অন্যান্য কলকাতা 

পাঁচ মাসের মধ্যে মমতা সরকারের পতন হতে পারে! বাস্তব কী বলছে?

শেয়ার করুন

বুলবুল চৌধুরী: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর গতকাল শনিবার বলেছেন পাঁচ মাসের মধ্যে তৃণমূল সরকারের পতন হবে। রীতিমত হুংকার দিয়ে তিনি এই কথাটি বলেছেন। শান্তনু ঠাকুর বা সুব্রত ঠাকুরের এই ধরনের হুঁশিয়ারিকে অবশ্য পাত্তা দিতে চান না তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তবে এই ধরনের কথা কোন যুক্তিতে বলছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী!

একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যখন এই ধরনের কথা বলেন, তখন সেই কথাকে একেবারে ফাঁকা আওয়াজ বলে উড়িয়ে দেওয়া হলে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষতি হতে পারে। কারণ শান্তনু ঠাকুরের পর আজ রবিবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও একই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। শুভেন্দু অধিকারী কিম্বা শান্তনু ঠাকুর যতটা ফোকাস নিজেদেরকে প্রচারের আলোয় থাকার জন্য নানা সময় নানা ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করে থাকেন সেক্ষেত্রে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাধারণত কোন বিতর্কিত মন্তব্য করেন না। তাই তিনি যখন বলছেন, হতেই পারে ৫-৬ মাসের মধ্যে সরকারের পরিবর্তন তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।

Advertisement

কারণ দেশ জুড়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তার এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এই রাজ্যের শাসকদলের ছোট বড় থেকে শুরু করে মাঝারি সব ধরনের নেতা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের এমন কোন নেতাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যিনি কোনো না কোনো ভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তবে একথা অস্বীকার করা যাবে না শাসকদলের একটা অংশে সত্যিই সৎ এবং আদর্শবান নেতা রয়েছেন তারা কিন্তু দলের মধ্যে ব্রাত্য। আর বিধায়কদের একটা বড় অংশ নানা দুর্নীতির সঙ্গে যে যুক্ত আছেন তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি এবং পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যত এগোবে ততই তৃণমূল কংগ্রেস দলটি ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই এই দুর্নীতির মামলায় শিক্ষা দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী থেকে শুরু করে আধিকারিকদের অধিকাংশই জেলে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি যেভাবে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাতে আগামী দিনে এই রাজ্যের শাসকদলের বিধায়করা যদি দল ছেড়ে দেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যতই দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে ঢোকানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিক না কেন বাস্তব হল দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলে তার সাত খুন মাফ হয়ে যায়।

আমরা যদি একটু লক্ষ্য রাখি তাহলে দেখতে পাবো, সম্প্রতি গত দুসরা জুলাই মহারাষ্ট্র সরকারের যোগ দিয়েছেন এনসিপির নেতা অজিত পাওয়ার। তিনি মহারাষ্ট্রের মিলিজুলি বিজেপি সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হয়েছেন। অথচ ঠিক পাঁচ দিন আগে অর্থাৎ ২৭  জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মধ্যপ্রদেশের এক দলীয় সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন বিরোধীরা সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। বিরোধীদলগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত দল হল এন সি পি। সেই দলের এক নেতা কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন ওদের যদি দুর্নীতি করার অধিকার থাকে তাহলে আমারও অধিকার রয়েছে, ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। ঠিক পাঁচদিনের মাথায় কি এমন ঘটলো যে নেতার বিরুদ্ধে এবং যে দলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করলেন সেই দলের অন্যতম প্রথম সারির নেতা অজিত পাওয়ার মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেলেন? প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন ওই সভাতে মমতা সরকারকে নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! তিনি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেও কয়েক হাজার কোটি টাকার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন!

সুতরাং কেন্দ্রীয় সরকারের এই নজিরকে সামনে রেখেই এবার যদি রাজ্যে টার্গেট করে বেশ কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্ত বিধায়ককে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে কাজে লাগিয়ে দল ভাঙানোর চেষ্টা করা হয় তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাই শাসকদলের মুখপাত্র যতই হম্বিতম্বি করুক না কেন প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমবাংলার রাজনীতি এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যে কোন সময় তৃণমূল দলের বিধায়করা বেরিয়ে গিয়ে বাঁচার জন্য বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। তাই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আজকে যারা তৃণমূলে আছেন তারা যে চিরকাল তাদের দলে থাকবেন তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এ থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে এই রাজ্যে শাসক দলকে ভাঙার চক্রান্ত হচ্ছে আগামী দিনে শাসক দল যদি ভাঙ্গে তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘সরকার পাঁচ মাস ছ’মাস যখন খুশি পড়ে যেতে পারে। অসুবিধার তো কিছু নেই। সরকার কী ভাবে চলে? বিধায়কদের সমর্থনে। বিধায়কেরা হঠাৎ মনে করল, আমরা সমর্থন করব না। আমরা অন্য কাউকে সমর্থন করব। বিধায়কদের তো মনে হতেই পারে। না হওয়ার তো কিছু নেই।’’

আর কী কী কারণে সরকার পড়ে যেতে পারে, তা ব্যাখ্যা করে সুকান্তের সংযোজন, ‘‘আবার ধরুন, এমন গণআন্দোলন শুরু হল, যে বিধায়কেরা বলল, ‘আমরা আজ থেকে আর বিধায়ক পদে থাকব না।’ হাত জোড় করে সবাই বিধায়ক পদ ছেড়ে দিল। এরকমও গণআন্দোলন হতে পারে।’’ পাল্টা রাজ্য বিজেপির সভাপতিকে প্রশ্ন করা হয়, তেমন সম্ভাবনা কি আছে? জবাবে সুকান্ত বলেন, ‘‘সব সম্ভাবনাই আছে। রাজনীতিতে কোনও সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।’’

সুকান্ত মজুমদারের মত দূরদর্শী সম্পূর্ণ রাজনীতিবিদের এই ধরনের ব্যাখ্যা থেকে এটাই স্পষ্ট হচ্ছে বাংলার রাজনীতিতে কিছু একটা হচ্ছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেভাবে জনাদেশকে অগ্রাহ্য করে জোর করে ভোট করানোর চেষ্টা করেছে শাসক দল তাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট অসন্তোষ রয়েছে। আর সেই অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদলগুলো যদি গণ আন্দোলন শুরু করে দেয় তাকে সামলানোর ক্ষমতা অন্তত তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তিতে নেই। এমনিতে যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস পঞ্চায়েতে জয় পেয়েছে তাতে আর যাই হোক শাসকদলের নেতারা নৈতিকভাবে অনেকটাই জনগণের কাছে হেরে বসে আছেন। ফলে গণ আন্দোলন শুরু হলে তাকে সামলানোর ক্ষমতা শাসক দলের যে নেই তা আর বলার অপেক্ষায় রাখে না।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ