রেভারেন্ড লালবিহারী দে’র দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উদযাপন
প্রতিনিধি বাংলার জনরব, কলকাতা: গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ কলকাতা বিধান সরণী স্থিত সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ সভাগৃহে সশ্রদ্ধায় উদযাপন হলো রেভারেন্ড লালবিহারী দে’র দ্বিশত বর্ষ জন্মোৎসব। লালবিহারী দে’র জীবন ও সৃষ্টি বিষয়ক আলোচনা, গুণীজন সংবর্ধনা ও গ্রন্থ প্রকাশের প্রাঞ্জল অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে শহরের ব্যতিক্রমী সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংস্থা সম্প্রীতি আকাদেমি ও সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ। অনুষ্ঠানের শুভ সূচনায় স্তোত্র পাঠ করেন বাসব চক্রবর্তী এবং উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন বনজিৎ দাস।
সভাগৃহে অধ্যাপক, গবেষক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী, সাহিত্যিক ও বোদ্ধা দর্শক শ্রোতাদের উপস্থিতিতে রেভারেন্ড লালবিহারী দে’র উল্লিখিত বিষয়ে ধূর্যটিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে আলোচনায় সভায় আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে অংশ নেন মুনমুন চট্টোপাধ্যায়, মধুমিতা আচার্য।
আমন্ত্রিত বক্তা মধুমিতা আচার্য লালবিহারী দে’র ‘ফোকটেলস অব বেঙ্গল’ নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে লালবিহারী দে কিভাবে বাংলার চিরাচরিত লোককথা সংগ্রহ করে ইংরেজিতে অনুবাদ করে গ্রন্থবদ্ধ করেছিলেন সে সম্পর্কে সবিস্তারে আলোকপাত করেন। কবি অরুন মিত্রর ‘জনম দুঃখিনী ঘর’ কবিতার মধ্যে দিয়ে তিনি মনোগ্রাহী বক্তব্য শুরু করেন।
বক্তা মুনমুন চট্টোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে কিশোর লালবিহারী দে তাঁর বাবার মৃত্যুর পর কত দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে পড়াশুনা করে ‘হেনরি কমেন্ট্রি অফ দ্য বাইবেল’ বইটি পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং খৃষ্ট ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ধর্ম গ্রহণ করে পরবর্তীতে ‘গোবিন্দ সামন্ত অফ কাঞ্চনপুর’ নামে কালজয়ী উপন্যাস রচনা করেছিলেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেন।
ধূর্যটিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সভাপতির ভাষণে রেভারেন্ড লালবিহারী দের ব্যাক্তিত্ব কে কিভাবে জেনেছিলেন তা উল্লেখ করেন। তিনি লালবিহারী দে’র ‘গোবিন্দ সামন্ত অফ কাঞ্চনপুর ‘ উপন্যাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন উপন্যাসটি মূলতঃ নিবর্তিক দূরত্ব নিয়ে লেখা। উপন্যাসে ঘটনাক্রমে সতী দাহর বর্ণনা আছে। তিনি বলেন লালবিহারী দে’র বেঙ্গল ফোকটেলসের তিনটি গল্প যখন স্কুল পাঠ্য হয়েছে তখন তাঁর এই উপন্যাসটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হোক।
এদিন অনুষ্ঠানে সম্প্রীতি আকাদেমির তরফে সম্প্রীতি সম্মান ২০২৪ প্রদান করা হয় অধ্যাপিকা কাকলি ধারা মন্ডল এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক স্প্যানিশ সাহিত্যের অনুবাদক তরুণ কুমার ঘটককে। ‘নবীন গবেষক উজ্জীবন সম্মান-২০২৪’ প্রদান করা হয় গবেষক নাসিমা রহমানকে।
এদিন অনুষ্ঠানের উল্লেখনীয় দিক গ্রন্থ প্রকাশ। বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি অভিষেক রথ, মোনালিসা দাস, সঞ্জীৎ সানি, সুশীল সাহা, আশিস হীরা এবং সম্প্রীতি আকাদেমির সম্পাদক প্রোফেসর সুরঞ্জন মিদ্দে সমবেতভাবে প্রকাশ করেন ‘বহুমাত্রিক বঙ্গসংস্কৃতি’ নামক তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থটি। আনুষ্ঠানিক প্রকাশের পর গ্রন্থটি সম্পর্কে লেখক সুরঞ্জন মিদ্দে বলেন দীর্ঘ পঁচিশ বছর যাবৎ তিনি দোম আন্তেনিও থেকে ফাদার দ্যতিয়েন সম্পর্কে গবেষণামূলক ২৪ টি প্রবন্ধ সহ বঙ্গসংস্কৃতি বিষয়ে আরও যা লিখেছেন সেসবই এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।
_____________________________________