কলকাতা 

ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণবন্ত কুইজ-বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রাজা রামমোহন রায়ের ২৫২-তম জন্মদিন পালন

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

নায়ীমুল হকের প্রতিবেদন : যুগ প্রবর্তক ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়ের ২৫২-তম জন্মদিন উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্তে পালিত হয়ে গেল নানা ধরনের অনুষ্ঠান। কলকাতার রামমোহন লাইব্রেরি এন্ড ফ্রি রিডিং রুমের উদ্যোগে এবছর আয়োজন করা হয়েছিল তিন দিন ধরে নানা স্বাদের অনুষ্ঠান। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠান তো ছিলই, তার সঙ্গে ছিল স্মারক বক্তৃতা এবং আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শনিবার ২০ মে সমগ্র অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ হয়। প্রারম্ভিক ভাষণ দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রামমোহন বিশেষজ্ঞ ড.শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়। রামমোহনের জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিক যা বিশেষ করে আজকের সমাজে ভীষণ প্রাসঙ্গিক তা তিনি সকলের সামনে তুলে ধরেন।

Advertisement

প্রতিযোগিতা পর্ব দিয়ে ছিল এদিনের শুরু। রাজা রামমোহন ও বাংলার নবজাগরণ বিষয়ে কুইজের জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছিল বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। অংশ নিয়েছিল বিভিন্ন জেলার ১৭ টি বিদ্যালয়। এদিনের কুইজ অনুষ্ঠানে অন্যতম মুখ্য আকর্ষণ ছিল রাজ্যের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র সচিব প্রসাদ রঞ্জন রায়ের উপস্থিতি এবং তাঁর পরিচালনায় ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কিছুক্ষণের জন্য মজার কুইজের আসর। তাঁর উৎসাহ ভরা কুইজ পরিচালনা সকলে খুবই উপভোগ করেন। কুইজ প্রতিযোগিতার সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি তিনি উপস্থিত থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহ জোগান এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নে ছাত্র-ছাত্রীদের সাবলীল জবাবে তিনি অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন। এদিন কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানটি দখল করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম ইনস্টিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীরা আর যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান দখল করে জয়নগরের শ্রীকৃষ্ণনগর হাই স্কুল এবং হাওড়ার বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন। কুইজ অনুষ্ঠানটি দক্ষ হাতে পরিচালনা করেন বিশিষ্ট শিক্ষক ও সাংবাদিকরা।

প্রথম দিনের দ্বিতীয় অর্ধের অনুষ্ঠান ছিল স্মারক বক্তৃতা এবং দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ সমূহ ও দুর্লভ গ্রামোফোন রেকর্ড বিভাগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। উদ্বোধন করেন মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। স্মারক বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আজ সতীদাহ নেই বটে, কিন্তু নারীদের অধিকার অনেক ক্ষেত্রেই সুরক্ষিত নয়। আর্টিকেল ১৫ এবং বিভিন্ন ধারা উপধারা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, শুধু বিচার ব্যবস্থা থাকলেই হবে না, তা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর আজ এটা বড়ই চ্যালেঞ্জের।

দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আরেক আকর্ষণীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার। এখানেও অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন জেলার বিদ্যালয় থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা। বিতর্ক সভা শুরুর মুখে বিশিষ্ট চিকিৎসক শংকর নাথের সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্য সমৃদ্ধ বক্তৃতায় উঠে আসে রামমোহনের বিজ্ঞান মুখীতার নানান সন্ধান। এরপর শুরু হয় বিতর্কসভার পক্ষে-বিপক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এদিন বিতর্কের বিষয় ছিল, স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বাংলার নবজাগরণের পুরোধা ব্যক্তিত্বরা বিস্মৃত হয়েছেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. সন্দীপন সেন পরিচালনা করেন এদিনের বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি।প্রতিযোগিতায় পক্ষের বিজয়ীরা হল প্রথম – পাঠভবনের প্রতীক ব্যানার্জি,

দ্বিতীয় – রামমোহন মিশনের সিঞ্চন মিত্র, তৃতীয় – টাকি হাউসের সোনালিসা দে আর বিপক্ষের বিজয়ীরা হল প্রথম – কমলা গার্লস স্কুলের অনুসৃতা সাহা, দ্বিতীয় – গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলের বিদিশা শেঠ এবং

তৃতীয় – পাঠভবনের সৌপর্ণ মন্ডল।

তিন দিন অনুষ্ঠানের তৃতীয় তথা শেষ দিনে ছিল গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা এবং আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশন। রামমোহন ও বেদান্ত বিষয়ে বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা করেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপিকা সবুজ কলি সেন দ্বিতীয় বক্তব্যটি রাখেন কলকাতা হাইকোর্টের ভূতপূর্ব প্রধান বিচারপতি দেবাশীষ কর গুপ্ত। তিনি রাজা রামমোহন রায়ের জীবনাদর্শ নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে অত্যন্ত আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনের মাধ্যমে পরিচালনায় ছিলেন রাজা রামমোহন রায় রিমেম্বারেন্স সোসাইটি ব্রহ্মসংগীতানুষ্ঠান সহ সাংস্কৃতিক এই অধিবেশন সকলের নিকট খুবই উপভোগ্য হয়। রামমোহন লাইব্রেরি এন্ড ফ্রি রিডিং রুমের সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক সুবীর গাঙ্গুলী সকলকে কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি বাঙালি মনন সৃষ্টিতে একযোগে সকলকে প্রয়াসী হওয়ার আন্তরিক আহ্বান জানান। তিন দিনের অনুষ্ঠান অতি দক্ষতার সঙ্গে সঞ্চালনা করেন লাইব্রেরি সম্পাদক সঞ্জিত মিত্র এবং তাঁর সঙ্গী সাথীরা।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ