেওয়ান আবুল হায়াত জীব বিদ্যার সহকারি শিক্ষক মুর্শিদাবাদের গঙ্গা ধারি হাই মাদ্রাসা : আমি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছি, ডজন খানেক ডাক্তার,শত শত ইন্জিনিয়ার, শিক্ষক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, যারা গুনে ও মানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চাইতে উত্তম। এক নরাধম তার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্বার্থে মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন ।এটা তার জঘন্য রাজনৈতিক বক্তব্য বলে আমি মনে করি।
শেখ রফি মোহাম্মদ, সহকারি শিক্ষক কলাছাড়া হাই মাদ্রাসা হুগলী : মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে যে কটু মন্তব্য করেছেন একজন জন প্রতিনিধি হিসাবে সর্বোপরি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হিসাবে তা ধিক্কার জানানোর কোনো ভাষা নেই। উনার সরকার পোষিত মাদ্রসার শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই ,এখানে মধ্য শিক্ষা পর্ষদের যা সিলেবাস ও বই সেগুলো ই পড়ানো হয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে wbchse এর যা সিলেবাস ও বই সেগুলোই শিক্ষাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়, রাজ্য সরকারের মাদ্রাসা শিক্ষা অধিকর্তা অধীনে প্রতি বছর অডিট হয়,এবং পরিচালন সমিতি তে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়,রাজ্যের প্রচুর মাদ্রাসার পরিচালন সমিতি তে অ মুসলিম অভিভাবক প্রতিনিধি ও অ মুসলিম শিক্ষক প্রতিনিধি এমন কি আমাদের মাদ্রাসা তে ও ব্রাহ্মণ শিক্ষক প্রতিনিধি বর্তমান এবং acedemic কাউন্সিল এও চার জনের মধ্যে দুজন অ মুসলিম শিক্ষক প্রতিনিধি বিদ্যমান, আশা করি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই তার প্রতিবাদ করবে।
( পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের adhoc কমিটির পক্ষে শেখ রফি মোহাম্মদ ,পদার্থ বিদ্যার শিক্ষক ও পরিচালন সমিতির শিক্ষক প্রতিনিধি হুগলি কলাছাড়া হাই মাদ্রাসা )