কলকাতা 

পশ্চিমবাংলার সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত মাদ্রাসার শিক্ষকরা খাদেমুল হুজ্জাজ থেকে বঞ্চিত কেন ? দায় কার ?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

বুলবুল চৌধুরী: পশ্চিমবাংলার সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসা এবং বিদ্যালয়গুলির সঙ্গে কোন তফাৎ নেই। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠক্রমের কিছুটা তফাৎ থাকলেও নবম দশম শ্রেণীতে গিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সিলেবাসকেই অনুসরণ করা হয়। পশ্চিমবাংলার মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়োগ করে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন যদিও ২০০৮ সালের আগে পর্যন্ত এই নিয়োগ করত রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন। বামফ্রন্ট সরকারের শেষের দিকে তৎকালীন সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী ড. আবদুস সাত্তারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন গঠিত হয় এবং মাদ্রাসাগুলি সংখ্যালঘু স্টাটাস প্রাপ্ত হয় ও একই সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা ডাইরেক্টর তৈরি হয়।

আব্দুস সাত্তারের এই মহৎ উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য প্রশংসনীয়। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষাকে সেভাবে মূল স্রোতের শিক্ষার সঙ্গে দেখা হয় না। যদিও অনেকেই দাবি করবেন মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষায় যারা মেধা তালিকায় স্থান পান তাদেরকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সংবর্ধনা দিয়ে থাকেন। প্রশ্ন উঠেছে সংবর্ধনা দেওয়া আর মাদ্রাসা শিক্ষক এবং মাদ্রাসা শিক্ষাকে যথাযোগ্য মর্যাদা সম্পন্ন করে তোলা দুটোর মধ্যে অনেকটাই তফাৎ রয়েছে। দুঃখের হলেও সত্য মুখ্যমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন পরিচালিত মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর এখন খানিকটা অবহেলার শিকার বলে মনে হয়েছে। ডঃ আব্দুস সাত্তার এর আমলে যে শিক্ষা ব্যবস্থাকে মূল স্রোতের শিক্ষা ব্যবস্থা বলে সমস্ত দেশে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছিল তা এখন করা হচ্ছে না।

Advertisement

যার পরিণতিতে এ বছর মাদ্রাসা শিক্ষকদের খাদেমূল হুজ্জাজ থেকে বাদ পড়তে হল। যদিও বেশ কয়েকজন স্কুল শিক্ষক খাদেমুল হুজ্জাজ হিসাবে মদিনা ও মক্কায় যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন। কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষকদের সেই অনুমতি জুটলো না। প্রশ্ন উঠেছে এর দায় কার? শুধুই কি বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় হজ কমিটির? কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাকে বন্ধ করতে হবে।

রাজ্য হজ্জ কমিটি কি তার দায় এড়াতে পারেন? সৌদিতে পৌঁছে বাংলার হাজীরা, যেভাবে হেনস্থা এবং অবহেলার শিকার হচ্ছেন সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগকে নিয়েছেন রাজ্য হজ কমিটির তথাকথিত কর্মকর্তারা! তারা যদি নিজেরা কোন উদ্যোগ নিতে না পারেন তাহলে কেনই বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন না রাজ্য হজ কমিটির চেয়ারম্যান সাহেব বা রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব! শুধুমাত্র কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে ভিসা দিচ্ছে না বলে একটা অব্যবস্থার শিকার হতে হচ্ছে এই বাংলার হাজীদের কেন! মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকেও নজর রাখতে হবে এই রাজ্যের কিছু আমলা তার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি তাঁর ভাবমূর্তিকে বাংলার তথা বাঙালি মুসলমানদের কাছে কলুষিত করার জন্য চেষ্টা করে চলেছেন। রাজ্য হজ কমিটির বর্তমান যে দায়িত্ব পালন করছেন তাতে এটা স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে।

কেন্দ্রীয় হজ কমিটির কেন এ রাজ্যের মাদ্রাসার শিক্ষকদের খাদেমুল হুজ্জাজ থেকে বাদ দিল তার ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত ছিল রাজ্য হজ কমিটির। যদিও বলা হচ্ছে যেহেতু মাদ্রাসার শিক্ষকরা সরাসরি সরকারি কর্মচারী নয় তাই তাদেরকে খাদেমুল হুজ্জাজ হিসাবে পাঠানো সম্ভব নয়। এই অজুহাতের বিরুদ্ধে রাজ্য হজ কমিটিকে একথা স্পষ্ট করে কেন্দ্রীয় হজ কমিটিকে বলতে পারত না, যে এই রাজ্যের মাদ্রাসার শিক্ষকরা সমানভাবে সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা পেয়ে থাকেন এবং সরকারের সমস্ত কাজ কর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিকে সামনে রেখে ক্ষমতায় থাকার যে প্রবণতা তৃণমূল নেতা সাংসদদের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতেই এই সরকারের ভাবমূর্তি অনেকটাই জন মানষে ক্ষুন্ন হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত মাদ্রাসার শিক্ষকদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়ার জন্য অবিলম্বে কেন্দ্রীয় হজ কমিটির কাছে আবেদন করা এবং তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া যে এই রাজ্যের স্কুল শিক্ষকদের সঙ্গে মাদ্রাসার শিক্ষকদের কোন তফাৎ নেই।

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ