অন্যান্য কলকাতা 

Nawshad Siddiqui: আয়ারাম গয়ারাম রাজনীতির যুগে বাংলায় উজ্জ্বল নক্ষত্র পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী!

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম: পশ্চিমবাংলার রাজনীতিতে দল পরিবর্তন করা একটা সময় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হত। সিদ্ধার্থ শংকর রায় থেকে শুরু করে অজয় মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ বদরুদ্দোজা, এবিএ গনি খান চৌধুরী এরা সবাই মূল্যবোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। বিধান রায়ের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ার কারণে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন সিদ্ধার্থ শংকর রায় একই সঙ্গে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন। পরে ওই ব্যক্তি একই কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাজিত করে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। কোন সময় মূল্যবোধের রাজনীতিকে বিসর্জন দেননি এইসব মহান মানুষের া এটাই বাঙালির ঐতিহ্য। এটাই বাংলার গণতন্ত্র।

এবিএ গণি খান চৌধুরীও প্রথম বিধানসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন নির্দল প্রার্থী হিসেবে। পরবর্তীকালে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে, তারপর আর কোন সময় তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেননি। সৈয়দ বদরুদ্দোজাকে কেনার চেষ্টা করেছিলেন তৎকালীন কংগ্রেসের তাবড় তাবড় নেতারা বলে অভিযোগ, কিনতে পারেননি। শেষে হেরে গিয়েছিলেন লোকসভায় যেতে পারেননি। তবু তিনি আদর্শকে বিক্রি করে দেননি। অজয় মুখোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে বাংলা কংগ্রেস তৈরি করেছিলেন। তারপর কংগ্রেসের থেকে পাওয়া সমস্ত পদ তিনি স্বেচ্ছায় ত্যাগ করেছিলেন জনগণের আশীর্বাদ নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন দল ভাঙ্গিয়ে নয়।

Advertisement

এ সকল মহান মানুষেরা বাংলার গণতন্ত্রের স্বার্থে নজীর তৈরি করে গেছেন সেই নজীরকে ধারাবাহিকভাবে রক্ষা করার জন্য শপথ নিয়েছেন রাজ্যের আরেক বিধায়ক পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের পর আমরা যারা ৯০ দশক থেকে বাংলা রাজনীতির গতিপ্রকৃতি পর্যালোচনা করছে তারা দেখতে পেলাম এক নতুন ট্রেন্ড শুরু হল। দল ভাঙানোর ট্রেন্ড। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের ক্ষমতা আধিপত্যকে বজায় রাখার জন্য কংগ্রেস এবং সিপিএম বা বামফ্রন্ট ভাঙার জন্য তৎপর হয়ে পড়ল। এই প্রবণতা ছিল বিহার কিংবা উত্তরপ্রদেশে তৃণমূল কংগ্রেসের সৌজন্যে সেই প্রবণতা এসে পৌঁছালো বাংলাতে। কেন দল ভাঙানোর খেলা হবে ? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

সাধারণ মানুষ একজন ব্যক্তিকে একটি দলের প্রতীককে ভোট দিয়ে বিধানসভায় বা লোকসভায় পাঠাচ্ছেন। তাহলে যিনি সাধারণ মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে জিতে বিধানসভায় লোকসভায় কিংবা পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় গেলেন তিনি যখন দলত্যাগ করে শাসক দলে ফিরছেন তখন তিনি কি সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন না? আর ক্ষমতাশীন দলকেও মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে এই ধরনের প্রতারণা করা কতটা গণতন্ত্রের পক্ষে যুক্তিযুক্ত। আজকের বিরোধী দলনেতা তিনি একটা সময় মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদকে ভেঙে খানখান করে ফেলেছিলেন। অধীর চৌধুরীর কংগ্রেস দল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের ক্ষমতায় থাকার পরেও তারা কাজ করতে পারছিলেন না। একইভাবে মালদা জেলা পরিষদকেও ভেঙে তছনছ করে দিয়েছিলেন আজকের যিনি বিরোধী দলনেতা তার নেতৃত্বে। শুভেন্দু অধিকারীকেও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তিনি সেই সময় বলেছিলেন আইন মেনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা যা করার করছি। তাহলে আজকে যখন শাসক তৃণমূল দল আইন মেনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মানুষের জনাদেশকে প্রত্যাখ্যান করে বাইরন বিশ্বাসকে দলে নিচ্ছে তখন প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকে না অন্তত শুভেন্দু অধিকারীর।

বাইরনের যে মেরুদন্ড থাকার দরকার ছিল সেই মেরুদন্ড তার যে ছিল না প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু একটা সময় পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকীকে নিয়েও শাসক দলের অনেক নেতাকে বলতে শোনা গিয়েছিল কদিন বাইরে থাকবে সবাইকে আমাদের দলে আসতে হবে। সিদ্দিকুল্লাহ এসেছে ওতো অনেক দূরের পাবলিক। সিদ্দিকুল্লাহকে সামনে রেখে এ বাংলার সাধারণ মানুষও মনে করেছিলেন পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী হয়তো একা লড়তে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্বের লোভে ক্ষমতার লোভে তৃণমূলের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু তা হলো না। বিগত দুবছরের ইতিহাস বলছে নওশাদ সিদ্দিকী বারবার শাসকের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে কোন সময় মাথা নোয়ান্নি। বিগত দুবছরের ইতিহাস বলছে তিনি ৪২ দিন জেলে থাকার পরেও তবুও কোথাও শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ছাড়েননি। পীরজাদা হয়ে ফুরফুরা শরীফের সন্তান হয়েও সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করেন এবং সাধারন মানুষের মধ্যেই নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। আমি তোমাদের লোক কবির এই অমোঘ বাণীকে নওশাদ সত্যি করে তুলেছেন।

 

আমরা একটা সময় ব্যক্তিগতভাবে আমি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে সৈয়দ বদরুদ্দোজা সঙ্গে তুলনা করেছিলাম বলতাম বদরুদ্দোজার যে সাহস যে আদর্শ ছিল তা চৌধুরী সাহেবের মধ্যে বিদ্যমান। কিন্তু সেই মূল্যায়ন কতটা সঠিক ছিল তা বাংলার মানুষ খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন বা পারছেন আমরা ভুল ছিলাম ভুল মূল্যায়ন করেছিলাম। চৌধুরী সাহেবের মত মানুষ আমাদের মত অর্বাচীন সাংবাদিকদের ফোন পর্যন্ত ধরেন না। যেহেতু তিনি ক্যাবিনেট মিনিস্টার অনেক বড় মন্ত্রী। কিন্তু নওশাদ সিদ্দিকীকে সৈয়দ বদরুদ্দোজার সঙ্গে এখনই তুলনা করা যাবে না তবে এ কথা বলতে কোথাও দ্বিধা নেই এখনো পর্যন্ত নওশাদের মধ্যে যে মূল্যবোধের রাজনীতি দেখেছি সেই রাজনীতি ইদানিংকালে সব কটা রাজনৈতিক দলে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বাদ দিলে আর দেখতে পায়নি। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই ২১ শতকের দ্বিতীয় আর্ধে এই বাংলা যে তরুণ রাজনীতিবিদকে আবিষ্কার করেছে সেই রাজনীতিবিদ যদি তাঁর আদর্শ তাঁর সততাকে সম্বল করে এবং প্রতিবাদী অবস্থানকে অটুট রেখে এগিয়ে যান। আগামী দিনে এই বাংলার চালিকা শক্তি যে তিনি হবেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। বাংলার আয়ারাম গয়ারাম রাজনীতির যুগে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসাবে বিরাজ করছেন পীরজাদা সৈয়দ নওশাদ সিদ্দিকী।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ