বারাসাত গান্ধী মেমোরিয়াল থেকেই যুগ্মভাবে প্রথম অনুসন্ধান আয়োজিত মাধ্যমিক প্রস্তুতির মে মাসের পরীক্ষায়
নাফিসা ইসমাতের প্রতিবেদন : রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনুসন্ধান কলকাতা বছরভর নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে চলেছে।
সম্প্রতি বিশ্ব পরিবেশ দিবসে রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলা থেকে ছাত্রছাত্রীরা অংশ নিয়েছিল নানা রকম প্রতিযোগিতামূলক অনলাইনের আয়োজনে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাঝে তাদের পড়াশুনোর অগ্রগতিও যাতে ঠিকমতো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে ব্যাপারে প্রখর দৃষ্টি রেখেছেন অনুসন্ধান কলকাতার পক্ষে অভিজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকারা। বিশেষ করে জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকে যারা বসতে চলেছে তাদের জন্য।
বিশিষ্ট শিক্ষক গৌরাঙ্গ সরখেল
আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য অনুসন্ধান কলকাতা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সিলেবাসের ভিত্তিতে অনলাইনে গ্রহণ করে প্রস্তুতি পরীক্ষা। প্রতি মাসের পরীক্ষার সিলেবাস নির্দিষ্ট করা হয় বোর্ডের বেঁধে দেওয়া ফরম্যাট অনুযায়ী। যাতে রাজ্যের যে কোনো জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের যেন পরীক্ষায় বসতে অসুবিধা না হয়। রাজ্যব্যাপী এই পরীক্ষার কো-অর্ডিনেটর বিশিষ্ট শিক্ষক গৌরাঙ্গ সরখেল জানালেন, এই পরীক্ষার জন্য কোনো অর্থমূল্য নেওয়া হয় না। তবে পরীক্ষার আগে অবশ্যই নাম নথিভুক্ত করতে হয়। এর জন্যও কোনোরকম ফিজ নেওয়া হয় না। গৌরাঙ্গবাবু জানালেন সাহসী, সৎ ও নিষ্ঠাবান ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই কাজে বিনা পারিশ্রমিকে এগিয়ে এসেছেন রাজ্যের অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আবার প্রতিমাসের নেওয়া এই পরীক্ষায় মেরিট অনুযায়ী রাজ্যস্তরে শীর্ষ বাছাই পরীক্ষার্থীকে উৎসাহিত করতে প্রতি মাসে পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন প্রখ্যাত প্রকাশন সংস্থা শিশু সাহিত্য সংসদের কর্ণধার দেবজ্যোতি দত্ত।
মে মাসের এই রাজ্য স্তরের পরীক্ষায় যুগ্মভাবে প্রথম হওয়া দুই ছাত্রই উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের। দৃশ্যত: খুশী এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শেখ আলী আহসান। গর্বভরে তাঁর ঘোষণা, আগামী দিনেও দেখবেন, আমাদের স্কুল থেকেই প্রথম হবে ছাত্ররা। কিসের ভিত্তিতে বলছেন এমন কথা। জানতে চাইলে তাঁর সোজাসাপ্টা উত্তর, আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকারা এদের জন্য আলাদা নজর দিয়ে থাকেন, আর ছাত্রছাত্রীরা খুবই বাধ্য, অভিভাবকেরাও অনেকখানি সহযোগী। মে মাসে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছে ঋদ্ধিরাজ সাহা এবং সোহান রহমান । দুজনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৬২, মোট ৭০ এর মধ্যে। ওদের মধ্যে মিল অনেক, শুধু ওরা দুজনেই নয়, স্কুলের এক ঝাঁক ছাত্র নিজেদের মধ্যে গ্রুপ স্টাডি করে মাধ্যমিক প্রস্তুতিতে এগিয়ে চলেছে এক নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। দুজনের কাছেই রাখা হয়েছিল কিছু প্রশ্ন।
যুগ্মভাবে প্রথম ঋদ্ধিরাজ সাহা
লপ্রশ্নগুলি হল :
1) অনুসন্ধান কলকাতার আয়োজনে রাজ্যব্যাপী মাধ্যমিক ২০২৪ প্রস্তুতি পরীক্ষা পর্বের মে মাসে তুমি যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছো, কেমন লাগছে?
2) মাধ্যমিকের প্রস্তুতি কেমন চলছে? একদম উপরের দিকে তোমার স্থান থাকবে তো?
3) সংক্ষেপে তোমার বাবা মা এবং পরিবার সম্বন্ধে বলো।
4) তোমার স্কুল সম্বন্ধে বল। স্কুলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে কিছু বল। পড়াশোনা ছাড়াও অন্যান্য দিক দিয়ে যেভাবে তোমাদের গড়ে তোলার ব্যাপারে স্কুল মনোযোগী, সে সম্পর্কে কিছু বল।
5) অনুসন্ধান কলকাতার পরীক্ষা এবং ক্লাস মাধ্যমিক ২০২৪ প্রস্তুতিতে কেমন কাজে লাগবে বলে মনে করছ।
6) পড়াশোনা ছাড়া লেখালেখি, নাটক, গান, খেলাধুলা, গল্প বই পড়া ইত্যাদি কোনটা তোমার কাছে বেশি আকর্ষণীয় এবং কেন তা দু এক কথায় যদি বলো।
ঋদ্ধিরাজের উত্তর :
1) খুবই ভালো লাগছে।
2) মাধ্যমিক প্রস্তুতি বলতে এখনো তেমন কিছু শুরু করিনি… এখন আমার প্রাথমিক target যত তাড়াতাড়ি সম্ভব syllabus শেষ করা। আপনাদের আশীর্বাদ থাকলে ভালো রেজাল্টের আশা করতে পারি। প্রথম সারিতে থাকতে পারবো কিনা জানিনা।
3) আমার বাবা পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক আর আমার মা housewife।
4) আমার স্কুল আমার কাছে সব দিক থেকে শ্রেষ্ঠ…স্কুল আমাদের পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও উৎসাহিত করে থাকে… নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে সর্বতোভাবে সাহায্য করে… এ কারণে আমি প্রধান শিক্ষক মহাশয়এর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
5) পরীক্ষাটি খুবই কাজে আসবে। প্রত্যেক মাসে এই পরীক্ষা হওয়ার ফলে আমাদের একবার নতুন করে revision হয়ে যাবে… মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই উপযোগী হতে চলেছে।
6) পড়াশোনার পাশাপাশি আমি গান করতে ভালোবাসি… সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত আমি গান ও গিটার শিখেছি…তারপর lockdown হওয়াই সেভাবে আর শেখা হয়নি… তারপর এখন পড়াশোনা চাপ…. তা এখন মাঝে মাঝে গল্পের বই পড়া হয়… পড়াশোনার মাঝে কিছুটা বিরতির সময় খানিকটা আনন্দ আর নতুন করে ভাবতে শেখায়… নতুন করে চিনতে শেখায়..
যুগ্মভাবে প্রথম সোহান রহমান
সোহান রহমানের উত্তর :
1. খুবই ভালো লাগছে। আমি অনুসন্ধান কলকাতার কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ আমাকে রাজ্যব্যাপী মাধ্যমিক ২০২৪ প্রস্তুতি পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
2. মাধ্যমিকের প্রস্তুতি ভালো চলছে। উপরের দিকে স্থান লাভ করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।
3. আমার ঠাকুরদা এবং ঠাকুরমা দুজনেই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা। আমার বাবা-মাও বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক ও শিক্ষিকা। আমার একমাত্র ভাই আমাদের বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠরত। আমার ঠাকুরদা ও ঠাকুমা প্রতিনিয়ত ভালো ফলাফল করার জন্য আমাকে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করেন। আমার বাবা এবং মা আমার পঠন পাঠনে সব সময় সমস্ত রকমের সহযোগিতা করেন এবং আমি যাতে ভালো ফলাফল লাভ করতে পারি তার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
4. আমার বিদ্যালয় পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা গণ আমাদের পাঠদানের ক্ষেত্রে খুবই আন্তরিক। মাননীয় প্রধান শিক্ষক মহাশয় ছাত্ররা যাতে ভালো ফলাফল করতে পারে তার জন্য *Mission 100* ক্লাসের ব্যবস্থা করেন। শৃংখলার দিকে কঠোরভাবে নজর রাখা হয়। তাছাড়াও খেলাধুলো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরীর চর্চা সহ বহুমুখী বিষয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে ছাত্ররা নিজেদেরকে আরো ভালোভাবে পড়াশোনার সঙ্গে অন্যান্য বিষয়ে সফল হওয়ার শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়।
5. পরীক্ষার পূর্বে, বিষয়ভিত্তিক ভুল ত্রুটি গুলো সংশোধন করে নিজেকে ভালো ফলাফলের জন্য গড়ে তুলতে অনুসন্ধান কলকাতার পরীক্ষা খুবই উপযোগী ও সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। এছাড়াও এই পরীক্ষার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং পরীক্ষা ভীতি দূর হবে।
6. পড়াশোনা ছাড়া গান ও খেলাধুলা আমাকে আকৃষ্ট করে। গানের মাধ্যমে মন সতেজ হয় এবং মনের ক্লান্তি দূর হয় ও খেলাধুলার মাধ্যমে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকে, মনসংযোগ বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুলো সচল থাকে।
জুন মাসের প্রস্তুতি পরীক্ষা নেওয়া হবে আগামী রবিবার ২৫ তারিখে। যথারীতি পরীক্ষা শুরু ঠিক সকাল ১১ টায় অনলাইন গুগল ফর্মে। পরীক্ষার সময় ৪০ মিনিট। এমসিকিউ সম্বলিত এ ধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে মাধ্যমিক প্রস্তুতির ১০০ শতাংশ সম্পূর্ণ হবে বলে দৃঢ় মত ব্যক্ত করেছেন অনুসন্ধান কলকাতার সহ-সভাপতি দুর্গাপুর বিজরা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজী নিজামুদ্দিন।