শিক্ষায় একমাত্র উন্নয়নের চাবিকাঠি : আরফান আলী বিশ্বাস
বিশেষ প্রতিনিধি : শিক্ষায় একমাত্র উন্নয়নের চাবিকাঠি! শিক্ষার কোন বিকল্প নেই আমাদের প্রত্যেকের উচিত শিক্ষাকে হাতিয়ার করা। আজ শনিবার ১৮ই নভেম্বর কলকাতার মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন হাই মাদ্রাসায় আয়োজিত এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন ডাইরেক্টর অফ মাদ্রাসা এডুকেশন আরফান আলী বিশ্বাস এই কথাগুলি বলেন। এদিন মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশনের পক্ষ থেকে প্রাক্তন এই আমলাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা গ্রহণ করে নিজের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে আরফান আলী বিশ্বাস বলেন, আমরা যখন পড়াশোনা করেছি তখন এত যোগাযোগের উন্নতি ছিল না। আমাদের মাস্টারমশাইরা এত চাকচিক্যময় ছিলেন না কিন্তু তাদের মধ্যে যে আগ্রহ উদ্যোগ এবং শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা ছিল তার জন্যই আমরা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। তিনি খুব দুঃখের সঙ্গে বলেন, বর্তমান সময়ে শিক্ষকদের বেতন বেড়েছে, তাদের জীবনের অনেক পরিবর্তন এসেছে কিন্তু আমাদের মাস্টারমশাইদের মতো শিক্ষার প্রতি সেই ভালোবাসা আছে কিনা আজ তা প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে।
তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা ভালো করে পড়াশোনা করো। পড়াশোনা করার মধ্য দিয়ে সমাজের পরিবর্তন আসা সম্ভব। বিশ্বের সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার একমাত্র পথ হলো শিক্ষা। তাই তোমাদের সবাইকে শিক্ষাকে ভালো করে আত্মস্থ করতে হবে। প্রাক্তন এই আমলা বক্তব্য রাখতে গিয়ে মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সহ শিক্ষক শিক্ষিকাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনারা আপনাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার বিকাশের জন্য পার্শ্ববর্তী যে স্কুলগুলো ভালো ফল করছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে ওরিয়েন্টেশন ক্যাম্প করলে আপনাদের পড়ুয়ারা উপকৃত হবে। এছাড়া তিনি এদিন বলেন যে আমাদের সমাজের যারা বিশিষ্ট ব্যক্তি তাদেরকে নিয়ে আলোচনা সভা করার মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি এই মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করে যারা সমাজের সুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদেরকেও এখানে আনা যেতে পারে এবং তাদেরকে এই ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে এদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা যেতে পারে বলে আরফান আলী বিশ্বাস মন্তব্য করেন।
এদিনের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাতঘরা হাই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেখ ইবাদুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে আরফান আলী বিশ্বাস সাহেবকে বহুদিন ধরে চিনি। তিনি এমন একজন আমলা ছিলেন যিনি সত্যিকার অর্থে সমাজের জন্য দেশের জন্য এবং শিক্ষার জন্য কাজ করে গেছেন। আজকের দিনে যা এক ব্যতিক্রমী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। তিনি সমালোচনা সহ্য করতেন আর সমালোচকদের গুরুত্ব দিতেন এটাই আরফান আলী বিশ্বাস সাহেবের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল।
এদিনের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক ও সমাজকর্মী গোলাম মোস্তফা সাহেব বলেন, শিক্ষার জন্য সমাজের জন্য আরফান আলী বিশ্বাস নিরবে কাজ করে গেছেন। এদের মূল্যায়ন হওয়া খুবই জরুরী। মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আরাফাত আলী মিদ্যা বলেন, আমি প্রথম যেদিন এই মাদ্রাসার দায়িত্ব নিয়েছিলাম সেদিনই আমার সহকর্মীদের বলেছিলাম আপনারা মাদ্রাসায় চাকরি করলেও মনে রাখবেন আপনাদের যোগ্যতা কোন অংশেই কম নয়। তাই আমাদের মাদ্রাসাকে এই এলাকার যেকোনো স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মূল্যায়ন করতে হবে। আমরা যদি সকলে মিলে এই কাজ করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা সাফল্য পাব। আরফান আলী বিশ্বাস স্যার যে পরামর্শ আমাদের দিয়ে গেলেন তা আমরা যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করব কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য আরফান সাহেবরা যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন যেভাবে কাজ হতো আজকের দিনের সেভাবে কাজ হচ্ছে না সেটাই আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।
এদিনের সভার অন্যতম আয়োজক বিশিষ্ট শিক্ষক ও আল আমিন মিল্লি মিশনের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল ওহাব বলেন, আমরা এমন একজন মানুষকে সংবর্ধনার জন্য আজকে বেছে নিয়েছি,যে তিনি শিক্ষার জন্য সমাজের জন্য এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন। এবং এখনো করে চলেছেন। জিডি একাডেমির মধ্য দিয়ে আরফান আলী বিশ্বাস সাহেব সমগ্র রাজ্য জুড়ে সংখ্যালঘু সমাজের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করে চলেছেন। এই কাজের মূল্যায়ন হওয়া জরুরী আমরা আমাদের সামান্য কাজটুকু করতে পেরেছি। আর আরফান সাহেবরা যখন সরকারি দফতরের আমলা ছিলেন তখন তাদের কাছ থেকে আমরা যে সাহায্য এবং সহযোগিতা পেয়েছি,সমাজ যেভাবে পেয়েছে সাহায্য এবং সহযোগিতা পেয়েছে তা এক কথায় প্রশংসনীয়। তিনি আরো বলেন মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই এলাকার শিক্ষার প্রসারে নিরবে কাজ করে গেছে। এই মাদ্রাসা থেকে পাশ করে তিনজন চিকিৎসক হয়েছেন বেশ কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন আইনজীবী হয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। সুতরাং মাদ্রাসা হলেও মেধার বিকাশের ক্ষেত্রে আমরা নিরবে কাজ করে চলেছি বলে মাওলানা আব্দুল ওহাব সাহেব মন্তব্য করেন।
এদিনের সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বদরুদ্দোজা হারুন, মনু মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউশন এর শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল হামিদ, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শামসুল হক, শিক্ষক হালিম নস্কর, শিক্ষক বিপ্রকাশ মণ্ডল, শিক্ষিকা মৌমিতা চ্যাটার্জী, শিক্ষিকা শাকিলা পারভিন, শিক্ষিকা স্বাগতা বিশ্বাস, শিক্ষিকা সোনালী মার্জিত, শিক্ষিকা ইস্মোতারা, শিক্ষক শেখ ইব্রাহিম, শিক্ষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বিশিষ্ট সমাজসেবী শেখ মোহাম্মদ আরিফ, শিক্ষক মোহাম্মদ মহসিন, নাইয়ার ইকবাল শিক্ষা বন্ধু মোঃ সালাউদ্দিন প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ভূমি ও রাজস্ব দফতরের আধিকারিক তানভীর আহমেদ।