ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে মূল মামলা চলাকালীন সময়ে শীর্ষ আদালতে অন্য আবেদন খারিজ! কোন পথে ওবিসি শংসাপত্র মামলার ভবিষ্যৎ?
বিশেষ প্রতিনিধি : পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশকে সংযুক্ত করে ২০১০ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ওবিসি অন্তর্ভুক্ত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা কার্যত খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে রাজ্য সরকার সহ একাধিক সংগঠন। সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে এখন চলছে শুনানির কয়েকটা হয়েছে। এরই মাঝে গত ৬ই জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে অবনী কুমার ঘোষ নামে এক ব্যক্তি গত ২২ মে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আলাদা আবেদন দাখিল করে। গত ৩১ শে জানুয়ারি এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের বেঞ্চ এই আবেদন খারিজ করে জানিয়ে দেয় কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে কোনরকম হস্তক্ষেপ তাঁরা করবেন না। অর্থাৎ ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের যে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্ট দিয়েছে তাতে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করতে চাইছে না সুপ্রিম কোর্ট।
উল্লেখ্য,গত বছর ২২ মে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দেয়। হাই কোর্ট জানায়, ২০১০ সালের পর থেকে পদ্ধতি মেনে ওই সব সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়নি। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। পরে রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশনও। সেই মামলার শুনানি শীর্ষ আদালতে চলছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানি রয়েছে। সেটিরও শুনানি হচ্ছে বিচারপতি গভাইয়ের বেঞ্চেই। এরই মধ্যে এ বিষয়ে নতুন করে দায়ের হওয়া মামলা খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত।
ওবিসি শংসাপত্র সংক্রান্ত বিষয়ে হাই কোর্টে মামলাটি করেছিলেন অমলকুমার দাস। ওই মামলায় তাঁর পক্ষে রায় দেয় হাই কোর্ট। বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয় প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রথম সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য। শীর্ষ আদালতে মূল মামলাটি চলছে রাজ্য সরকার বনাম অমলকুমার দাসের। এরই মধ্যে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ৬ জানুয়ারির নতুন মামলা করে অবনীকুমার ঘোষ। এই মামলাটিতে মোট তিনটি বিবাদী পক্ষ রয়েছে। রাজ্য সরকার, পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি কমিশন এবং অমলকুমার দাস। নতুন মামলাটিতে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, হাই কোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ করা হবে না। তাঁর মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। দুই বিচারপতির বেঞ্চ এও জানিয়েছে, যদি এই সংক্রান্ত কোনও আবেদন বিচারাধীন থাকে, তবে তা-ও নিষ্পত্তি করা হল।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর প্রশ্ন উঠেছে ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের যে নির্দেশ হাইকোর্ট দিয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার আবেদন করেছে তার পরিণতি কি হতে পারে? তাহলে কি ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হয়ে যাচ্ছে? সুপ্রিম কোর্ট অবনী কুমার ঘোষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনভাবেই কলকাতা হাইকোর্টের ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করবে না শীর্ষ আদালত! এর ফলে বাকি আবেদন গুলি কি প্রাসঙ্গিকতা হারালো?আইনজীবীদের এক পক্ষের মতে, ওই সংক্রান্ত অন্য আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। ফলে মূল মামলাটিও খারিজ হয়ে যেতে পারে। তা না-হলে ওই আবেদনটি মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত করার নির্দেশ দিত সুপ্রিম কোর্ট। যেমন এসএসসির ২৬ হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলায় একাধিক আবেদন খারিজ না করে মূল মামলার সঙ্গে যুক্ত করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আবার অন্য পক্ষের আইনজীবীদের মতে, যে আবেদনটি খারিজ করা হয়েছে, তাতে বিবাদী পক্ষের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। মূল মামলা যে খারিজ, এমন কোনও নির্দেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। মূল মামলার শুনানি অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছে। সব পক্ষের আইনজীবীরা একে একে সওয়াল করছেন। মাঝখানে মামলা খারিজ, এটি ধরে নেওয়া মুশকিল। ফলে এখনই এটি বলা সম্ভব নয় যে রাজ্যের মামলায় হাই কোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ করেনি সুপ্রিম কোর্ট। তাঁদের মতে, ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলা শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা ১৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি গভাইয়ের বেঞ্চে স্পষ্ট হতে পারে।
হাই কোর্টে মূল মামলাকারীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তের মতে, নতুন মামলাটি খারিজ হওয়ায় মূল মামলায় প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের আবেদন করা মূল মামলায় অবশ্যই এটির প্রভাব পড়বে। কারণ একই ধরনের একটি মামলা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারাধীন মামলাটিতেও তার প্রভাব পড়বে।” সুদীপ্ত জানান, একই নির্দেশের প্রেক্ষিতে একটি মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে। তখন মূল মামলাটিও খারিজ করার জন্য তাঁরা আদালতে আবেদন জানাবেন।
হাই কোর্টের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টে এ বিষয়ে একটি মামলা করেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিমও। তিনিও মনে করছেন, মূল মামলার উপর এই নির্দেশের প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, “মূল মামলাটি এখনও চলছে। কিন্তু এর মধ্যে নতুন একটি মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ওই মামলায় রাজ্য সরকার অনুপস্থিত। কোনও স্পেশ্যাল লিভ পিটিশনের সময়ে ক্যাভিয়েট দাখিল করা না থাকলে, তাঁদের সেই মামলায় যুক্ত করা হয় না। কিন্তু রাজ্যের তো নিজস্ব স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল রয়েছে। কোন কোন মামলা রাজ্যের বিরুদ্ধে, সেগুলি দেখার জন্যই রাজ্যের নিজস্ব স্ট্যান্ডিং কাউন্সিল থাকে। একটি মামলা খারিজ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সেখানে উপস্থিত হয়ে জানাবে না মূল মামলার কথা? তারা সেটি না জানানোর ফলে অন্য পক্ষ পরের শুনানিতে দেখাবে, মামলাটি খারিজ হয়ে গিয়েছে।” ফিরদৌসের দাবি, রাজ্য অনুপস্থিত থেকে একটি পক্ষকে মামলায় সাহায্য করে দিয়েছে।