চলে গেলেন আমাদের আপনজন প্রাক্তন সাংসদ ও বিধায়ক বিশিষ্ট আইনজীবী ইদ্রিস আলী
সেখ ইবাদুল ইসলাম : চলে গেলেন ইদ্রিস আলী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। রেখে গেলেন তিনি স্ত্রী এক পুত্র দুই কন্যাকে।রাজ্যের সংখ্যালঘুর সমাজে জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। হুগলি জেলার গোঘাট থানার ভুরকুন্ডা গ্রামের সন্তান । বাবা ছিলেন কলকাতার সম্ভ্রান্ত একজন ব্যবসায়ী, ছেলে বিশিষ্ট আইনজীবী হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করলেও সাধারণ মানুষের জন্য তিনি নেমেছিলেন রাজনীতিতে।
বিশেষ করে বাঙালি মুসলমান সমাজের উন্নয়নের জন্য এবং তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বাম সরকারের আমলে ইদ্রিস আলীর আন্দোলন ইতিহাসে লেখা থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। কিন্তু এই ক্যান্সার তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি কয়েক মাস আগে পর্যন্ত তিনি ভগবানগোলার বিধায়ক হিসেবে গ্রামে গঞ্জে ঘুরে বেড়াতেন। বসিরহাটের সাংসদ হিসেবে তিনি মানুষের সঙ্গে একাত্মবোধ তৈরি করেছিলেন একইভাবে উলুবেরিয়ার বিধায়ক হিসাবেও উলুবেরিয়ার মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল নিবিড়।
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে লাল দুর্গ হিসাবে পরিচিত ভগবানগোলায় প্রার্থী করেছিলেন সেই লাল দুর্গে ভাঙন ধরিয়ে ইদ্রিস আলী লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য মরহুম ইদ্রিস আলী যেভাবে বাঙালি মুসলমান সমাজের জন্য কাজ করেছেন বা কাজ করার চেষ্টা করেছেন সেভাবে তার দল তাকে স্বীকৃতি দেয়নি। ভগবানগোলার মতো লাল দুর্গে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করার পর এ বাংলার সংখ্যালঘু সমাজ প্রত্যাশা করেছিল ইদ্রিস আলী অন্তত মন্ত্রিত্ব পাবেন। কিন্তু তাকে তা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কোন দুঃখ ছিল না ইদ্রিস সাহেবের। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় যখনই তাকে আমি এ বিষয়ে কটাক্ষ করেছি তখনই তিনি হেসে উত্তর দিয়েছেন মন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করিনি মানুষের সেবা করার জন্য রাজনীতি করতে এসেছি। যাইহোক ইদ্রিস আলীর মৃত্যু এ বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের আরেকটা নক্ষত্র পতন বলেই ধরে নেওয়া যায়। ইদ্রিস সাহেব মানুষ হিসাবে খুব বড় মাপের মানুষ ছিলেন এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো তিনি সবার কথা মন দিয়ে শুনতেন। যেটা আজকের রাজনীতিবিদদের কাছে প্রত্যাশা করা যায় না। কোন কাজ করতে পারুক আর নাই পারুক অন্তত চেষ্টাটুকু করতেন। বাঙালি মুসলিম সমাজের শেষ মরুদ্দ্যান ছিলেন ইদ্রিস আলী।
তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যেই যে সকল বাঙালি মুসলিম নেতা আছেন বর্তমানে, তাদের মধ্যে যে আন্তরিকতা আমরা দেখিনি তার চেয়ে অনেক বেশি আন্তরিক ছিলেন ইদ্রিস আলী। সংখ্যালঘু দফতরের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু সেলের নেতারা পর্যন্ত বর্তমান তৃণমূলের নেতৃত্ব যে আত্মম্ভরিতা দেখান অন্তত ইদ্রিসের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল।
ইদ্রিস আলীর এই চলে যাওয়া এ বাংলার রাজনীতির অঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হলো। ইদ্রিস আলীর চলে যাওয়া এ বাংলার সংখ্যালঘু সমাজে এক নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হল। তিনি যতদিন এই পৃথিবীতে ছিলেন ততদিন তাকে নিয়ে আমরা অনেক সময় কটাক্ষ করেছি কিন্তু আজ তার মৃত্যুর পরেই আমরা বুঝতে পারবো তিনি কি ছিলেন? নিজে একজন পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন যেখানেই যান না কেন প্রতিটি জায়গাতেই তিনি নামাজ পড়তেন। আর এই পরহেজগার ব্যক্তি মৃত্যু শুক্রবার রাত্রি দুটো কুড়ি মিনিটে হল আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদাউসে দাখিল করুক এই দোয়া করছি।