নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের আচমকা পদত্যাগ! জল্পনা ও রহস্য দানা বাঁধছে ! কী সেই রহস্য? জানতে হলে ক্লিক করুন
সেখ ইবাদুল ইসলাম : দেশের নির্বাচন কমিশনারের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অরুন গোয়েল যা নিয়ে সমগ্র দেশ জুড়ে শোরগোল পড়েছে। আগে থেকে নির্বাচন কমিশনারের একটি পদ শূন্য ছিল আর অরুনের পদত্যাগের জেরে আরেকটি পদ শূন্য হয়ে গেল। ফলে একা মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার ছাড়া আর কেউ থাকলেন না। আইন অনুসারে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এককভাবে কমিশন চালাতে পারেন না। ফলে সংকটে পড়বে কমিশনের কাজকর্ম। লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হতে আর মাত্র সপ্তাহখানেক বাকি রয়েছে। এরই মাঝে দ্বিতীয় নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ নিঃসন্দেহে সংকট তৈরি করবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কয়েকদিন আগেও অরুণ গোয়েল অন্যতম নির্বাচন কমিশনার হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসেছেন। বিভিন্ন জায়গায় তিনি বৈঠক করেছেন। নির্বাচন কমিশন যেসব সংস্থাগুলিকে নিয়ে নির্বাচন এর কাজকর্ম করে থাকে, সেই সব সংস্থাগুলির সঙ্গে তিনি বৈঠকের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন হঠাৎ কি এমন হলো ? যে শনিবার তাকে পদত্যাগ করতে হলো? এ নিয়ে দেশ জুড়ে রহস্য দানা বাঁধছে। তাহলে কি আব কি বার চারশো পার স্লোগান দেওয়া বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদি এখনই নির্বাচন চাইছেন না। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই আরেকটা নির্বাচন কমিশনের পদ শূন্য হয়। তাতে নিযুক্তি দিতে এত দেরি কেন? যে আইন সংসদে পাস হয়েছে সেই আইন দিয়ে যদি নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা না যায় তাহলে অন্তত আগের আইনকেই কার্যকরী করে তার মাধ্যমে নিয়োগ করতেই পারতেন নরেন্দ্র মোদি! তা করলেন না কেন!
২০২২ সালে নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালের পঞ্জাব ক্যাডারের আমলা অরুণকে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের পদ রাজীবের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। তার পরেই ওই পদে বসার কথা ছিল অরুণের। তাঁর মেয়াদ রয়েছে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন অরুণ গোয়েলের নিয়োগ নিয়ে দু বছর আগেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল এত তাড়াহুড়ো করে কেন নিয়োগ! সেই অরুণের পদত্যাগ নিঃসন্দেহে তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল! এই মামলারই নিযুক্তি নিয়ে রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি হাই পাওয়ার কমিটি থাকা দরকার ।কারণ যিনি নিযুক্তি করবেন তারই ভোটে তিনি পরিচালনা করবেন এটা হতে পারে না। তাই সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাব ছিল যে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য যে কমিটি হবে সেই কমিটি হবে তিনজনের। প্রধানমন্ত্রী সেই কমিটিতে থাকবেন, বিরোধী দলনেতা সেই কমিটিতে থাকবেন এবং দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি সেই কমিটিতে থাকবেন। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে কার্যত নরেন্দ্র মোদির সরকার ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে নতুন করে সংসদে আইন পাস করেছিলেন গতবছরে। সেই আইনে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগের জন্য তিনজনের কমিটি থাকবে। সেই কমিটিতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে, দ্বিতীয় জন হবেন বিরোধী দলনেতা, তৃতীয়জন হবেন প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত কোন একজন মন্ত্রী। ফলে নির্বাচন কমিশনকে কুক্ষিগত করার সব রকম প্রচেষ্টা করেছে বিজেপি সরকার।
অরুণ গোয়েল মোদি সরকারের খুব কাছের লোক হওয়া সত্বেও নির্বাচনের মুখে কেন পদত্যাগ করলেন তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে! ইভিএম নিয়ে যে অভিযোগ সমগ্র দেশ জুড়ে চলছে এবং কিছু সুশীল সমাজের মানুষ ইভিএম এর বিরুদ্ধে প্রচার অভিযানে নেমেছে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নীরবতা কি শেষ পর্যন্ত অরুনের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বহিঃপ্রকাশ হল। নাকি রাজীব কুমারের সঙ্গে অরুনের দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছিল যে কারণেই শেষ পর্যন্ত অরুণকে বিদায় নিতে হলো?
অরুণের হঠাৎ পদত্যাগ নিয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে বিঁধতে শুরু করেছে বঙ্গের শাসকদল তৃণমূল। দলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখেল এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনারের পদটি এখন শূন্য। তার মানে এখন নির্বাচন কমিশন বলতে এক জন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এ বার নরেন্দ্র মোদী দু’জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন।’’ কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, “এটা ইলেকশন কমিশন না ইলেকশন অমিশন (বাদ যাওয়া)? লোকসভা ভোটের ঠিক আগেই ভারতে এখন মাত্র এক জনই নির্বাচন কমিশনার রয়েছেন। কেন?”