কলকাতা বিনোদন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য 

একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা আহসাহানুল হক মিনু, বাংলাদেশের মাটিকে আমেরিকার হাব হতে দেব না

শেয়ার করুন

মোহাম্মদ সাদউদ্দিন, কলকাতা: সাম্রাজ্যবাদ মানবতা বিরোধী। এরা সন্ত্রাসবাদী ও মৌলবাদী তৈরি করে । এরাই দেশে দেশে সম্পদের দখলদারি করে। এরা এমন কোনো কাজ নেই যা করতে পারে না। তাই বাংলাদেশে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের আধিপত্যবাদ যেমন মানব না, তেমনি বাংলাদেশকে কখনোই আমেরিকার হাব হতে দেব না। রক্ত দিয়ে তাকে রুখবই। কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসা বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা, নাট্যব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্রাভিনেতা মুক্তমনা বুদ্ধিজীবী আহসানুল হক মিনু একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অভিমত ব্যক্ত করলেন।

তিনি ইতিহাসের জের ধরে বললেন, ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল পৃথক ধর্মরাষ্ট্র পাকিস্তান। সেই পাকিস্তান কি সব সমস্যার সমাধান করতে পেরেছিল? তারা পূর্বপাকিস্তানকে উপনিবেশিক শোষণ চালিয়েছে। আমাদের উপর রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণ, নিপীড়ন ও অত্যাচার চালিয়েছে। আমাদের ইতিহাস -ঐতিহ্যবাহী পূর্ববাংলা নামটা মুছে দিয়ে তারা চালু করেছিল পূর্বপাকিস্তান। জিন্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। পূর্ববাংলার মানুষ তা মেনে নেননি। তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ভাষা আন্দোলন করেছেন। ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছেন। আমেরিকা মদতপুষ্ট পাকিস্তান ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। এই যুক্তফ্রন্ট সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন মজলুম জননেতা মৌলানা ভাসানী, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী । গোটা পঞ্চাশ , ষাট ও সত্তরের দশক পাকিস্তান বাঙালিদের উপর সবধরণের বৈষম্য চালিয়েছে। সবধরণের স্টিম রোলার চালিয়েছে। আর তার মদতদাতা ছিল অমানবিক আমেরিকা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আমাদের সর্বাধিনায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্ক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তাকে ক্ষমতায় যেতে দেয়নি।

Advertisement

বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তি যুদ্ধের ডাক দেন যা তখন আমার মতো এক কিশোরকে অভিভূত করে। আর সেই মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধিতা করে আমেরিকা। সেই আমেরিকা কেন আমাদের দেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাতব্বরি করবে? এই আমেরিকা তো মুক্তিযুদ্ধের সময় সপ্তম নৌবহর পাঠানোর হুমকি দেয়। রাশিয়ার পাল্টা হুমকিতে তারা থেমে যায়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে জিতবে বা কে হারবে তা ঠিক করবেন বাংলাদেশের মানুষ, আমেরিকা তাবেদারি করবে কেন? এটা একজন মুক্তি যোদ্ধা হিসাবে কোনোদিন মেনে নেব না।

উল্লেখ্য, আহসানুল হক অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া সদর থানার মালতিনগরের ভূমিপুত্র। বর্তমানে ঢাকার ধানমণ্ডিতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মাত্র ১৬-১৭ বছর বয়সে তিনি ‘৭১-র রণাঙ্গনে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাক হানাদার বাহিনীর নানান নির্যাতন ও নজরদারির মধ্যে পড়েন। কিন্তু এই দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয় হাসিল করেন ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু তারপরেও যৌথবাহিনীর সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট -হিলি সীমান্তে অবস্হান করেন। সেই সময় ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া যৌথবাহিনীর ছবি করে। কলকাতা সফরে এসে তিনি সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। মনের ভিতর থেকে তিনি ভুলতে পারেননি তার বাল্যবন্ধু ও প্রাথমিক স্কুলের সহপাঠী তপন ভট্টাচার্যকে। তাই ৫৮ বছর পর আহসানুল হক মিনু (৬৯) বারাকপুরে গিয়ে দেখা করেন তার বন্ধু তপনকে। দুজনেই বগুড়ার একই গ্রামের ভূমিপুত্র। তপনের স্ত্রী মিনুকে ভাই বলে সম্বোধন করেছেন বলে ভাইফোটার দিনে মিনু ভাইফোটাও নেন।

অভিনয় তার জীবনের ব্রত, সাধনা ও পেশা। তাই তার অভিনয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সম্প্রীতি আর ধর্মনিরপেক্ষতাকে নিয়ে। ৩৫ টি সিনেমা, ১৬ টি ধারাবাহিক নাটক এবং ২০০ টি একক নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। গৌতম ঘোষ পরিচালিত ” মনের মানুষ ” ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে ” পদ্মা নদীর মাঝিতে তিনি অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন। ইউ টিউবে তার নাটক ভীষণ জনপ্রিয়। কলকাতায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত এলাকা তিনি ঘোরেন। যান বিশ্বনন্দিত চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষের বাড়িও।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ